প্রবল বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমেস্বরী নদীর ওপর নবনির্মিত চাপাতলী সেতুর দুই পাশের সড়ক ভেঙে গেছে। এ ছাড়া পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় আধাপাকা একটি দোকানঘরও ভেঙে গেছে। গত শনিবার রাতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রোববার সকাল থেকে সোমেস্বরী নদী দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে পানি কমে যায়।
জানা গেছে, ঝিনাইগাতী সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেখানে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের খবর আসছিল। এরই মধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আব্দুর রশিদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ১৫ মে শেরপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে জেলায় আকস্মিক বন্যার বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ভোগাই, সোমেস্বরী, ঢেউফাসহ বেশ কয়েকটি নদী। এসব নদী ভারত থেকে এসেছে।
এদিকে শনিবার সারারাত প্রবল বৃষ্টিপাত হয় ঝিনাইগাতী উপজেলায়। রাতে উজানের ঢলে সোমেস্বরী নদীতে পানি বেড়ে যায়। এ সময় ধানশাইল বাগেরভিটা গ্রামে সোমেস্বরী নদীর ওপর নির্মিত চাপাতলী নতুন সেতুর সেন্টারিংয়ে পানি আটকে দু’পাশের কিছু সড়ক ও একটি দোকান ভেঙে যায়।
ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, নদীতে ঢলের পানি আসার পর সেতুর সেন্টারিংয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ সময় পানি প্রবাহে সেতুর পাশে থাকা একটি দোকানঘর ও সড়কের কিছু অংশ ভেঙে গেছে।
খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল ও উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, সেতুর ছাদের কাজ শেষ হয়েছে। ২৮ দিন হয়নি। এজন্য সেন্টারিং খোলা হয়নি। শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পানি বেড়ে যায়। স্রোতের সঙ্গে গাছসহ ময়লা-আবর্জনা এসে সেন্টারিংয়ে আটকে যায়। পাশাপাশি সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক করতে স্থানীয় লোকজন বাধা দিচ্ছিল। এ কারণে ঢলের অতিরিক্ত পানি এসে আটকে গিয়ে সেতুর দুই দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে কিছু সড়ক ও একটি দোকান ভেঙে যায়। 
ঝিনাইগাতীর ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সোমেস্বরী নদীতে পানি বেড়েছে। নবনির্মিত সেতুর দুই পাশে কিছু সেন্টারিং ছিল। পানি উপচে গিয়ে সংযোগ সড়কের কিছু অংশ ও একটি দোকান আংশিক ভেঙে গেছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম স বর প রবল ব প রব হ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংসহ গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষ স্থগিত করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) ভুক্তভোগী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে যান। ক্লাস শেষে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র‍্যাগিং, সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তারা নবীনদের শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা 

সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য

এ সময় ঠিকভাবে পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের একজন এবং ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন তারা। এছাড়া ‘শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন?’ বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়। এতে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। 

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন। 

অভিযুক্ত আবর্তনের শ্রেণি প্রতিনিধি ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র‍্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিসের সমস্যা যে ছেলের, তার সঙ্গে রুমে ঢোকার সময় একজনের ধাক্কা লাগে। এতে ওই বিষয়টি ঘটে গেছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”

একই আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।” 

রাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মাত্র ৫-১০ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।”

তবে ভুক্তভোগী আবর্তনের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।” 

লিখিত অভিযোগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভাগের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জেনে গেছে।”

থাপ্পড় মারার অভিযোগে শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, “র‍্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য।”

তিনি বলেন, “যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”

এ বিষয়ে কল দিলে বিভাগীয় প্রধান ড. মেহের নিগার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ