দর্শক আমাকে এশা নামে ডাকছে, এখানেই কাজের সার্থকতা: পূজা
Published: 21st, June 2025 GMT
শুধু একটি চরিত্র নয়, এশা যেন হয়ে উঠেছে তার দ্বিতীয় সত্তা। সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করে অভিনেত্রী পূজা ক্রুজ শুধু সিনেমায় নয়, দর্শকের মনেও গেঁথে দিয়েছেন নিজের নাম।
ঈদুল আজহায় সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে হলে হলে ঘুরছেন তিনি। নিজের চরিত্রটি দর্শকরা কতটা গ্রহণ করেন সেটি দেখতে এই ঘোরাঘুরি তাঁর। পূজা বলেন, ‘‘সিনেমাটি নিয়ে নিয়মিতই হল ভিজিটে গিয়েছি। দারুণ দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক মেয়ে অডিয়েন্স আমার কাছে এসে বলে, এশা আপু আমার নাম এশা। তাই ‘এশা মার্ডার’ দেখতে এসেছি।’’
পূজা আরও বলেন, ‘সিনেমায় আমার চরিত্রের নাম এশা। আমার মনে হয়েছিল এশা নামের মেয়েদের ছবিটি টানবে। এ রকম যে ঘটবে ভাবিনি। যখন আমাকে এসে কয়েকজন বললেন তখনকার অনুভূতিটা নিঃসন্দেহে ভালো লাগার। আমাকেও অনেকে এশা নামে ডাকছেন। এখানেই কাজের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।’
ছোটবেলা থেকে তাঁর মধ্যে ছিল এক ধরনের ‘নায়িকা নায়িকা’ অনুভূতি। সেটি নাচে, গানে, চলনে, বলনে–সবখানেই। মঞ্চে নাচছেন আর দর্শকেরা অপেক্ষা করছেন কখন তিনি আসবেন, আবার কখন নাচ শেষ হবে–এ যেন তাঁর জীবনের প্রথম স্টারডম। কখনও স্কুলের অনুষ্ঠানে, কখনও নজরুল একাডেমির সাপ্তাহিক আয়োজনে একটি গানে নাচলে পরদিন রাস্তায় সেই গান গাইতে গাইতে পাড়ার মানুষ পেছনে পেছনে হাঁটত। শিশুকণ্ঠে তখনই যেন উচ্চারিত হতো, ‘তুই একদিন নায়িকা হবি!’
সে স্বপ্নকে হৃদয়ে বেঁধে নিয়েই এগিয়ে গেছেন পূজা। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে থাকা, মোস্ট কনফিডেন্ট খেতাব জয়, র্যাম্প মডেলিংয়ে নিজেকে গড়ে তোলা–সব ছিল তাঁর প্রস্তুতির পর্ব। তবে নাটকে নাম লেখাননি, কারণ শুরু থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল রুপালি পর্দা। ‘সিনেমা করতেই চাইছিলাম’, বলেন তিনি অকপটে।
তাঁর এই জেদ এবং প্রস্তুতির ফলাফল আজ দর্শক দেখছেন ‘এশা মার্ডার’-এ। পূজা জানালেন, ছবিটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং-এ নিয়েছেন ছয় মাসের প্রশিক্ষণ। অভিনয় করেছেন থিয়েটারে ‘মলুয়া’ চরিত্রে। পরিচালক সানী সানোয়ারের তত্ত্বাবধানে নিয়েছেন দু-তিন মাসের কর্মশালা।
‘এশা’ চরিত্রটি নিয়ে পূজা বললেন, ‘চরিত্রটি পুরোপুরি আমার বিপরীত। আমি চঞ্চল, আড্ডাবাজ, প্রাণবন্ত। কিন্তু এশা একেবারে শান্ত, চুপচাপ, সহজ-সরল। তবে একটা দিক মিলেছে, আমরা দুজনেই স্পষ্টবাদী।’
‘শীতের রাত, রক্তমাখা দৃশ্য, কস্টিউমের অস্বস্তি। সবকিছুকে পেছনে রেখে তিনি যে নিষ্ঠা আর আত্মনিবেদন নিয়ে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বোঝা যায় সিনেমা হলে ঢুকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখলে। ‘অনেক মেয়ে দর্শক আমার কাছে এসে বলেছেন, তাদের নামও এশা। তাই তারা ছবিটি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ এখন আমাকে এশা বলে ডাকছেন। এই অনুভবটাই তো শিল্পের সার্থকতা,’ বলেন তিনি হাসতে হাসতে।
ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। পূজার কণ্ঠে বাঁধনের প্রতি শ্রদ্ধা স্পষ্ট– ‘তিনি শুধু সিনিয়র নন, দারুণ আন্তরিকও। আমরা শুটিংয়ে যেমন পাশে পেয়েছি, ইন্টারভিউতেও তিনি আমাকে প্রশংসা করেছেন। এতে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।’
পড়াশোনায়ও পূজা ছিলেন নিবেদিত। টঙ্গীর নোয়াগাঁও স্কুল, এরপর হলি ক্রস কলেজ, শেষে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন। পরিবারের একমাত্র বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব ছিল। তাঁর বাবা-মায়ের ভালোবাসা এবং ছোট দুই বোনের সাপোর্ট তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে।
চলচ্চিত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট, পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে চান তিনি। নাচ, গান, মারপিট-সবই থাকবে সে সিনেমায়।
পূজার শখের তালিকাও খুব সুন্দর। তিনি ভালোবাসেন ভ্রমণ, রান্না আর খাওয়ানো। গরুর মাংস আর ডিমের দোপেঁয়াজার প্রতি তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। বন্ধুদের কাছেও তিনি ‘রাঁধুনি’ নামে পরিচিত।
সবশেষে, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভিনেত্রী না হলে কী হতেন–তিনি বলেন, ‘আর কিছু ভাবিনি কোনোদিন। এটিই তো স্বপ্ন ছিল।’
এ স্বপ্ন যে ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে, তার প্রমাণ ‘এশা মার্ডার’। সেই ছোট্ট মেয়েটি, যে স্কুলে নাচত আর সবাই অপেক্ষা করত তাঁর জন্য, সে এখন সিনেমা হলে নিজের নামের ডাক শুনছেন দর্শকের কণ্ঠে। সময়ের গল্পে পূজা ক্রুজ যেন হয়ে উঠেছেন নিজের সৃষ্ট স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে এ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আপ বাংলাদেশের মুখ্য সংগঠক রাফে সালমান রিফাত।
ছাত্রশক্তি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, শিবির তাদের কীভাবে অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা করেছিল, ২০১৮ সালের দুটি আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকা, জুলাই অভ্যুত্থানের শিবিরের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ওই পোস্টে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঐতিহাসিক জুলাইয়ের কারণে আমরা একটি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী: ঢাবি উপাচার্য
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
তবে রিফাতের পোস্টের কিছুক্ষণ পরই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন আব্দুল কাদের। তাদের ফেসবুক পোস্টটি দুটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি, সাদিক কায়েম সেক্রেটারি। ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের কয়েকদিন আগে আখতার আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করি, কী বিষয়? বলে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারোর রাজনীতি নাই, নতুন একটা সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।”
তিনি বলেন, “তার মাস দুয়েক আগেই ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়। আসিফের নেতৃত্বে কমিটির সবাই একযোগে পদত্যাগ করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ এনে। তারপর পেইজের নাম বদলানো সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঁদা ছোড়াছুড়িও করে কেউ কেউ। যাইহোক, আমাদের সাথে দেখা করতে আসে আখতার, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ আর আহনাফ সাঈদ। হাতিরপুলের এক রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। আমাদের তরফে ছিলাম আমি আর সাদিক। তখনও সম্ভবত ছাত্রশক্তির নাম ফাইনাল হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রায় ৩ ঘণ্টা সবকিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রথমে আখতার খুব সংক্ষিপ্ত একটা ব্রিফিং দেয়। বুঝলাম যে, দলনেতা আখতার। এরপর আমি প্রশ্ন করা শুরু করি। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করেছি নানা বিষয়ে। ফিলোসফি, স্ট্র্যাটেজি, ফিউচার প্ল্যান, গোল, ন্যারেটিভ, সাপোর্ট বেইজ ইত্যাদি প্রায় সবকিছু নিয়ে। থট প্রভোকিং সব আলাপ। আমার সামনেই বসা ছিল আখতার। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আখতার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না। প্রায় সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে মাহফুজ। মাঝেমধ্যে দুই একটা বিষয় অ্যাড করেছে নাহিদ। বাকি দুইজন তথা আসিফ এবং আহনাফ ছিল শুধুই নিরব শ্রোতা।”
বিফাত বলেন, “বুঝলাম, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রায় পুরোটাই মাহফুজের ব্রেইন চাইল্ড। মাহফুজ এখানে মূল আইডিওলোগ। এই উদ্যোগের থট প্রসেস ডেভেলপ করছে সে। বাকিরা এখনও চিন্তাগতভাবে অনেক পেছনে। বিশেষত আখতার ওখানে পিওর সামনের ফেইস মাত্র। যেহেতু, ডাকসুর কারণে তার একটা পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাই তাকে সামনে রেখেই সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির নতুন পথচলা শুরু আরকি। আমাদের কাছ থেকে তারা দোয়া, সমর্থন এবং সার্বিক সহযোগিতা চাইলো। ক্যাম্পাস একটিভিজমের তখনকার যে চিরাচরিত নিয়ম, সেটির অংশ হিসেবেই সম্ভবত।”
“উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির সাংগঠনিকভাবে রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। যেকোনো কর্মসূচীতে মুহুর্তের মধ্যে একটা সংগঠিত শক্তিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে মোবিলাইজ করার ক্যাপাসিটি তৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল শিবিরের। ফলে ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠের কর্মী বাহিনি হিসেবে শিবিরের ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট এবং আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা গ্রহণ একটা ওপেন সিক্রেট বিষয় ছিল সবার মধ্যে। আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা শুধু শিবির একাই করতো তা না, আরও অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল যারা পেছনে থেকে সহযোগিতা করতো নিয়মিত,” যুক্ত করেন রিফাত।
রিফাত আরো বলেন, “সেই আঠারোর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই ব্যাপারটা ছাত্র অধিকার পরিষদের অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার ছিল। জিনিসটা সমন্বয় করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক। যেমন: আঠারো সালের দুইটা আন্দোলনে পেছনের ব্রেইন হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলো শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক শামীম রেজায়ীসহ বেশ কয়েকজন। যাইহোক, আমি ওদেরকে সাহস দিলাম। সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতে বললাম। কয়েকদিন পর ওদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। আখতারকে আহবায়ক, নাহিদকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় বডি এবং আসিফকে আহবায়ক ও বাকেরকে সদস্য সচিব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রস্তুত করা হলো।”
তিনি বলেন, “বিধিবাম হলো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর। মাহফুজ আচানক আখতার, নাহিদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বসলো। আমি তখনও জানতাম না, ঝামেলা কী নিয়ে। পরে কিছু কিছু জিনিস জেনেছি বিভিন্নজনের কাছ থেকে। এরপরে ক্যাম্পাস এক্টিভিজমে বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই গেছে। অক্টোবরেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তা ঠিক করা নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা গেছে। মানব পতাকা তৈরীর কর্মসূচী ফ্লপের কাহিনি হয়েছে। পরের বছর মার্চে প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে হামলা কেন্দ্রিক গণ-ইফতার কর্মসূচী, তারপর জুনে নতুন করে আবার কোটা আন্দোলন।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে সকল সংগঠনকে ছাপিয়ে নতুন ব্যানার তৈরী হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, যেখানে সামনের ফেইস হিসেবে ছাত্রশক্তি, শিবির (যদিও শিবির তখনো প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে ছিল না), ছাত্র ফেডারেশন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ডিবেট সার্কিটের পোলাপান, সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট সবাই ছিল। সেখানে কোনো হায়ারার্কি ছিল না। মূখ্য সমন্বয়ক বলে কেউ ছিল না। কোনো একক নেতৃত্বই ছিল না। সবাই ছিল স্রেফ সমন্বয়ক। শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক ব্যক্তি ছিল, কিন্তু সাদিক কায়েম বা ফরহাদের মতো নেতৃস্থানীয় কেউ ছিল না। এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে পর্যন্তও সমন্বয়ক লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা বলেন, “যদিও প্রথম সমন্বয়ক তালিকা ঘোষিত হয় ৮ জুলাই। পরে ১৭ জুলাই আখতারকে গ্রেফতার করা হয়। আমার ধারণা, আব্দুল কাদেরকেও তখন শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করতো ইন্সটিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথী এবং জনশক্তি হিসেবে। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা আরো বলেন, “ছাত্রশক্তি তার সেই সংক্ষিপ্ত নয় মাসের জার্নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নানাবিধ অ্যাক্টিভিটিতে শিবিরের সাথে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও প্রচ্ছন্ন সমন্বয় করে চলেছে। সেই সমন্বয় ও সম্পর্কে জোয়ার-ভাটা থাকলেও কখনও তা শত্রুতায় রূপ নেয় নাই। কাঁদা ছোড়াছুড়ি তো অনেক দূরের বিষয়। আজকে অবশ্য সবাই পলিটিক্স শিখে গেছে। এমন ভাব যেন তখন তারা শিবিরের কাউকে চিনতো না। নিজের সাবেক দায়িত্বশীল/নেতাকেও কামড় মারতে কারো তর সইছে না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুন্দর।”
পাল্টা জবাবে আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি যখন সত্য প্রকাশ করলাম, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অপকর্ম, অপরাজনীতি তুলে ধরলাম; তখন আমার যুক্তিকে খণ্ডন না করে ওরা প্রচার করতে লাগলো, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, আমি নাকি ছাত্রলীগ, আমি নাকি ডাকসুর জন্য এমন করি! সত্যকে মোকাবিলা করার সৎ সাহস যাদের নাই, তারাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে নিয়ে এসে ঘায়েল করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। গত ৫ বছরের জার্নিতে হাসিনা রেজিমও এইভাবে সত্যকে মোকাবিলা করতো না। তবে যে যা-ই বলেন, সত্য প্রকাশে এক চুলও পিছপা হবো না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই, সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।”
তিনি বলেন, “হাসিনার আমলে হলে থাকতে পারি নাই, বাহিরে দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছি, হামলা-মামলার শিকার হইছি, জেল খাটছি, জেলে যাওয়ার কারণে একাডেমিক ইয়ার লস হইছে। এতোকিছুর পরেও একটা দিনের জন্যও লড়াই থেকে পিছু হটি নাই। সকালে মাইর খাইছি, বিকেলে আবার রাজপথে ফিরে আসছি। আর্থিক অনটনও আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারো কাছে একটাবারের জন্যও হাত পাতি নাই। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নানান কথা ছড়ান। আমার আল্লাহ জানে, আমি আমার আর্থিক এবং উদ্দেশ্যের জায়গায় কতটুকু সৎ। যতদিন আমার ভেতরে সত্য থাকবে; ততদিন আমার বাহিরে ভয় নাই এবং ততোদিন-ই সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে...।”
এর আগে, রবিবার (৩ আগস্ট) আব্দুল কাদের এক ফেসবুক পোস্টে ঢাবি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম ঢাবিতে ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন এমন একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন হামলাকারী নেতাকে শিবির বলে দাবি করেন।
তবে পরবর্তীতে সাদিক কায়েম তার ফেসবুক প্রোফাইলে পাল্টা পোস্টে আব্দুল কাদেরের দাবি করা ছাত্রলীগ নেতারা কখনো শিবির করতেন না বা ৫ আগস্টের পরে শিবিরের কোন কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে হওয়া ব্যক্তিগত আলাপের স্ক্রিনশট আব্দুল কাদের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে নিন্দা জানান তিনি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী