শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সবুজ ভাইয়ের টং’ শুধু দোকান নয়, স্মৃতির আঙিনা
Published: 22nd, May 2025 GMT
টিলার ওপরে চত্বরের নাম গিফারি চত্বর। আর এই চত্বরকে ঘিরেই ঘরে উঠেছে সবুজ ভাইয়ের টংদোকান। একটা টিনের ছাউনি, স্টিলের কাঠামো, কাচের একটি কাঠামোয় সাজানো শিঙাড়া-পেঁয়াজু আর পাতিলে রাখা ডিমের সঙ্গে খিচুড়ি। সঙ্গে চা আর সামান্য পানীয়। বসার চার থেকে পাঁচটি বেঞ্চ ও টেবিল। এতটুকুই হয়তো চোখে পড়ে প্রথমবার যিনি আসেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গিফারি চত্বরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে এটি শুধুই দোকান নয়, এটি ‘সবুজ ভাইয়ের টং’; স্মৃতির আঙিনা, সম্পর্কের উষ্ণতা, নির্ভরতা আর আবেগের নাম।
হাজারো শিক্ষার্থী কিংবা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক হওয়া সবাই তাঁকে সবুজ ভাই নামেই চেনেন। সবার সঙ্গেই তাঁর খাতির ভালো। হাসি-আনন্দে, উল্লাসে কিংবা দুঃসময়ে সবুজ ভাইয়ের পাশে থাকেন তাঁরা। ক্যাম্পাসের অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি।
সবুজ ভাইয়ের পুরো নাম সবুজ মিয়া। ২০০২ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবনের নির্মাণকাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা শুরুর মধ্যে ক্যাম্পাসে বিচরণ তাঁর। পরে এলাকার এক ভাইয়ের সহযোগিতায় শুরু করেন টংদোকান। ব্যবসায় নতুন, নিয়মকানুন না জেনেই বাকিতে জিনিস বিক্রি করে লোকসান করেন প্রায় ছয় হাজার টাকা। হাল ছেড়ে দেননি। আবার দোকান দেন শিক্ষা ভবনের সামনেই। ভাগ্য তখন ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে।
২০১১ সালে এক আঘাত আসে, হঠাৎ করেই প্রশাসনের আদেশে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ফুচকার দোকান দেন। পরে ইউসি বিল্ডিংয়ের সামনে টংদোকান চালান। তবে ২০১৯ সালে সমাবর্তনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনের কারণে সব টংদোকান উচ্ছেদ হলে তাঁর দোকানও হারিয়ে যায়।
পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান সবুজ মিয়া। সেই কঠিন সময়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইউসুফ নামের এক শিক্ষার্থী তাঁকে দোকান চালু করতে দেন ৭০ হাজার টাকা। আরও অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান। সব মিলিয়ে লাখ টাকার সহায়তা দিয়ে ২০২০ সালে গিফারি চত্বরের টিলার ওপরে নতুন করে শুরু হয় ‘সবুজ ভাইয়ের টং’।
তবে আবার বাধা আসে। ২০২০ সালের শুরুতে মাত্র এক মাস দোকান চালাতে না চালাতেই শুরু হয় করোনা মহামারি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায় ১৮ মাসের জন্য। সেই দীর্ঘ সময় পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা ছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন ও তাঁদের ব্যক্তিগত সহায়তা।
সবুজ মিয়া বলেন, বর্তমানে মাস শেষে আয় যা থাকে, তার চেয়ে বেশি ঋণ। ক্যাম্পাস ছয় মাস খোলা থাকলে ছয় মাস বন্ধ থাকে—এমন অনিশ্চয়তায় প্রতিদিনই একরকম টিকে থাকার লড়াই। ক্যাম্পাসে পুরোদমে ক্লাস হলে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা বিক্রি হয়। লাভ থাকে দেড় হাজারের মতো। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে আয় নেই।
সবুজ ভাইয়ের দোকানে বিক্রি হয় শিঙারা, আলুর চাপ, ডালের বড়া, বেগুনি, পেঁয়াজু। সব রান্না হয় তাঁর বাসায়। তাঁর স্ত্রী নিজ হাতে তৈরি করেন। সঙ্গে থাকে চা, ঠান্ডা পানীয় ও মাঝেমধ্যে জুস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জুনেদ আহমেদ বলেন, ‘সবুজ ভাইয়ের টং শুধু দোকানই নয়, এটা আবেগের জায়গা। সেখানে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কত আড্ডা, গান, গল্প জমা আছে।’
সবুজ মিয়ার পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে হলেও বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে। পরিবারে আছেন বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ফরহাদ মিয়া এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে, ছোট ছেলে মোরাদ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এই ক্যাম্পাস ছাড়তে মন চায় না বলে জানালেন সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সবাই তাঁকে ‘সবুজ ভাই’ নামে চেনেন। শিক্ষার্থীরা নতুন কোনো আয়োজন করলে দাওয়াত দেন। খেলাধুলা উপলক্ষে কোনো নতুন জার্সি বানানো হলে প্রায় প্রতিটি দলই তাঁর জন্য একটি রাখে। সবাই ভালোবাসেন, আন্তরিকভাবে ডাকেন, তখন তাঁর প্রাণ জুড়ায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানি দুপুরে
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি কার্যতালিকায় রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য রয়েছে।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
আরো পড়ুন:
যারা একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের পদত্যাগ করতে হবে: ইশরাক
অবৈধ নির্বাচনের মেয়র হতে চাইলে সেটা কি বৈধ হয়, প্রশ্ন সারজিসের
এদিকে, আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করবেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক হোসেন।
গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। সেই সঙ্গে রিটে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রিটে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। বুধবার (১৪ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদের পক্ষে আইনজীবী কাজী আকবর আলী।
এদিকে, বিএনপির প্রয়াত নেতা ও অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র হিসেবে পেতে গত কয়েকদিন ধরে নগর ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন তার সমর্থকরা।
ঢাকা/এম/ইভা