গাজীপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার
Published: 7th, July 2025 GMT
শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজিসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রবিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা গেছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন- গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হালিম মোল্লা, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য জিয়াউল হাসান ওরফে স্বপন এবং টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম ওরফে সাথী
আরো পড়ুন:
‘এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে বিএনপি চাঁদা তোলে না’
দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আপনাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুষ্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরণের কার্যকলাপ দলীয় শৃঙ্খলা এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থি। সুতরাং এসব কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ওই চারজনের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দল তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিএনপিতে চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীর জায়গা নেই। এসব বিষয় তারেক রহমান সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই দল তার বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স
এছাড়াও পড়ুন:
শোলাকিয়ায় দেয়ালে গুলির চিহ্ন স্মরণ করিয়ে দেয় সেই ভয়াবহ স্মৃতি
দেশ কাঁপানো নৃশংস জঙ্গি হামলার ৯ বছরেও সে দিনের ভয়াবহতা ভুলতে পারেননি কিশোরগঞ্জবাসী। ভয়ার্ত সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজো শিউরে ওঠেন সবাই। স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় শোলাকিয়ার মানুষদের। বাড়ি ঘরের দেয়ালগুলোতে এখনো যেন আবছা হয়ে ফুটে ওঠে গুলির চিহ্ন।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই সকালের শুরুটা ভালো হলেও শেষটা মোটেই ভালো ছিল না। ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহে ছিল মানুষের ঢল। আজিমউদ্দিন হাইস্কুল সংলগ্ন রাস্তার মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের সামনে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে চলে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ।
জঙ্গিরা গলাকেটে হত্যা করে পুলিশের দুই কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হককে। আহত হয় পুলিশের অন্তত আটজন সদস্য। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হন আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। জঙ্গিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক।
আরো পড়ুন:
গাজা যুদ্ধে প্রশ্নের মুখে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি
ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক জঙ্গি আটক হন। তানিম নামে স্থানীয় এক সন্দেহভাজন যুবককে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি হামলা চালাতে গিয়ে ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বিভিন্ন সময় মারা যায়। পরে জেএমবি সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, আনোয়ার হোসেন, সোহেল মাহমুদ, রাজীব গান্ধী ও জাহিদুল হক তানিম নামে বাকি পাঁচজনকে মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়। বর্তমানে ৫ জনের মধ্যে ৪ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, একজন কারাগারে আছেন।
মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দ্রুত স্বাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জবাসী।
জঙ্গি হামলার দিনের ঘটনাস্থল সবুজবাগ গলির নাম এখন ‘ঝর্ণা রানী ভৌমিক সড়ক’। গলির ভেতরে বিভিন্ন বাসার দেয়ালে এখনো গুলির চিহ্ন রয়েছে। এগুলো মুছে যায়নি। আট বছরেও এলাকাবাসী ভুলতে পারেননি সেই দুঃসহ স্মৃতি। সেই ভৌমিক নিবাসে আজও শোকের আবহ। যে জানালাটা ভেদ করে গুলি ভেতরে গিয়ে ঝর্ণা রানী মারা যান, সেই জানালাটার পাশে টানানো হয় ঝর্ণার ছবি। তার স্বামী গৌরাঙ্গ গত বছরের ১৮ জুন মারা গেছেন।
ঝর্ণা-গৌরঙ্গ দম্পতির সন্তান শুভ দেব পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখনো সেদিনের কথা মনে হলে তারা আঁতকে ওঠেন। বিশেষ করে তখন যারা ছোট ছিল, তাদের মন থেকে এ ঘটনার স্মৃতি দূর হচ্ছে না কিছুতেই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের ইমাম দ্বীন ইসলাম। তিনি বলেন, “সেদিনের ঘটনার কথা মনে পরলে আজও গা শিউরে ওঠে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।”
তিনি জানান, ওই দিন তিনি মসজিদেই ছিলেন। মসজিদের সামনে নিরাপত্তা চৌকিতে মুসল্লিদের তল্লাশি করছিল পুলিশ। এ সময় পুলিশের ওপরে আচমকা হামলা করে জঙ্গিরা। কি ভয়াবহ একটি দিন ছিল সেটি। চারিদিকে গুলি আর ভয়ার্ত মানুষের আত্মচিৎকার।
সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান রেনু। যিনি পুরো বিষয়টি পাঁচতলার বাসা থেকে দেখেছেন। তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলির সময় কান ঝালাপালা অবস্থা। জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে তার বাসার সামনে সবুজবাগ গলিতে। ভয়ে তার বাসার সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে মেঝেতে শুয়ে পড়েন।
তিনি জানান, বাসার চারতলায় গিয়ে জানালার পাশে অবস্থান নেন তিনি। তখন এক হামলাকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় একজন হামলাকারী হাতে থাকা চাপাতি ঘোরাতে ঘোরাতে পুলিশকে আক্রমণ করতে যায়। পুলিশ সদস্যরা গুলি করে চাপাতি হাতে থাকা জঙ্গিকে মাটিতে ফেলে দেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর জালাল উদ্দিন বলেন, “২০১৬ সালের ৭ জুলাই জঙ্গিরা শোলাকিয়ায় অর্তকিত হামলা করে। তারা তাদের অবস্থান জানান দিতেই মূলত হামলাটি করেছিল। এ ঘটনার পর সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়। মামলাটি দীর্ঘ পরিক্রমায় চার্জশিট হয়।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে সন্ত্রাস দমন ট্রাইবুন্যাল-২ কিশোরগঞ্জে মামলাটি বিচারাধীন। ইতোমধ্যে ৭৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে ম্যাজিষ্ট্রেট, ডাক্তার, মামলার আইও সাক্ষীগ্রহণ রয়েছে। চলতি বছর ১৭ আগস্ট মামলার পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, অতিদ্রুত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণসহ বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।”
ঢাকা/মাসুদ