চকরিয়ায় বালুর ইজারা নিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়
Published: 18th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের চকরিয়ার খুঁটাখালী খাল থেকে বালু তুলতে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইজারা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যন্ত্র দিয়ে বালু তোলার পাশাপাশি খাল তীরের সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ইজারার শর্ত ভেঙে পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম চালালেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, খুঁটাখালী বাজার থেকে পূর্বদিকে তিন কিলোমিটার ঢুকে হরইখোলা কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে দুই স্থানে খাল থেকে বালু তুলে তীরে জমা করা হচ্ছে। ২০ ফুট প্রস্থের এ খালে পর্যাপ্ত বালু নেই। এ কারণে খালের তীরে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা নিয়ে খুঁটাখালী খালটি ইজারা নিয়েছেন হামিদুল হক নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এ বালু আমরা তুলছি না; পাহাড়ও আমরা কাটছি না। কে করছে, তাও জানি না।’
জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের ৫ উপজেলায় ২৭টি বালুমহাল সম্প্রতি ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯টি মহাল বনের মধ্যে এবং পাশে উল্লেখ করে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বন বিভাগ। বন বিভাগের এসব আপত্তি আমলে না নিয়ে ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসন। আপত্তি জানানো বালুমহালের মধ্যে রয়েছে– খুঁটাখালী-১, ধলীরছড়া, পানিরছড়া, বালুখালী-১, দোছড়ি, পালংখালী, হিজলিয়া, ধোয়াংগারচর ও কুমারিয়ারছড়া।
জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ইজারা দেওয়া ৯টি মহাল বনের ভেতর ও পাশে হওয়ায় বনভূমির মাটি, বালু, বন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য তথা সামগ্রিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো.
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়ার পর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত তদারক করে থাকে। এর পরও কেউ ইজারার শর্ত ভাঙলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, পর্যাপ্ত বালু না থাকার পরও মহালের নাম দিয়ে ইজারা নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য বনের পাহাড় কাটা। তাই বনের ভেতর ও পাশের মহাল ইজারা দেওয়ার আগে বালু আছে কিনা, যাচাই করতে হবে। তা না হলে বন ধ্বংস হয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হবে।
এর আগে ২০২২ সালে চকরিয়ার পাঁচটি বালুমহালের ইজারা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কৃষিজমি, জলাধার ও টিলা কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত