মেঘনার বালুমহাল ইজারা–কাণ্ডে বরিশালে বিএনপির ১২ নেতার পদ স্থগিত
Published: 22nd, May 2025 GMT
বরিশালের মেঘনা নদীর একটি বালুমহালের ইজারা বাগাতে গিয়ে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতার পদ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ওই নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত চিঠি অভিযুক্ত নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু অভিযুক্তরা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
পদ স্থগিত হওয়া নেতারা হলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম, সহসভাপতি নূর হোসেন, সদস্য ইমরান খন্দকার, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্যসচিব মো.
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে বরিশালে বালুমহালের দরপত্র নিয়ে এক সেনাসদস্যকে মারধর ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো সহিংস ও জবরদস্তিমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ আগামী ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলো।’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৭ মার্চ বরিশালের ছয়টি বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে হিজলা উপজেলা-সংলগ্ন মেঘনার একটি বালুমহাল নিয়ে দরপত্রে অংশ নেন কাজী আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগ আছে, ওই ইজারা পেতে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ চাপ সৃষ্টি করতে চাইলে মতিনের ভাতিজা সেনাসদস্য আবু জাফরকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মারধর করে অপহরণ করে নগরের নদীবন্দর-সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। পরে সেনাসদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় দেওয়ান মনির হোসেন, নূর হোসেন ও ইমরান খন্দকারকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার পর গত ২৪ মার্চ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তিন মাসের জন্য সাময়িকভাবে পদ স্থগিত করা হয়। পরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীকে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার নতুন করে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন সদস য বর শ ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
আরও কিছু সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ
আরও কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। আর এসব কোম্পানিকে বাজারে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আপাতত এসব কোম্পানির ৫ শতাংশ করে শেয়ারবাজারে ছাড়া হবে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টা বৈঠকে ছিলেন না। এমনকি বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানেরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা কেউই বৈঠকে ছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত বৈঠকে অংশ নেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
এর আগে ১১ মে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা, বিএসইসির চেয়ারম্যান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণ এবং কোনো দপ্তর কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে, তা–ও ঠিক করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েই আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তবে অনেকেই শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিলেন না।
সরকারি যেসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফায়েড পেট্রোলিয়ম গ্যাস, সিলেট গ্যাসফিল্ড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগাং ডকইয়ার্ড, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, টেলিটক ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ১১ মের বৈঠকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, এর মধ্যে রয়েছে—যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; দেশের বেসরকারি খাতের ভালো ও বড় বড় কোম্পানিকে বাজারে আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো; বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া; পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বড় কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজারমুখী করা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ভালো ও বড় কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না চাইলে সরকার জোর করবে না। তাই প্রণোদনা দিয়ে তাদের বাজারে আনার চেষ্টা চলছে।