ইসরায়েলের আছে প্রযুক্তির সক্ষমতা, দীর্ঘ মেয়াদে শক্তিশালী ইরান
Published: 21st, June 2025 GMT
নবম দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। উভয় পক্ষের পাল্টা-পাল্টি হামলায় হতাহত বাড়ছে। তবে এ সংঘাত দীর্ঘ মেয়াদী হলে ইরানের চেয়ে ইসরায়েল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেছেন, “এই যুদ্ধে ইসরায়েল প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকলেও, ইরানের আরো অনেক শক্তি রয়েছে।”
আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ইরানের পক্ষে পাল্লা ভারী হতে পারে।”
তিনি জানান, সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েল আকাশপথে প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, “ইরান আকারে ইসরায়েলের চেয়ে ৭০ গুণ বড়। ইরানিরা অনেক আঘাত সহ্য করতে পারে, আবার তাদের এমন অস্ত্রও আছে যা ইসরায়েলের ক্ষতি করতে পারে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নেই—তাদের হয় দ্রুত বিজয় নিশ্চিত করতে হবে, নয়তো কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
‘যুদ্ধে জড়ালে ইরানের মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনায় ভয়ংকর আঘাত হানবে’
ওআইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে ইস্তাম্বুলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি আরো বলেন, “আমরা এখন একটি সংকটময় পর্যায়ে আছি। কারণ দুই পক্ষই পুরোপুরি যুদ্ধ ঘোষণা না করলেও অস্ত্র ব্যবহারের মাত্রা ও গতি বেড়েই চলেছে।”
সেলুম উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে চালানো হামলায় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ভেঙে’ দেওয়া সম্ভব। আর ইরান এখন সেই একই কৌশল অবলম্বন করছে।
তিনি বলেন, “যদি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সেটা ইসরায়েলের জন্য ভালো হবে না। অধিকাংশ ইসরায়েলি বাংকারে থাকছেন। এ সংঘাতে তাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ইরান প্রায় ৪০ বছর ধরে ‘জরুরি অবস্থা’র মধ্যেই রয়েছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর থেকে দেশটি অবরোধ ও ভিন্নধর্মী অর্থনীতি নিয়ে টিকে আছে—যা তাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রেখেছে।
সেলুম বলেন, “আমরা এমন দুটি দেশের মুখোমুখি লড়াই দেখছি, যাদের কাঠামো, প্রস্তুতি এবং বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।”
গত ১৩ জুন থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে, যার জবাবে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং কয়েশ শ’ আহত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, হামলায় ইরানের নাতানজ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও, ফোরদোর ভারী সুরক্ষিত স্থাপনাটির তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ইসরায়েল।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশাল ব্ল্যাকহোলে বিস্ময়কর আলোকচ্ছটার খোঁজ
প্রায় ১০ লাখ কোটি সূর্যের আলোর সমান শক্তিশালী এক ব্ল্যাকহোল ফ্লেয়ার বা কৃষ্ণগহ্বর আলোকচ্ছটার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি সবচেয়ে বড় আলোকচ্ছটা। নতুন পর্যবেক্ষণ করা ব্ল্যাকহোল ফ্লেয়ারকে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বৃহৎ ও সবচেয়ে দূরবর্তী বলা হচ্ছে। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে এক হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আলোকচ্ছটার শক্তি প্রায় ১০ লাখ কোটি সূর্যের সমান।
একটি অতিভারী ব্ল্যাকহোল বৃহৎ কোনো নক্ষত্রকে গিলে ফেলছে বলে এই আলোকচ্ছটা তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাথিউ গ্রাহাম বলেন, ‘এই ব্ল্যাকহোল ফ্লেয়ারটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে দূরবর্তী। আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি ভরের একটি বিশাল নক্ষত্র অতিভারী ব্ল্যাকহোলের খুব কাছাকাছি চলে আসছে বলে এমন ফ্লেয়ার তৈরি হয়েছে। ব্ল্যাকহোল নক্ষত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে বলে বিশাল পরিমাণ শক্তি নির্গত হচ্ছে।’ বিজ্ঞানী গ্রাহামের মতে, সেখানে বিশাল বিস্ফোরণের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের কারণে এত বিশাল ব্ল্যাকহোল ফ্লেয়ার তৈরি হয়েছে। ব্ল্যাকহোল নিয়মিতভাবে নিকটবর্তী পদার্থকে গ্রাস করে থাকলেও এমন বিশাল মাত্রার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এমন বিশাল ফ্লেয়ার আগে যা দেখা গেছে, তার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। ফ্লেয়ারটি সর্বোচ্চ শিখরে থাকার সময় এখন পর্যন্ত দেখা যেকোনো ব্ল্যাকহোল ফ্লেয়ারের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। দুটি মহাজাগতিক বস্তুর বিশাল আকারের কারণে এমনটা হচ্ছে। সূর্য থেকে কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রকে অতিভারী ব্ল্যাকহোল গ্রাস করেছে। ব্ল্যাকহোলের ভর সূর্যের ভরের ৫০০ মিলিয়ন গুণ বেশি বলা যায়। সাত বছরের বেশি আগে শুরু হওয়া এই বিস্ফোরণ সম্ভবত এখনো চলমান।
প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালে তিনটি স্থলভিত্তিক টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জরিপের সময় ফ্লেয়ারের খোঁজ মেলে। তখন এটিকে ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০২৩ সালে হাওয়াইয়ের ডব্লিউ এম কেক অবজারভেটরি পর্যবেক্ষণ শুরু করে। বিজ্ঞানী গ্রাহাম বলেন, ‘এই আবিষ্কার ব্ল্যাকহোলের আচরণ সম্পর্কে নতুন তথ্য দিচ্ছে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে মহাবিশ্বের বেশির ভাগ গ্যালাক্সির মাঝখানে একটি অতিভারী ব্ল্যাকহোল রয়েছে। এখন আমরা আরও গতিশীল পরিবেশ দেখছি। সুপারম্যাসিভ ধরনের ব্ল্যাকহোলকে অ্যাকটিভ গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস বলা হচ্ছে। এটিকে জে২২৪৫+৩৭৪৩ নামে নামকরণ করা হয়েছে।’
সূত্র: এনডিটিভি