কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রথম ধাপের ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপের ভর্তির প্রক্রিয়া শেষে দেখা গেছে, তিনটি ইউনিটে মোট ৩৯১টি আসন ফাঁকা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৬৩৯ শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ ইউনিটে (বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ) ৩৫০টি আসনের বিপরীতে প্রথম ধাপে ভর্তি হয়েছেন ১৯৯ শিক্ষার্থী। এই ইউনিটে ফাঁকা আসনের সংখ্যা ১৫১। এর মধ্যে ফার্মেসি বিভাগে খালি আছে ২৯টি, রসায়নে ২১, গণিতে ১১, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, পরিসংখ্যানে ২০, সিএসইতে ২৪ ও আইসিটিতে ২৬টি আসন।

বি ইউনিটে (কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদ) ৪৪০টি আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছেন ২৯৭ শিক্ষার্থী। এখানে ফাঁকা আসনের সংখ্যা ১৪৩। এর মধ্যে আইন বিভাগে ১৩টি, ইংরেজিতে ২০, অর্থনীতিতে ১৫, লোকপ্রশাসনে ২১, বাংলায় ২৪, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ১৩, নৃবিজ্ঞানে ২৩ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ১৪টি আসন ফাঁকা রয়েছে।

এ ছাড়া সি ইউনিটে (ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) ২৪০টি আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ শিক্ষার্থী। এখানে ফাঁকা আসনের সংখ্যা ৯৭। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে ১৬টি, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসে ২৬, মার্কেটিংয়ে ৩০ ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ২৫টি আসন ফাঁকা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৮ মে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এ, বি ও সি ইউনিটের বিভাগসহ প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়। পরে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ১২ থেকে ১৫ মের মধ্যে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট অনুষদ থেকে অফিস চলাকালে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা) সশরীর উপস্থিত হয়ে ভর্তির ফরম সংগ্রহ করে বিভাগের মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, এ ইউনিটে ১৯৯ জন, বি ইউনিটে ২৯৭ ও সি ইউনিটে ১৪৩ জন ভর্তি হয়েছেন। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশিত হবে। আর নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে আগামী ১ জুলাই।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে পাঠদানের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫

গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হয়ে চার বছর পর এবার নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১৯ এপ্রিল এ ও সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২২ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ ও সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সবশেষ ২৫ এপ্রিল বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএর ওপর ৩০ নম্বর কমিয়ে ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা ১০০ নম্বরের এবং বাকি ২০ নম্বর থাকবে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৩০টি আসনের বিপরীতে এবার এ, বি ও সি—এ তিনটি ইউনিটে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৬৬ হাজার ৪০২টি। সে হিসাবে এবার প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৪।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি বিষয়ে ডিপ্লোমা, ভর্তির শেষ সময় ২৪ মে১৭ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসন র ব পর ত প রথম ধ প প রক শ ত ভর ত র হয় ছ ন পর ক ষ আসন ফ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতির আলাপে ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষের কথা নেই

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের বড় ভূমিকা রয়েছে। অথচ এখন তারা অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। রাজনীতির আলাপে ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষের কথা নেই। ভূমিহীন কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের উদ্যোগ কম। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন আয়োজিত ‘ভূমিহীন কৃষক সমাবেশে’ বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, দেশের মেহনতি মানুষের টাকায় সরকার চলে। কিন্তু ভূমিহীন, প্রান্তিক মানুষের কথা সরকার আলাপ করে না।

সমাবেশে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ যে কৃষকের দেশ, এ কথা অন্য সরকারের মতো বেমালুম চেপে গিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে রাজনীতির আলাপ থেকে বের করে দিয়েছে। এই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে কৃষক–শ্রমিকদের পক্ষে আইনকানুন করতে হবে। অবিলম্বে কৃষি সংস্কার কমিশন করার আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভূমি অফিসে, কৃষি অফিসে আগে সরকারি দলের কারও সুপারিশ ছাড়া, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হতো না। সবাই পরিবর্তন আশা করেছিল। সুপারিশ ছাড়া ন্যায্য দাবি পূরণ হবে। কিন্তু নতুন সুপারিশওয়ালা তৈরি হয়েছে, নতুন লেনদেনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যেটা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যায় না।

ভূমি সংস্কার ছাড়া কোনো সত্যিকার পরিবর্তন হয় না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেক কমিশন হয়েছে, আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমিশন হয়নি। ভূমি কমিশন, শিক্ষা কমিশন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর তো (পরিচালনার দায়িত্ব) যে কেউ দিতে পারে, ওইটা জরুরি না। জরুরি হলো ভূমিহীনদের অধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, এটা সবাই করতে পারে না।

সমাবেশে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, যারা বঞ্চিত, যারা শোষিত শ্রেণি, তারা এক কাতারে দাঁড়ালে ওই কোটিপতি শ্রেণিরা আরাম–আয়েশের জীবন কাটাতে পারবে না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমি ১৮ কোটি মানুষকে খাওয়াই’ এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে দেশের মানুষকে শোষণ করার, অন্ধকারে রাখার রাজনীতি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, একদিকে টাকাওয়ালা ভূমিদস্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কৃষক জমি হারাচ্ছে, দখলদারেরা দখল করছে। তিনি বলেন, যখন ফ্যাসিস্টকে সরানোর দরকার হয়, স্বৈরশাসন থেকে বাঁচার দরকার হয়, লাঠি, গুলি, কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচার দরকার হয়, তখন এই কৃষক–শ্রমিকেরাই রাজপথে নেমে আসেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিন, গণমুক্তি মঞ্চের আহ্বায়ক সাকিব প্রত্যয়, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি লিটন কবিরাজ, সঞ্চালক ছিলেন একই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামিউল আলম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ