জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বৈঠক শুরু হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের এলইডি হলে বৈঠকটি শুরু হয়েছে।

বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেবেন নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। পরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবে জামায়াতের প্রতিনিধি দলটি।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে ওই দিন সব সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি।

২৬ এপ্রিল মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে তারা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন-উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দলটি। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন-এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জামায়াতে ইসলামী।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছিল। নির্বাচনপদ্ধতি, এনসিসি গঠন ও এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন-এই তিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানে ভিন্নতা দেখা গেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার পর ২০ মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে।

সংস্কার প্রশ্নে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষের দিকে। শিগগিরই দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম প রস ত ব ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম

ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি ভারত কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুগত করছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য ড. ইউনূস যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে তার বৈধতা হবে না। ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”

সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার।”

তিনি বলেন, “সর্বগ্রাসী সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র ডানপন্থা রুখতে হবে। বিকল্প বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গড়তে হবে।”

সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাবেক সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, এসএ রশীদ, মো. আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং ডা. দিবালোক সিংহ।

সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অসুস্থ থাকায় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।

সমাবেশে বন্ধুপ্রতীম রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। 

প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর সাহেব শাহ সূফী হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণলাল।

সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক ও জলি তালুকদার।

সমাবেশ সভাপতির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।

নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এছাড়াও তিনি লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর, দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ২৯ নভেম্বর, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলসমূহের উদ্যোগে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ, গাউসিয়া মার্কেট থেকে বামে ঘুরে আবারও বাটা সিগন্যাল, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
  • কপে মতবিরোধ তীব্র, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা
  • প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
  • ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অনেক বিষয়ে ‘অস্পষ্টতা’ খেয়াল করেছি