বেকহাম: ঘৃণা থেকে ভালোবাসা এবং এক কিংবদন্তির বর্ণিল পথচলা
Published: 7th, July 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের অফিশিয়াল টিভি দর্শক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বার্ব–এর হিসাবে ৪ অক্টোবর মুক্তির পর ওই সপ্তাহ শেষ হয় ৮ অক্টোবর—এ সময়ের মধ্যে ভিউসংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ। নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও টপ রেটেড শো হয়েছিল সেটা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই। বেশি দিন আগের কথা নয়—২০২৩, ডেভিড বেকহামের বয়স তখন কতই–বা ৪৮।
বেকহামের আবেদন আসলে তখন যেমন ছিল, এখনো তাই। বেকহাম নামে তথ্যচিত্র মুক্তি পাবে এবং সেখানে তাঁর উঠে আসার গল্প থাকবে, এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবে না, তা হয় না।
আরও পড়ুনআশ্চর্য সেই জয়ের গল্প ‘গেম অব দেয়ার লাইভস’ ৩০ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক ফিশার স্টিভেনস সেই আগ্রহ ভালোভাবেই মিটিয়েছেন। চার পর্বের এই তথ্যচিত্রে দক্ষিণ লন্ডনের শ্রমিক শ্রেণি (বেকহামের মা ছিলেন হেয়ারড্রেসার, বাবা কিচেন ফিটার) থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা, ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং তাঁর মাঠের বাইরের জীবন; ইংলিশ পপ কালচারে ফ্যাশন, খেলা ও গানকে এক মোহনায় মিলিয়ে সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটিদের একজন হয়ে ওঠা, এসবই আছে।
আরও আছে দুঃখ, বঞ্চিত হওয়ার যাতনা, গোটা ইংল্যান্ডে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হয়ে দিন কাটাতে কেমন লাগে, তা মর্মে মর্মে টের পাওয়া আর আছেন সবকিছুর পরও সব সময় পাশে থাকা ভিক্টোরিয়া বেকহাম। তাঁদের প্রেম, বিয়ে, সংসার এই তথ্যচিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভিক্টোরিয়ার জন্য পাগল ছিলেন বেকহাম, যেটা তাঁর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন মোড়ে বড় ভূমিকাও রেখেছে। যেমন ধরুন, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগের দিন বেকহাম জেনেছিলেন ভিক্টোরিয়া অন্তঃসত্ত্বা। খবরটা তখন জানানো ঠিক ছিল কি না, এই প্রশ্নে ‘স্পাইস গার্লস’ কন্যাকে দ্বিধায় ভুগতে দেখা গেছে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন কথা বলেছেন বেকহামকে নিয়ে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাহেব আলীতে শুরু, বাটলারে স্বপ্নপূরণ
২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু বাংলাদেশ নারী দলের। প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলে হার। তবে সেই হতাশা বেশি দিন থাকেনি। পরের ম্যাচে ৩১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসে প্রথম জয়।
সেই শুরু থেকে আজ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দল খেলেছে ফিফা–স্বীকৃত টায়ার-১ শ্রেণির ৬৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে জয় ২৭টি, হার ৩১টি, ড্র ১১টি। ১৫ বছরের এই পথচলায় সবচেয়ে উজ্জ্বল অর্জন—প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া।
কোচ সাহেব আলী বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। ১৯৭৭ সালের ১০ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২২ জন ছাত্রীকে নিয়ে ঢাকায় প্রথম মেয়েদের ফুটবলের অনুশীলন শুরু করেছিলেন তিনিই। তখন সাহেব আলী বলেছিলেন, এই মেয়েদের মধ্যেই ভবিষ্যতের ফুটবলার আছে। ৭-৮ জন অনেক দূর যেতে পারে। কিন্তু অর্থাভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ নীরবতা।
২০০৩ সালে ফিফা ও এএফসির চাপ না থাকলে হয়তো সেই নীরবতা আজও থাকত। বাধ্য হয়েই বাফুফে আবার চালু করে নারী ফুটবল। মাঠে এসে তখন ম্যাচ পণ্ড করে দেয় একশ্রেণির মানুষ। বাফুফে পিছিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল চালু না রাখলে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ফিফা। সেই হুমকিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনপাহাড়ি কন্যা ঋতুপর্ণা, যাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশ০২ জুলাই ২০২৫২০০৭ সালে ‘ভিশন এশিয়া’ প্রকল্পের অধীনে প্রথম মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাফুফে। ২০০৯ সালে শুরু হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর গোলাম রব্বানীকে নারী দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর হাত ধরেই শুরু নতুন যাত্রা। যদিও বাফুফে ভবনে দীর্ঘমেয়াদি আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভঙ্গুর কাঠামোর মধ্যে শুধু ক্যাম্প করে আর কত দূর যাওয়া যাবে? মেয়েদের অদম্য ইচ্ছার জোরে কত দূর যাওয়া যায়, তা তো আজ প্রমাণিতই।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময়টায় দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে সাফের বাইরে প্রথম কোনো দল হিসেবে উজবেকিস্তানের সঙ্গে খেলার সুযোগ আসে। অলিম্পিক বাছাইয়ের সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
গোলের পর আনন্দে কেঁদেই ফেললেন ঋতুপর্ণা চাকমা। উচ্ছ্বসিত মারিয়া মান্দা