খুলনায় গণ-অভ্যুত্থানে ধাওয়ায় আহত যুবলীগের সাবেক নেতা অনুদান পেলেন এক লাখ টাকা
Published: 19th, May 2025 GMT
খুলনায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত হয়েছিলেন যুবলীগের সাবেক নেতা মিনারুল ইসলাম। তিনি ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে সরকারি অনুদান পেয়েছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৪ মে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে মিনারুল এক লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। এই ঘটনায় ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে মিনারুলের অনুদান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সরকারি অনুদান বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসন গতকাল রোববার রাতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মিনারুল ইসলামের নামটি মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা। মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চেকটা আমরা তাঁকে (মিনারুল) দিয়েছি। কিন্তু চেকটা ক্যাশ হয়নি। টাকাটা তিনি তুলতে পারেননি। ক্যাশ হওয়ার আগেই আমরা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। ব্যাংক থেকেও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তারা চেকটা ক্যানসেল করে দেবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)। সদস্য হিসেবে আছেন পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, তেরখাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা)। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর জেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিনারুল ইসলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নগরের লোয়ার যশোর রোডে খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিস এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়। তখন শিক্ষার্থী-জনতার ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত হন মিনারুল। সম্প্রতি তাঁর অনুদান গ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে খুলনার ৬৩ জনের নামে অনুদানের চেক এসেছে। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন ইতিমধ্যে ১ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। মিনারুল ১৪ মে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে সেই চেক গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করার পর জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি, পুলিশ, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর জেলা কমিটির সভায় পুনরায় যাচাই-বাছাই করে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে মিনারুল ইসলাম সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মন্ত্রণালয় তাঁর আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে এবং চেক খুলনায় পাঠায়। তাঁর আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই।
তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিনারুল ইসলাম যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০২৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের ৪ আগস্ট খুলনায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে টিনের চালে ঝাঁপ দিলে তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছিল বলে শুনেছিলাম। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো রকম যোগযোগ নেই।’
এসব বিষয়ে জানতে মিনারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন র ল ইসল ম য বল গ র স কম ট র স অন দ ন সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
বরিশালে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক আক্তার ফারুক শাহীনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বরিশালে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বিএনপির পদ স্থগিত থাকা আইনজীবী বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। বিচারক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী মামলার পরবর্তী দিন আগামী ১ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন ও শাহীনের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। শাহীন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত বছর ১১ আগস্ট ‘বরিশালে ১০ কোটি টাকার পুকুর ভরাটের চেষ্টা বিএনপি নেত্রী শিরিনের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। তার দাদা ৬৫ বছর পূর্বে পুকুরটি ক্রয় করেছেন। ওয়ারিশ সূত্রে তিনি আধা শতাংশ মালিকও নন। এর মূল্যে কোনোভাবেই ১০ কোটি টাকা হতে পারে না। তাছাড়া পুকুরটি এখন ব্যবহার অযোগ্য। সেটি ভরাটের সঙ্গে তিনি (শিরিন) কোনোভাবেই জড়িত নন।
মামলা করা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী শিরিন বলেন, ‘সংবাদটি প্রকাশ করে আমার রাজনৈতিক ও পরিবারের সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। একাধিক প্রতিবাদ লিপি দিলেও পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। ব্যুরো প্রধানকে পর পর দিনটি আইনি নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি’।
এ বিষয়ে সাংবাদিক শাহিন বলেন, ‘জাল দলিল সূত্রে পুকুরটির মালিকানা বদল হয়েছে। দালিলিকভাবে সেটি জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত পুকুর। জলাশয় আইনে এটি ভরাট করা অপরাধ। ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনের পর শিরিনের ভাই শামিম সশরীরে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট করেন। ভরাট করায় পরিবেশ অধিদপ্তর যে নোটিশ দিয়েছে, তাতেও শিরিনের নামও রয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে’।