বিতর্কিত নিয়োগ ও পদোন্নতি বাতিল করুন
Published: 7th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নিয়োগ কেলেঙ্কারি প্রমাণ করে, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়াদকালে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, এমন অনেককেই নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন বড় পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সাবেক মেয়রের শেষ দুই বছরে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ১৮৮ জনের মধ্যে অন্তত ৬৪ জনকে একলাফে উচ্চ গ্রেডে পদায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে আরও থাকতে পারেন, তাঁদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হোক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনবলকাঠামো অনুযায়ী, শ্রমিক পদ ২০তম গ্রেডের। এই শ্রমিকদের মধ্য থেকেই উপসহকারী প্রকৌশলী, কর আদায়কারী, সড়ক তদারককারী, অনুমতিপত্র পরিদর্শক এবং হিসাব সহকারীর মতো উচ্চ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যেসব পদ ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডের মধ্যে। অথচ এসব পদে পদোন্নতির জন্য ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, যা এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি।
এ নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি, এমনকি লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। বলতেই হয়, এ নিয়োগ ভয়াবহ অনিয়মের চূড়ান্ত উদাহরণ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তৎকালীন মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের সুপারিশেই এসব নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। ফলে নিজেদের ঘনিষ্ঠ লোকদের নিয়োগ দিতে ও বড় পদে বসাতে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। এটি প্রমাণ করে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে না দেখে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নথি অনুযায়ী, তাদের অনুমোদিত পদসংখ্যা ৪ হাজার ২২৬ হলেও, বর্তমানে কর্মরত আছেন ৯ হাজার ২৮৯ জন, যা অনুমোদনের তুলনায় ৫ হাজার ৬৩ জন বেশি। এ অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কারণ এবং তাঁদের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের আড়ালে মূলত বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে পরে তাঁদের উচ্চ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এসব অতিরিক্ত জনবল ও শ্রমিক থেকে উচ্চ পদে যাওয়া ব্যক্তিদের বেতন–ভাতা জোগাতে জনগণের বিপুল অর্থ অপচয় হচ্ছে। এটি বন্ধ করতেই হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে বিতর্কিত সব নিয়োগ বাতিল করা হবে। অতীতের নিয়োগ–বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও এমন অনিয়মের সুযোগ থেকে যাবে। ফলে এ অনিয়মের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। বর্তমান মেয়র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটিই আমরা দেখতে চাই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এআই এজেন্ট ব্যবহারে গোপন তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি বাড়িয়েছে, তেমনি অজান্তেই তৈরি করছে নতুন এক নিরাপত্তার ঝুঁকি। আর তাই এআই এজেন্ট ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত এআই এজেন্ট অনেক সময় অসাবধানতাবশত ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য প্রকাশ করে ফেলছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই এজেন্টগুলো শেয়ারপয়েন্ট, গুগল ড্রাইভ, অ্যামাজন এসথ্রি বা নিজস্ব তথ্যভান্ডারের সঙ্গে যুক্ত করা হলে অনেক সময় ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করে ফেলছে। এমনকি গুগল ড্রাইভসহ বিভিন্ন উৎস কাজে লাগিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় ব্যবহারকারীর সংবেদনশীল তথ্য ভুল ব্যক্তিদের কাছেও পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনপ্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করছে ‘এআই এজেন্ট’০৮ জানুয়ারি ২০২৫অধিকাংশ সময় এসব তথ্য ফাঁস ঘটে ভুল কনফিগারেশন, অপ্রয়োজনীয় অনুমতি বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের (এলএলএম) আউটপুটের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে। এআই এজেন্ট যদি অভ্যন্তরীণ বেতনকাঠামো, অনানুষ্ঠানিক পণ্যের নকশা কিংবা বাজারে না আসা নীতিমালা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করে ফেলে, তবে এর প্রভাব হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ও ক্ষতিকর।
প্রসঙ্গত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চ্যাটবটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দ্রুত জানা যায়। তবে একই চ্যাটবট কাজে লাগিয়ে চাইলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য জানা সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব এআই এজেন্ট তৈরির সুযোগ দিয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব এআই এজেন্টের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রেতা বা গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো যায়।
সূত্র: দ্য হ্যাকার নিউজ