চাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা
Published: 7th, July 2025 GMT
অ্যামাজনের এক্সিকিউটিভ থেকে বিনিয়োগকারী হওয়া ড্যান রোজ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন, ‘১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি যখন অ্যামাজনে কাজ করতাম, তখন জেফ বেজোসের প্রিয় ইন্টারভিউ প্রশ্ন ছিল “আপনি কি ভাগ্যবান?”’
হয়তো ভাবতে পারেন, বিশ্বের অন্যতম ধনী মানুষটা কি তাহলে ভাগ্যেও বিশ্বাসী? নাকি তিনি আশা করতেন নতুন কর্মীদের সৌভাগ্য তাঁর কোম্পানিতেও জাদুর মতো কাজ করবে? সম্ভবত তা নয়।
বেজোস–বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশ্নটি ছিল কয়েকটা গুণ পরখ করার দারুণ এক উপায়। এর মধ্যে আছে নম্রতা, উদ্যোগ এবং আশাবাদ। চলুন, বিষয়গুলো বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করা যাক।
বেজোস তাঁর কর্মীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন। তাঁদের কাছে অতীতের ভুলগুলো জানতে চাইতেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, যাঁরা ভুল স্বীকার করেন এবং সেখান থেকে শেখেন, তাঁরাই সত্যিকারের বুদ্ধিমান। ‘আপনি কি ভাগ্যবান?’—এই প্রশ্নের মাধ্যমে বেজোস চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন।
অ্যামাজনের একজন বিনিয়োগকারী প্যাট্রিক মায়ারের মতে, ‘ভাগ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা নম্রতা মাপার দুর্দান্ত উপায়।’
বেজোসের প্রশ্নটি নিয়ে প্যাট্রিক এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ যদি স্বীকার করেন যে তিনি ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছেন, তবে এটা তাঁর বিনয়ের লক্ষণ।’
এর মানে হলো আপনি বোঝেন যে আপনার সাফল্য শুধু বুদ্ধি আর পরিশ্রমের কারণে আসেনি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকাও একটা বড় ব্যাপার। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি কৃতজ্ঞ এবং নিজেকে আরও উন্নত করতে চান।
বেজোসের মতো আরেক মার্কিন বিলিয়নিয়ার মার্ক কিউবেনও বলেন, ‘বিলিয়নিয়ার হতে হলে আপনার যে একটা জিনিস থাকতে হবে, সেটা হলো ভাগ্য।’
সৌভাগ্য মানে উদ্যোগবেজোসের সূত্র অনুযায়ী, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যের কথা অস্বীকার করেন, তাঁরা একটু অহংকারী হতে পারেন। কিন্তু যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন, তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার আরও একটা কারণ আছে।
বিজ্ঞান বলে, ভাগ্য সব সময় হঠাৎ করে আসে না। ভাগ্যবান মানুষেরা নিজেদের স্বভাব ও কাজের মাধ্যমে নিজেরাই ভাগ্য তৈরি করেন।
একটি পরীক্ষায় বিষয়টি চমৎকারভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে একটি পত্রিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে থাকা ছবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব গুণে শেষ করতে হবে।
কেউ কেউ উত্তর দিতে কয়েক মিনিট সময় নিলেন। আবার বাকিরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই উত্তর দিয়ে দিলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? যাঁরা সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের কি ভাগ্য সহায়তা করেছে? মোটেও না।
আদতে পরীক্ষকেরা পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় একটি বাক্সে লিখে রেখেছিলেন, ‘এই পত্রিকায় ৪৩টি ছবি আছে। আপনি এখন পড়া বন্ধ করতে পারেন।’
যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেন, তাঁরা সহজেই বাক্সটি দেখতে পান এবং পাতা না উল্টিয়েই উত্তর দিয়ে দেন।
লোকে যেটাকে ‘সৌভাগ্য’ বলে, তা আদতে চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সুযোগের দিকে নজর রাখা। বেজোস ঠিক এটাই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দেখতে চাইতেন।
আরও পড়ুনজেফ বেজোস–লরেন সানচেজের বিয়ের পোশাক ও বাগ্দানের আংটির দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে৩০ জুন ২০২৫সৌভাগ্য মানে আশাবাদসবশেষে নিজেকে ভাগ্যবান বলার মানে শুধু এটা নয় যে অতীতে আপনার সঙ্গে ভালো কিছু ঘটেছে। এর মানে হলো, আপনি ভবিষ্যতেও ভালো কিছু ঘটার আশা করেন। এককথায়, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান বলেন, তাঁরা সাধারণত আশাবাদী হন।
আর মনোবিজ্ঞান বলে, ব্যবসায় ভালো করার জন্য আশাবাদী মনোভাব খুব দরকার।
অবশ্যই, অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াও ঠিক নয়। কারণ, দুশ্চিন্তা আমাদের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, যাঁরা সুযোগের ওপর বেশি মনোযোগ দেন, তাঁরা আরও বেশি সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান হন।
এসব থেকেই বোঝা যায়, বেজোসের প্রিয় প্রশ্নটি অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। ভাগ্যবান হওয়ার মানে শুধু দৈবক্রমে কিছু পাওয়া নয়। বরং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাটা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি নম্র, (ইতিবাচকভাবে) সুযোগসন্ধানী, কর্মঠ এবং ভবিষ্যতের ওপর বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছুক।
তো এসব গুণ যাঁর মধ্যে আছে, তেমন প্রার্থীকে চাকরি দিতে কে না চাইবে?
সূত্র: মিডিয়াম
আরও পড়ুনগার্মেন্টসে চাকরি করা সাদিকা যেভাবে করপোরেট জীবনে পা রাখলেন২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ