শুধু একটি চরিত্র নয়, এশা যেন হয়ে উঠেছে তার দ্বিতীয় সত্তা। সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করে অভিনেত্রী পূজা ক্রুজ শুধু সিনেমায় নয়, দর্শকের মনেও গেঁথে দিয়েছেন নিজের নাম।

ঈদুল আজহায় সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে হলে হলে ঘুরছেন তিনি। নিজের চরিত্রটি দর্শকরা কতটা গ্রহণ করেন সেটি দেখতে এই ঘোরাঘুরি তাঁর। পূজা বলেন, ‘‘সিনেমাটি নিয়ে নিয়মিতই হল ভিজিটে গিয়েছি। দারুণ দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক মেয়ে অডিয়েন্স আমার কাছে এসে বলে, এশা আপু আমার নাম এশা। তাই ‘এশা মার্ডার’ দেখতে এসেছি।’’

পূজা আরও বলেন, ‘সিনেমায় আমার চরিত্রের নাম এশা। আমার মনে হয়েছিল এশা নামের মেয়েদের ছবিটি টানবে। এ রকম যে ঘটবে ভাবিনি। যখন আমাকে এসে কয়েকজন বললেন তখনকার অনুভূতিটা নিঃসন্দেহে ভালো লাগার। আমাকেও অনেকে এশা নামে ডাকছেন। এখানেই কাজের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।’

ছোটবেলা থেকে তাঁর মধ্যে ছিল এক ধরনের ‘নায়িকা নায়িকা’ অনুভূতি। সেটি নাচে, গানে, চলনে, বলনে–সবখানেই। মঞ্চে নাচছেন আর দর্শকেরা অপেক্ষা করছেন কখন তিনি আসবেন, আবার কখন নাচ শেষ হবে–এ যেন তাঁর জীবনের প্রথম স্টারডম। কখনও স্কুলের অনুষ্ঠানে, কখনও নজরুল একাডেমির সাপ্তাহিক আয়োজনে একটি গানে নাচলে পরদিন রাস্তায় সেই গান গাইতে গাইতে পাড়ার মানুষ পেছনে পেছনে হাঁটত। শিশুকণ্ঠে তখনই যেন উচ্চারিত হতো, ‘তুই একদিন নায়িকা হবি!’

সে স্বপ্নকে হৃদয়ে বেঁধে নিয়েই এগিয়ে গেছেন পূজা। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে থাকা, মোস্ট কনফিডেন্ট খেতাব জয়, র‌্যাম্প মডেলিংয়ে নিজেকে গড়ে তোলা–সব ছিল তাঁর প্রস্তুতির পর্ব। তবে নাটকে নাম লেখাননি, কারণ শুরু থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল রুপালি পর্দা। ‘সিনেমা করতেই চাইছিলাম’, বলেন তিনি অকপটে।

তাঁর এই জেদ এবং প্রস্তুতির ফলাফল আজ দর্শক দেখছেন ‘এশা মার্ডার’-এ। পূজা জানালেন, ছবিটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং-এ নিয়েছেন ছয় মাসের প্রশিক্ষণ। অভিনয় করেছেন থিয়েটারে ‘মলুয়া’ চরিত্রে। পরিচালক সানী সানোয়ারের তত্ত্বাবধানে নিয়েছেন দু-তিন মাসের কর্মশালা।

‘এশা’ চরিত্রটি নিয়ে পূজা বললেন, ‘চরিত্রটি পুরোপুরি আমার বিপরীত। আমি চঞ্চল, আড্ডাবাজ, প্রাণবন্ত। কিন্তু এশা একেবারে শান্ত, চুপচাপ, সহজ-সরল। তবে একটা দিক মিলেছে, আমরা দুজনেই স্পষ্টবাদী।’

‘শীতের রাত, রক্তমাখা দৃশ্য, কস্টিউমের অস্বস্তি। সবকিছুকে পেছনে রেখে তিনি যে নিষ্ঠা আর আত্মনিবেদন নিয়ে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বোঝা যায় সিনেমা হলে ঢুকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখলে। ‘অনেক মেয়ে দর্শক আমার কাছে এসে বলেছেন, তাদের নামও এশা। তাই তারা ছবিটি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ এখন আমাকে এশা বলে ডাকছেন। এই অনুভবটাই তো শিল্পের সার্থকতা,’ বলেন তিনি হাসতে হাসতে।

ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। পূজার কণ্ঠে বাঁধনের প্রতি শ্রদ্ধা স্পষ্ট– ‘তিনি শুধু সিনিয়র নন, দারুণ আন্তরিকও। আমরা শুটিংয়ে যেমন পাশে পেয়েছি, ইন্টারভিউতেও তিনি আমাকে প্রশংসা করেছেন। এতে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।’

পড়াশোনায়ও পূজা ছিলেন নিবেদিত। টঙ্গীর নোয়াগাঁও স্কুল, এরপর হলি ক্রস কলেজ, শেষে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন। পরিবারের একমাত্র বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব ছিল। তাঁর বাবা-মায়ের ভালোবাসা এবং ছোট দুই বোনের সাপোর্ট তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে।

চলচ্চিত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট, পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে চান তিনি। নাচ, গান, মারপিট-সবই থাকবে সে সিনেমায়।  

পূজার শখের তালিকাও খুব সুন্দর। তিনি ভালোবাসেন ভ্রমণ, রান্না আর খাওয়ানো। গরুর মাংস আর ডিমের দোপেঁয়াজার প্রতি তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। বন্ধুদের কাছেও তিনি ‘রাঁধুনি’ নামে পরিচিত।

সবশেষে, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভিনেত্রী না হলে কী হতেন–তিনি বলেন, ‘আর কিছু ভাবিনি কোনোদিন। এটিই তো স্বপ্ন ছিল।’
এ স্বপ্ন যে ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে, তার প্রমাণ ‘এশা মার্ডার’। সেই ছোট্ট মেয়েটি, যে স্কুলে নাচত আর সবাই অপেক্ষা করত তাঁর জন্য, সে এখন সিনেমা হলে নিজের নামের ডাক শুনছেন দর্শকের কণ্ঠে। সময়ের গল্পে পূজা ক্রুজ যেন হয়ে উঠেছেন নিজের সৃষ্ট স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অভ ন ত র চর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

এক চিলতে রোদ্দুরে...

নাটকের আকাশে উজ্জ্বল এক তারার নাম তানিয়া বৃষ্টি। ২০১৫ সালে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন। একটানা পথচলার দশ বছর পেরিয়ে আজ তিনি এক পরিপক্ব শিল্পী। এই এক দশকে তাঁর অভিনয়ের পরিধি ছুঁয়েছে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র– নরম-কোমল প্রেমিকা, প্রতিবাদী নারী, প্রান্তিক জনপদের নারী, পরিবারের দায়িত্বশীল কন্যা কিংবা ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের গল্প বলা এক মানুষ। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি নিজেকে ভেঙে গড়েছেন, প্রতিবার যেন নতুন এক তানিয়া বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যায়।

তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়ে একটি অনাড়ম্বর সৌন্দর্য আছে, যা সহজে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর হাসি যেমন মিষ্টি, তেমনি চোখের ভাষায় খেলা করে এক অনুচ্চারিত বেদনা। অভিনয়ের ভেতরে যে আত্মনিবেদন, তা হয়তো খুব বেশি উচ্চকিত নয়, তবে গভীর। কখনও কখনও ক্যামেরার সামান্য এক দৃষ্টি বিনিময়েই বোঝা যায় দৃশ্যের ভেতরে তাঁর অনুরণন।

ঈদ মানেই উৎসব, আর সে উৎসবে তানিয়া বৃষ্টির নাটক যেন দর্শকের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। গত ঈদেও তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ‘তাসের ঘর’, ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসা অন্তহীন’, ‘পাষাণী’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ ও ‘ক্যাফেতে ভালোবাসা’– এই নাটকগুলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচার হয়েছে ইউটিউব ও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে। প্রতিটি নাটকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন। একটি নারীর মনের প্রতিটি স্তর যেন খুলে ধরেছেন তিনি অভিনয়ের পরতে পরতে।

এই জনপ্রিয়তার পথে কেবল ফুল বিছানো ছিল না। কিছু কাজ হয়তো তাঁকেও তৃপ্ত করেনি, কিছু চিত্রনাট্যে হয়তো গভীরতা ছিল না, তবু তিনি বলছেন, এখনকার দিনে গল্প বাছাইয়ে তিনি অনেক বেশি সচেতন। তাঁর কথায়, ‘গল্পের প্রতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি মনোযোগী আমি। এখন মনে হয়, নিজেকে বারবার ভাঙার মতো চরিত্রই আমাকে টানে। শুধু ক্যামেরায় মুখ দেখানোর জন্য কাজ করতে রাজি নই। এখন যেকোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্পটা ভালো হওয়া জরুরি মনে করি। কারণ দর্শক গল্পটাই আগে খোঁজেন। এরপর চরিত্রে নিজের অভিনয় করার সুযোগটা কেমন আছে তাও ভেবে দেখি।’ এই আত্মঅনুসন্ধানী মনোভাবই তাঁকে করে তুলছে আরও পরিণত, আরও আবেগপ্রবণ শিল্পী।

শুধু কাজের মাধ্যমে নয়, তানিয়া বৃষ্টি প্রায়ই থাকেন আলোচনায় ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও। প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক সবকিছুতে থাকে ভক্তদের কৌতূহল। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আপাতত ব্যক্তিগত জীবনের এসব পরিকল্পনা থেকে দূরে তিনি। বর্তমানে নিজের সব মনোযোগ অভিনয়ে, নিজেকে আরও শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলায়।

বরাবরই নাটকের ছোটপর্দা থেকে সিনেমার বড়পর্দার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পেয়ে যান আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’ ছবিতে। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেলেও নিয়মিত হননি বড়পর্দায়। ছোটপর্দাকে ঘিরে যাঁর স্বপ্ন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। 

২০১২ সালে ‘ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল’ দ্বিতীয় রানারআপের মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন তানিয়া বৃষ্টি। এরপরই রচিত হয় শুধুই তাঁর এগিয়ে চলার গল্প। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দর্শক আমাকে এশা নামে ডাকছেন, এখানেই কাজের সার্থকতা: পূজা ক্রুজ
  • পরিদের জন্য একটি দিন
  • জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে কঠিন রোগের লক্ষণ
  • রকি ফ্রম তেজকুনিপাড়া
  • ব্যান্ড অ্যাবা’র গল্প নিয়ে বই
  • প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা তানিয়া বৃষ্টির
  • পেট খারাপের ঝুঁকি কমাতে বর্ষায় এড়াবেন যেসব খাবার
  • এক চিলতে রোদ্দুরে...