খুলনায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত হয়েছিলেন যুবলীগের সাবেক নেতা মিনারুল ইসলাম। তিনি ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে সরকারি অনুদান পেয়েছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৪ মে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে মিনারুল এক লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। এই ঘটনায় ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে মিনারুলের অনুদান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সরকারি অনুদান বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসন গতকাল রোববার রাতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মিনারুল ইসলামের নামটি মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা। মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চেকটা আমরা তাঁকে (মিনারুল) দিয়েছি। কিন্তু চেকটা ক্যাশ হয়নি। টাকাটা তিনি তুলতে পারেননি। ক্যাশ হওয়ার আগেই আমরা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। ব্যাংক থেকেও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তারা চেকটা ক্যানসেল করে দেবে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)। সদস্য হিসেবে আছেন পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, তেরখাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা)। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর জেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিনারুল ইসলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নগরের লোয়ার যশোর রোডে খুলনায় আওয়ামী লীগের অফিস এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়। তখন শিক্ষার্থী-জনতার ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত হন মিনারুল। সম্প্রতি তাঁর অনুদান গ্রহণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে খুলনার ৬৩ জনের নামে অনুদানের চেক এসেছে। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন ইতিমধ্যে ১ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। মিনারুল ১৪ মে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে সেই চেক গ্রহণ করেন।

এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করার পর জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি, পুলিশ, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর জেলা কমিটির সভায় পুনরায় যাচাই-বাছাই করে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে মিনারুল ইসলাম সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। মন্ত্রণালয় তাঁর আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে এবং চেক খুলনায় পাঠায়। তাঁর আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই।

তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিনারুল ইসলাম যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০২৩ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের ৪ আগস্ট খুলনায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে টিনের চালে ঝাঁপ দিলে তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছিল বলে শুনেছিলাম। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো রকম যোগযোগ নেই।’

এসব বিষয়ে জানতে মিনারুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন র ল ইসল ম য বল গ র স কম ট র স অন দ ন সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ