অ্যামাজনের এক্সিকিউটিভ থেকে বিনিয়োগকারী হওয়া ড্যান রোজ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন,  ‘১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি যখন অ্যামাজনে কাজ করতাম, তখন জেফ বেজোসের প্রিয় ইন্টারভিউ প্রশ্ন ছিল “আপনি কি ভাগ্যবান?”’

হয়তো ভাবতে পারেন, বিশ্বের অন্যতম ধনী মানুষটা কি তাহলে ভাগ্যেও বিশ্বাসী? নাকি তিনি আশা করতেন নতুন কর্মীদের সৌভাগ্য তাঁর কোম্পানিতেও জাদুর মতো কাজ করবে? সম্ভবত তা নয়।

বেজোস–বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশ্নটি ছিল কয়েকটা গুণ পরখ করার দারুণ এক উপায়। এর মধ্যে আছে নম্রতা, উদ্যোগ এবং আশাবাদ। চলুন, বিষয়গুলো বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করা যাক।

সৌভাগ্য মানে নম্রতা

বেজোস তাঁর কর্মীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন। তাঁদের কাছে অতীতের ভুলগুলো জানতে চাইতেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, যাঁরা ভুল স্বীকার করেন এবং সেখান থেকে শেখেন, তাঁরাই সত্যিকারের বুদ্ধিমান। ‘আপনি কি ভাগ্যবান?’—এই প্রশ্নের মাধ্যমে বেজোস চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন।

অ্যামাজনের একজন বিনিয়োগকারী প্যাট্রিক মায়ারের মতে, ‘ভাগ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা নম্রতা মাপার দুর্দান্ত উপায়।’

বেজোসের প্রশ্নটি নিয়ে প্যাট্রিক এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ যদি স্বীকার করেন যে তিনি ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছেন, তবে এটা তাঁর বিনয়ের লক্ষণ।’

এর মানে হলো আপনি বোঝেন যে আপনার সাফল্য শুধু বুদ্ধি আর পরিশ্রমের কারণে আসেনি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকাও একটা বড় ব্যাপার। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি কৃতজ্ঞ এবং নিজেকে আরও উন্নত করতে চান।

বেজোসের মতো আরেক মার্কিন বিলিয়নিয়ার মার্ক কিউবেনও বলেন, ‘বিলিয়নিয়ার হতে হলে আপনার যে একটা জিনিস থাকতে হবে, সেটা হলো ভাগ্য।’

সৌভাগ্য মানে উদ্যোগ

বেজোসের সূত্র অনুযায়ী, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যের কথা অস্বীকার করেন, তাঁরা একটু অহংকারী হতে পারেন। কিন্তু যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন, তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার আরও একটা কারণ আছে।

বিজ্ঞান বলে, ভাগ্য সব সময় হঠাৎ করে আসে না। ভাগ্যবান মানুষেরা নিজেদের স্বভাব ও কাজের মাধ্যমে নিজেরাই ভাগ্য তৈরি করেন।

একটি পরীক্ষায় বিষয়টি চমৎকারভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে একটি পত্রিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে থাকা ছবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব গুণে শেষ করতে হবে।

কেউ কেউ উত্তর দিতে কয়েক মিনিট সময় নিলেন। আবার বাকিরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই উত্তর দিয়ে দিলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? যাঁরা সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের কি ভাগ্য সহায়তা করেছে? মোটেও না।

আদতে পরীক্ষকেরা পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় একটি বাক্সে লিখে রেখেছিলেন, ‘এই পত্রিকায় ৪৩টি ছবি আছে। আপনি এখন পড়া বন্ধ করতে পারেন।’
যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেন, তাঁরা সহজেই বাক্সটি দেখতে পান এবং পাতা না উল্টিয়েই উত্তর দিয়ে দেন।

লোকে যেটাকে ‘সৌভাগ্য’ বলে, তা আদতে চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সুযোগের দিকে নজর রাখা। বেজোস ঠিক এটাই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দেখতে চাইতেন।

আরও পড়ুনজেফ বেজোস–লরেন সানচেজের বিয়ের পোশাক ও বাগ্‌দানের আংটির দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে৩০ জুন ২০২৫সৌভাগ্য মানে আশাবাদ

সবশেষে নিজেকে ভাগ্যবান বলার মানে শুধু এটা নয় যে অতীতে আপনার সঙ্গে ভালো কিছু ঘটেছে। এর মানে হলো, আপনি ভবিষ্যতেও ভালো কিছু ঘটার আশা করেন। এককথায়, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান বলেন, তাঁরা সাধারণত আশাবাদী হন।

আর মনোবিজ্ঞান বলে, ব্যবসায় ভালো করার জন্য আশাবাদী মনোভাব খুব দরকার।
অবশ্যই, অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াও ঠিক নয়। কারণ, দুশ্চিন্তা আমাদের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, যাঁরা সুযোগের ওপর বেশি মনোযোগ দেন, তাঁরা আরও বেশি সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান হন।

যে কারণে বেজোসের প্রশ্নটি অদ্ভুত কিন্তু দুর্দান্ত

এসব থেকেই বোঝা যায়, বেজোসের প্রিয় প্রশ্নটি অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। ভাগ্যবান হওয়ার মানে শুধু দৈবক্রমে কিছু পাওয়া নয়। বরং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাটা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি নম্র, (ইতিবাচকভাবে) সুযোগসন্ধানী, কর্মঠ এবং ভবিষ্যতের ওপর বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছুক।

তো এসব গুণ যাঁর মধ্যে আছে, তেমন প্রার্থীকে চাকরি দিতে কে না চাইবে?

সূত্র: মিডিয়াম

আরও পড়ুনগার্মেন্টসে চাকরি করা সাদিকা যেভাবে করপোরেট জীবনে পা রাখলেন২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির