ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্ক
Published: 21st, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নবম দিনে প্রবেশ প্রবেশ করেছে। গতকাল শনিবারও ইরান-ইসরায়েল দু’দেশই পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়। ইসরায়েলি বাহিনী তেহরান, খোজেস্তান প্রদেশসহ ও ইরানের কয়েকটি শহরে হামলা করেছে। ইরানও নতুন করে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। সংঘাতে উভয়পক্ষে বেসামরিক নাগরিক হতাহত হচ্ছে প্রতিদিন। ইসরায়েল টার্গেট করে ইরানের সামরিক কমান্ডারদের হত্যা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের কর্মকর্তারা। সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় সংঘাত দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কায় উপসাগরীয় দেশগুলো।
সংঘাত বেশিদিন চলতে থাকলে এই অঞ্চল ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়বে অঞ্চলটি। কূটনীতিকরা হুশিয়ারি দিয়েছেন, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সংঘাত থামানো না গেলে, এই অঞ্চলে দীর্ঘ বিপর্যয় নেমে আসবে। ইসরায়েলের সামরিক প্রধান ইয়াল জামির সতর্ক করে দিয়েছেন, তার দেশকে ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ। তিনি বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত উপসাগরীয় দেশগুলোকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। সংকট যতই দীর্ঘায়িত হবে ততই এই অঞ্চল বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এজন্য দুইপক্ষের উচিত উত্তেজনা হ্রাস করা। তিনি এ ব্যাপারে কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেন।
গারগাশ বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো যে আঞ্চলিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, এই সংঘাত সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফল এখন বহন করছে মধ্যপ্রাচ্য। ওই যুদ্ধের পরও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা নেমে এসেছিল। বর্তমান চলমান সংঘাতে হরমুজ প্রণালী ঝুঁকিতে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে লক্ষ্যবস্তু করে, তাহলে উপসাগরীয় দেশগুলোর সামনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে যাবে। তারা ইরানের পক্ষে যাবে, নাকি ইসরায়েল ও মিত্রদের পক্ষে থাকবে। এই সংঘাত পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে ভূ-রাজনৈতিক বিপদের ঘূর্ণিতে ফেলে দিয়েছে। এই অবস্থায় উপসাগরীয় দেশগুলো সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যাতে নিরাপত্তা, জ্বালানি রপ্তানি এবং বিমান চলাচলসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যায়।
ইরান গতকাল শনিবার ভোরে মধ্য ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের আগ্রাসনে যোগ দেয় তবে তা সবার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে হুশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলকে তিনি আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ কমাতে চাপ দেবেন এমন সম্ভবনা কম। তিনি মনে করেন এই অনুরোধ করা কঠিন। তবে আমরা প্রস্তুত, আমরা ইরানের সাথে কথা বলছি। ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এমন কোনও প্রমাণ নেই’ এই মন্তব্যের জন্য ট্রাম্প মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করছেন। তিনি মনে করেন, তুলশির বক্তব্যটি ভুল। পরে তুলশি তার বক্তব্য পরিবর্তন করে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পেজেশকিয়ান তাকে আশ্বস্ত করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে কাজ করছে না।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার ভেতরে তেজস্ক্রিয় এবং রাসায়নিক দূষণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। তবে বর্তমানে সাইটের বাইরে তেজস্ক্রিয়তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি কারও থাকবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ক পদক ষ প ক টন ত ক বল ছ ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের ‘সন্ত্রাসী’ বললেন ম্যাজিস্ট্রেট
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সময় তিনি এই কথা বলেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে মহালয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে মহালয়া উপলক্ষে শতাধিক যাত্রী বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ৭১ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। রবিবার নৌকাডুবির তিন বছর পূর্তি ও বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। সে সময় করতোয়া নদীর ঘাটে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমান সাংবাদিকদের নদী পার হতে বাধা দেন। ওই সময়ে নদীতে তিন থেকে চারটি নৌকা চলাচল করছিল এবং নৌকায় মোটরসাইকেলও পারাপার হচ্ছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা নৌকায় উঠতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলেন, মোটরসাইকেল নেওয়া যাবে না।
তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন– যখন অন্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে পার হচ্ছে, আমরা কেন নিউজের কাজে যেতে পারবো না? এতে তাহমিদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি আল জাজিরা, বিবিসি বাংলা আর আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হন আর যেই সাংবাদিক হন, তাতে আমার যায় আসে না। যেতে পারবেন না।’’ তার এমন আচরণ সাংবাদিকরা ক্যামেরায় ধারণ করলে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে আরো অশালীনভাবে বলেন, ‘‘আপনারা সন্ত্রাসী।’’
শতাধিক লোকের সামনে সাংবাদিকদের এভাবে অপমানিত করার ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি নূর হাসান বলেন, ‘‘আমরা মহালয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করেন। ঘাট একবারে ফাঁকা ছিল এবং অন্য ব্যক্তিদেরও যেতে দেখা যায় মোটরসাইকেল নিয়ে নৌকা পারাপার হতে। ইউএনও নিজেও নৌকায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট পারাপার হচ্ছিলেন। তাহলে সাংবাদিকদের যেতে বাধা কেন?’’
বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি মোশারফ হোসেন বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিক পরিচয় শুনে রেগে গিয়ে বলেন, ‘আল জাজিরার সাংবাদিক হন, আর যেই সাংবাদিক হন, যেতে পারবেন না।’ অন্যরা যেতে পারলে আমরা কেন যেতে পারব না, এ কথা বললে তিনি আমাদের বলেন, ‘আপনারা তো সন্ত্রাসী।’’
এদিকে, ঘটনার পরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সাংবাদিকরা তাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দিতে রাজি হননি। উল্টো সাংবাদিকদের বলেন, “কি পারেন করেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুর রহমানকে ঘাটের কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’’
ঢাকা/নাঈম/রাজীব