ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক, ভিন্নমত নিয়ে পুনর্বিবেচনার কথা বলল জামায়াত
Published: 18th, May 2025 GMT
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা করছে কমিশন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে এই বৈঠক শুরু হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভিন্ন মত নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার বিষয়টি তুলে ধরেন। আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের পুনর্বিবেচনার ভিত্তিতে অনেকগুলো জায়গায় মত পরিবর্তন করে ঐকমত্য পোষণের কথা জানান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে আমাদের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা। আশা করছি, আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ হবে। প্রথম দিনের আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। অনেক বিষয়ে ভিন্ন মত থেকে গেছে। জামায়াতে ইসলামী কিছু বিষয়ে তাঁদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পুনর্বিবেচনার কথা বলেছিল। আমরা আশা করছি আজকে আলোচনার পরও দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অনেক বিষয় থাকবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘সব বিষয় আজকেই আমরা মীমাংসা করে ফেলতে পারব তা নয়। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যত দ্রুত সম্ভব একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনাগুলো আগামী দু–এক দিনের মধ্যে শেষ করতে পারলে শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাটা শুরু করব।’
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘গত বৈঠকে কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করেছি। কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য পেন্ডিং রেখেছিলাম। যেসব পয়েন্ট পেন্ডিং ছিল, সেগুলো নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করেছি। যার ভিত্তিতে আমরা অনেকগুলো জায়গায় মত পরিবর্তন করে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করছি।’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ইস্যুগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়েই শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে কমিশনের প্রথম আলোচনা হয়। তবে ওই দিন সব সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি। যার কারণে আজ দ্বিতীয় দফায় প্রথম ধাপের আলোচনা হচ্ছে।
২৬ এপ্রিল প্রথম ধাপের আলোচনায় মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে তারা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন—উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দলটি। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জামায়াতে ইসলামী।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ক পর য য প রস ত ব ইসল ম র প রথম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে বাধা কোথায়
আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে বাধা কোথায়– অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে এমন প্রশ্ন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেছেন, বিএনপি পরিপূর্ণ সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একবারে শেষ করার বিষয় নয়। এটি অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে হবে। সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে বাধা কোথায়? কারও গোছানোর সময় দরকার, কারও বন্ধু জোগাড়ের জন্য সময় দরকার, সে জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার, এটা বিলম্বিত হবে– এটা হতে পারে না।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির আলোচনা সভায় এ কথা বলেন নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মতীনের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, একটি দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে। তা মোকাবিলা ও সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি বোঝে। কিন্তু তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষ ফ্যাসিবাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আগে থেকেই এক দফার দাবি জানিয়ে আসছিল। এই গণঅভ্যুত্থান বিএনপির দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলাফল।
সংস্কার একবারে শেষ হওয়ার নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কার কি একবারে শেষ করার বিষয়? পরিবর্তনের দুটি পথ– একটি বিপ্লব, আরেকটি সংস্কার। আপনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলে খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। আর সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়, সবার সম্মতিতে হয়। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে মহানগর সভাপতি এস এম ইউসুফ আলীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।