পেন্ডুলামের মতো দুলছে গল টেস্টের ভাগ্য। কখনো শ্রীলঙ্কা এগিয়ে, তো কখনো বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ দিনের সকালে দৃশ্যপট পাল্টে দিলেন স্পিনার নাঈম হাসান। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৫ রানের ব্যবধানে স্বাগতিকদের শেষ চার উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ, ধরে রাখে প্রথম ইনিংসের লিড। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলামের বিচক্ষণ ব্যাটিংয়ে দিন শেষ করে সফরকারীরা।

চতুর্থ দিনের নায়ক নাঈম হাসান। ৪২ ওভার বল করে ১২১ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। দেশের বাইরে টেস্টে এটাই তার প্রথম পাঁচ উইকেটের কীর্তি। এর আগে দুটি পাঁচ উইকেটের ইনিংস ছিল দেশের মাটিতে। স্বাভাবিকভাবেই দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তিনি।

বোলিংয়ের পরিকল্পনা নিয়ে নাঈম বলেন, ‘চেষ্টা করেছি একটা ভালো জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করার। পেসে ভ্যারিয়েশন এনেছি, সিমের পজিশন বদলে দেখেছি কোনটা কাজ করছে। পাশাপাশি প্রতিটি ব্যাটারের বিরুদ্ধে আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে বল করেছি।’

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করা এই স্পিনার তুলনা করেন দেশের ও শ্রীলঙ্কার উইকেটের মধ্যে। তার ভাষায়, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট থেকে সুবিধা পাওয়া যায়, আর লম্বা সময় ভালো জায়গায় বল করলে ফল আসে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে উইকেট বেশ ভালো থাকে। এখানে ফিল্ড সেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উইকেট পেতে সময় লাগে।’

১২টি টেস্ট খেলে এখন পর্যন্ত ৩৯ উইকেট শিকার করেছেন নাঈম। তবুও জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি। সীমিত ওভারের ফরম্যাটেও এখনও সুযোগ মেলেনি। তবে নিজেকে ‘আনলাকি’ ভাবেন না তিনি। বরং ভাগ্য মেনে নিয়েই আগাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আনলাকির কিছু নেই। যা আল্লাহ রিজিকে রেখেছেন, তাই হবে। আলহামদুলিল্লাহ। সবার ক্যারিয়ার এক রকম হয় না। আমার যেটা হচ্ছে, সেটাও আলহামদুলিল্লাহ।’

শেষ দিনে দলের পরিকল্পনা সম্পর্কে নাঈম জানান, ‘উইকেট এখনও ভালো। তবে পঞ্চম দিনের উইকেট সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি, সেখানে ভাঙন তৈরি হয়। সেটার সুবিধা নিতে চাই। যত বড় সংগ্রহ গড়া যাবে, প্রতিপক্ষ তত চাপের মধ্যে থাকবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১১৪, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা

চলতি বছরের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ফিলিপাইন। দেশটির মধ্যাঞ্চলে কালমেগির আঘাতে ভয়াবহ বন্য দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

ঘূর্ণিঝড় মন্থা, বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা

‘সঠিক স্থান নির্ধারণ না হওয়া আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে’

প্রতিবেদনে বলা হয়, কালমেগির প্রভাবে ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।

সেবুর প্রতিরক্ষা অফিসের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাফায়েলিটো আলেজান্দ্রো জানান, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ৯৯ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, কালমেগির প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। আহত হয়েছে ৮২ জন। এছাড়া ১২৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মার্কোস বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ ঘূর্ণিঝড় কালমেগির আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সপ্তাহান্তে দেশটিতে আরেকটি ঝড় ‘উওয়ান’ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রায় ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যদি এতগুলো অঞ্চল এই ধরনের প্রভাবের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ।” 

জাতীয় দুর্যোগের মানে হলো, এমন এক পরিস্থিতি যেখানে ব্যাপক হতাহত, সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এটি সরকারি সংস্থাগুলোকে জরুরি তহবিল সংগ্রহ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় এবং সরবরাহ দ্রুত করার জন্য আরও ক্ষমতা দেয়।

স্থানীয়ভাবে ‘টিনো’ নামে পরিচিত ঘূর্ণিঝড় কালমেগি মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফিলিপাইনের স্থলভাগে আঘাত হানে। এতে সেবুর আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ছোট অনেক বাড়িঘর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, শহরজুড়ে কাদার ঘন স্তুর পড়েছে। উদ্ধারকারী দল ঘরের ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে নৌকা ব্যবহার করছে।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। পরপর দুটি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষতি হওয়ার মাত্র এক মাস পরই সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন রাগাসা আঘাত হেনেছিল এবং তার পরেই আসে টাইফুন বুয়ালোই।

আগের মাসগুলোতে, বর্ষা মৌসুমে দেশটি ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় নিম্নমানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর, মধ্য ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিল, যার ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল সেবুতে।

ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ বৃহস্পতিবার ফিলিপাইন ছেড়ে মধ্য ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভিয়েতনামে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছিলেন।

পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় কালমেগি শুক্রবার সকালে মধ্য ভিয়েতনামে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানকার ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল অথবা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই এক সপ্তাহ ধরে বন্যা ও রেকর্ড বৃষ্টিপাতের সাথে লড়াই করছে। দেশটির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এখনও বন্যার কবলে রয়েছে।

থাইল্যান্ডও ঝড়ের প্রভাবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা কালমেগির প্রভাবে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১১৪, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা