মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে শহীদদের স্মরণে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। কনফারেন্সের নাম ‘শাপলা চত্বর: শাহাদাতের রক্তে রাঙা অবিনাশী চেতনা’। আগামী শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ‘শাপলা স্মৃতি সংসদ’–এর উদ্যোগে একটি বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কনফারেন্স বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শহীদদের স্মরণে একটি মানসম্মত তথ্যচিত্র নির্মাণ এবং একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কনফারেন্সে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তুলে ধরবেন।

বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে শাপলা স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘শাপলা চত্বরের শহীদরা ইসলামি স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করে যে গৌরবময় ইতিহাস রচনা করেছেন, তা চিরন্তন। এই চেতনা আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, দৈনিক আমার দেশের সহসম্পাদক মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব, তাগলীবে দ্বীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, শায়খুল হাদিস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ, হেফাজতের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সালাহউদ্দিন মাসউদ, মাওলানা আল আবিদ শাকির, জাকির হুসাইন, কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনফ র ন স

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় অনাহারে মৃত্যু বাড়ছে

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ২৯ শিশু ও বৃদ্ধ অভুক্ত থেকে মারা গেছেন। হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৫১ জন নিহত হন। এ অবস্থায় ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লে ইসরায়েল ত্রাণবাহী কিছু সংখ্যক ট্রাক প্রবেশের অনুমোদন দেয়। পর্যবেক্ষকরা এটাকে প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অল্প বলে বর্ণনা করছেন।

খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ৯৩ শতাংশের বেশি শিশু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজিদ আবু রমজানের উদ্ধৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার আলজাজিরা জানায়, সম্প্রতি গাজায় শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ২৯ জনের ‘ক্ষুধাজনিত মৃত্যু’ হয়েছে। আরও হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। জাতিসংঘের সহায়তাবিষয়ক প্রধানের আগের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহায়তা না দিলে অন্তত ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। জাতিসংঘ কর্মকর্তার বক্তব্য ‘অত্যন্ত বাস্তবসম্মত’ বলে জানান তিনি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ১৬ হাজার ৫০০-এর বেশি শিশু ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৯১৬। এক থেকে পাঁচ বছরের ৪ হাজার ৩৬৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৬ থেকে ১২ বছরের ৬ হাজার ১০১ শিশু ও ১৩ থেকে ১৭ বছরের ৫ হাজার ১২৪ শিশু নিহত হয়েছে।

এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল ৯৮ ট্রাক ময়দা ও শিশুখাদ্যের প্রবেশ অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার সিজিটিএন জানায়, বিতরণ নিয়ে সমস্যার কারণে এ খাদ্য যথাযথভাবে গাজার সব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না। গত ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর গত সোম ও মঙ্গলবার ত্রাণবাহী এসব ট্রাক প্রবেশ করে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপির পরিচালক অ্যান্টনি রিনার্ড বলেন, এসব ত্রাণের খুব অল্পই গাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের অবরোধ গাজার মানুষকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এ অবস্থায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার বলেন, তিনি গাজায় হামলা বন্ধ করবেন না। হামাসকে পরাজিত করে তিনি উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তিনি চলমান ‘অপারেশন গিডেয়ন চেরিয়টস’ অব্যাহত রাখবেন। গত শনিবার কথিত এ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

জিম্মি মুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহুর অনীহার কারণে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। জিম্মিদের স্বজন প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন। পাশাপাশি রিজার্ভ সেনাদের একটি বড় অংশ যুদ্ধে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ এসব চাপ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। আর ফ্রান্স ও কানাডা ‘বস্তুনিষ্ঠ’ পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এ দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশ গাজা গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সর্বশেষ উরুগুয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। 

এদিকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পশ্চিম তীর সফরকালে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সতর্কতাসূচক গুলির ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশ এ নিন্দা জানায়। 

গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। 

ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান পোপ চতুর্দশ লিওর 

গাজায় ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ চতুর্দশ লিও। বুধবার তিনি গাজায় ‘হৃদয়বিদারক’ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে সর্বসাধারণের সামনে প্রথম উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন। ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে হাজির হন পোপ চতুর্দশ লিও। এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রথম এ পোপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। 

 মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ‘সম্ভবত’ গাজায় হামাসের অধরা ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারা কয়েক হাজার হামাস সদস্যকে নির্মূল করেছেন। দেইফ, হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ারকেও হত্যা করেছেন। 

গত সপ্তাহে খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালে ব্যাপক হামলা চালিয়ে সিনওয়ারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয় বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। হামলার পর ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ হামলায় ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫০ জনেরও বেশি আহত হন। সিনওয়ার হলেন সাবেক হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। ইয়াহিয়া গত অক্টোবরে দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ