ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় বৈঠক চলছে
Published: 18th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বৈঠক শুরু হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের এলইডি হলে বৈঠকটি শুরু হয়েছে।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেবেন নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। পরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবে জামায়াতের প্রতিনিধি দলটি।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে ওই দিন সব সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি।
২৬ এপ্রিল মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে তারা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন-উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দলটি। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন-এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জামায়াতে ইসলামী।
এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছিল। নির্বাচনপদ্ধতি, এনসিসি গঠন ও এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন-এই তিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানে ভিন্নতা দেখা গেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার পর ২০ মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে।
সংস্কার প্রশ্নে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষের দিকে। শিগগিরই দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম প রস ত ব ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৫৪ জন, যার মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ২৬৯ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৮৫ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, যার মধ্যে শিশু-কিশোরী ৬২ জন। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮১৯ নারী ও ৭৩৬ শিশু ও কিশোরী।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে।
বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জানান, কেবল জুনে ১১৬ নারী ও ৮৭ জন কন্যাসহ ২০৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৬৫ জনের মধ্যে কন্যাশিশু ৪৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮ জন, এদের মধ্যে ৫ জন কন্যা। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, যার মধ্যে ২ জন কন্যা। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ কন্যাশিশু।
উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৫ জন নারী ও কন্যা; যার মধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ১৩ জন কন্যাসহ ৬৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন কন্যাসহ ১১ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৩ নারী, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন ১ জন নারী। ৩ জন নারী অগ্নিদগ্ধ (যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে), যৌতুক নির্যাতনের শিকার ১ নারী এবং পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৬ কন্যাসহ ২২ জন। অপহরণ হয়েছে ২ কন্যা, সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১ জন এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি।
সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ কিশোরী। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৭ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার ৫১ জন। ৩১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২১ নারী ও কন্যাশিশু পাচার হয়েছেন। একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার। ৬১ কন্যাসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৩২০ নারী ও কন্যাশিশু।
সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সমকালকে বলেন, এ পরিসংখ্যান শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিশেষ করে কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা ও দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এটি সমাজের জন্য অ্যালার্মিং।
তিনি বলেন, ছয় মাসে হাজারের বেশি নারী-কন্যা নির্যাতনের শিকার হলেও মহিলা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আছিয়া ধর্ষণ মামলায় তড়িঘড়ি করে বিচার হয়েছে, কিন্তু ভালো তদন্ত না হওয়ায় পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এ ধরনের বিচারে দ্রুততা নয়, নির্ভুলতা জরুরি। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।