বাংলাদেশের মাটি–পানি ও আবহাওয়ার সঙ্গে একীভূত হয়ে এ দেশের গাছগাছালির অংশ হয়ে উঠেছে অনেক বিদেশি গাছ। তবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি নিয়ে বিতর্ক আছে। সম্প্রতি গাছ দুটির চারা তৈরি, রোপণ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটি অনুর্বর করা, পাখির অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি করা—এমন নানা অভিযোগ আছে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ নিয়ে। যদিও দেশের কাঠের চাহিদা মেটাতে গাছ দুটির বড় ভূমিকা আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাঠের চাহিদা মেটানোসহ প্রাকৃতিক বনের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট গত শতকের ৮০–এর দশকে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারার পরীক্ষামূলক রোপণ শুরু করে।

উদ্ভিদবিদ ও গবেষকেরা বলছেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি দ্রুত বাড়ে এবং কাঠের চাহিদা মেটায় ঠিকই, তবে এগুলো বেশি পানি শোষণ করে ও মাটিকে রুক্ষ করে তোলে। গরু-ছাগল এসব গাছের পাতা খায় না। গাছ দুটিতে পাখিও বাসা বাঁধে না।

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির এককভাবে বনায়ন করা ঠিক না। যেহেতু এসব গাছ দ্রুত বাড়ে, তাই অন্যান্য প্রজাতির গাছের চেয়ে তারা অতিরিক্ত পানি ও পুষ্টি শোষণ করে।অধ্যাপক মো.

কামাল হোসেন, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বন অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর কাঠের চাহিদা ৮০ লাখ ঘনফুট। মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট কাঠ আমদানি করা হয়। আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছ থেকে আসা কাঠ কতটুকু চাহিদা পূরণ করে, সে তথ্য অবশ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

গত ১৫ মে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের চারা তৈরি, রোপণ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে এমন সিদ্ধান্ত বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন জারি প্রসঙ্গে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখার উপসচিব তুষার কুমার পাল বলেছিলেন, নানা গবেষণায় দেখা গেছে, এসব গাছের পানি শোষণক্ষমতা বেশি ও মাটিকে রুক্ষ করে তোলে। তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে যেভাবে এল

২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ‘ইউক্যালিপটাস ডিলেমা ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৩০ সালে সিলেটের চা–বাগানে সৌন্দর্য বাড়াতে ইউক্যালিপটাস গাছ আনা হয়। সেখান থেকে তা ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি (একাশিয়া) বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, তা জানতে ১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এই গাছ রোপণ করা হয়। তবে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা ওই পরীক্ষামূলক পর্বের তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। পরে আশির দশকে ৩৪ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও ১০ প্রজাতির আকাশমণি এনে আবারও পরীক্ষামূলক বনায়ন করা হয়। এর মধ্যে তিন প্রজাতির আকাশমণি ও তিন প্রজাতির ইউক্যালিপটাস বাংলাদেশে রোপণের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওই তিন প্রজাতির আকাশমণি হলো একাশিয়া অরিকিউলিফরমিস, একাশিয়া ম্যানগিয়াম ও একাশিয়া নাইলোটিকা। আর ইউক্যালিপটাস ক্যামালডালেন্সিস, ইউক্যালিপটাস টেরাটিকরনিস ও ইউক্যালিপটাস ব্রেসানিয়া—এই তিন প্রজাতি রোপণের জন্য নির্বাচিত করে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

তিন প্রজাতির ইউক্যালিপটাস তখন দেশের ১৪টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ইউক্যালিপটাস ক্যামালডালেন্সিস প্রজাতির রোপণ করা চারার মধ্যে টিকে ছিল ৮৯ শতাংশ, যা তিন প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকে থাকার হার। এ হার সবচেয়ে কম ছিল শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়, ৫৬ শতাংশ।

এ ছাড়া প্রতি হেক্টর জায়গায় রোপণ করা ইউক্যালিপটাস থেকে পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি ৯৫ ঘনমিটার কাঠ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলের মধুপুরে। আর সবচেয়ে কম (১৫ দশমিক ৩ ঘনমিটার) কাঠ পাওয়া যায় লাউয়াছড়ায়।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে গাছ রোপণ শুরু হয় ১৮৭১ সালে, পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সীতা পাহাড়ে। সেখানে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিয়ানমার থেকে আনা সেগুনের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে বনায়নের সূচনা করে। সেগুনের বনায়ন বনভূমিকে শুষ্ক করে তোলে ও উদ্ভিদ আচ্ছাদন নষ্ট করলেও বিষয়টি খুব আলোচনায় আসেনি, যতটা আলোচনায় এসেছে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির কথা।

ইউক্যালিপটাস গাছ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক শ য় পর ব শ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু, মোট আক্রান্ত ৬২ 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মারা যাওয়া নারীর বয়স ৭১ বছর। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত নারী গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হলো।

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জে নদীতে ডুবে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু

যশোরে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীক্ষায় একজন, শেভরন ল্যাবে তিনজন এবং এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাবে দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ জন।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ