বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিল চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, বাহাত্তরের মুজিববাদী মূলনীতি আমরা রাখার পক্ষে না। এ মূলনীতি বাদ দিতে হবে।’

আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আগের অসমাপ্ত আলোচনা সমাপ্তিকরণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শেষে এ কথা বলেন জাবেদ রাসিন।

এনসিপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিল। সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের সঙ্গে গণতন্ত্রকে যুক্ত করে এই চারটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে মূলনীতি হিসেবে। বৈঠকে আলোচনার সময় এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা মতানৈক্য দেখা গেল। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, বাহাত্তরের মুজিববাদী মূলনীতি আমরা রাখার পক্ষে না। এ মূলনীতি বাদ দিতে হবে।’

কিছু রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শিক জায়গা থেকে এই চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে একমত হতে পারেনি বলে জানান জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ‘আমরা সে ক্ষেত্রে বলেছি, আমাদের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট, সে স্পিরিটের বিপরীতে গিয়ে এখানে আলোচনার কোনো মানে হয় না। সুতরাং বাহাত্তরের চার মূলনীতি বাদ দিয়ে তার পরবর্তী বাকি মূলনীতিগুলো সংযোজন করতে হবে।’ তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, বর্তমান যে ব্যবস্থা আছে, সে ব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদটা সীমিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি কত সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুবার শপথ নিতে পারবেন, এই জায়গায় আমরা সীমা নির্ধারণ করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ঐকমত্যের স্বার্থে সবাই সর্বোচ্চ ১০ বছর বলে। সময় নির্ধারণের সবার সঙ্গে আমাদের মতামত ফেক্সিবল (নমনীয়) থাকবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.

বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব হ ত তর র র জন ত ক ঐকমত য আম দ র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধানমন্ত্রিত্ব মেয়াদ, উচ্চকক্ষ ও এনসিসি, ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা চায় বিএনপি

প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তার কাজ কী হবে, এসব বিষয় ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে দলের এ অবস্থানের কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অন্ততপক্ষে এনসিসি ও উচ্চকক্ষের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে একই প্যাকেজে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে এলে সুবিধা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দুই দিন (রাজনৈতিক দলের নেতারা) দলের মধ্যে আলোচনা করে যার যার দলীয় অবস্থান কমিশনের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত আকারে জানাবেন। তারপর আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

এর আগে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে এ দিনের আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে সংবাদ ব্রিফিং করে।

একজন ব্যক্তি কয় মেয়াদে বা কত বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে প্রস্তাব দিয়েছি; কিন্তু এখানে অনেক ব্যাখ্যা আছে। পরপর একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, সেটা ঠিক। পরপর দুই মেয়াদের পরে গ্যাপ দিয়ে যদি একই দল বা জোট ম্যান্ডেট পায়, তখন তারা একই ব্যক্তিকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন। এটাও যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নিজের করা প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি প্রস্তাব করেছিলাম, আমরা কয় মেয়াদ এবং কয় বার—এই বিতর্কে না থেকে সর্বোচ্চ এক ব্যক্তি তাঁর জীবনে কত বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বে বহাল থাকতে পারবেন। তিন মেয়াদে হোক, চার মেয়াদে হোক, সর্বোচ্চ বছর উল্লেখ করতে পারলে, (যেমন:) একজন লোক তাঁর জীবনে এত বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমি নির্দিষ্ট বছর উল্লেখ করিনি, তার কারণ সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে আমার নেই। যদি হাউস একটা মেয়াদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা নিয়ে আমাকে দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘উচ্চকক্ষে প্রোপরশনেট নির্বাচনের কথা বলা আছে। তখন উচ্চকক্ষে একটা সাধারণ বিল পাস করতে গেলে ৫০ শতাংশ সমর্থন লাগবে। সংবিধান সংশোধন করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে। তখন কেউ কোনো দিন দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আইনে নির্ধারণ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং স্থায়িত্বের বিষয়টি জড়িত।’

সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হাউসে যাঁরা আলোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ পঞ্চদশ সংশোধনীতে যেভাবে আছে, সেটার পক্ষে। আমরা স্পষ্টতই বলেছি, এই সংশোধনী হাইকোর্টে যেভাবে চ্যালেঞ্জড হয়েছে, আমরা এর পুরো অংশ বিলুপ্তি চেয়েছি। হাইকোর্টের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কাজেই সেটা সংসদে সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীতে বহাল থাকতে চায় উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সেখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আছে, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। তার সঙ্গে আমরা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং গণতন্ত্রকে যোগ করব।’ এখনো এসব বিষয় চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবগুলো বললাম। যদি জাতীয় ঐকমত্যে না আসা যায়, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে—এমনটি বলা যাচ্ছে না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতি আমাদের কাছে অনেক বেশি আশা করে। আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে সারা দিন আলোচনা করে রাজনীতিবিদেরা একটা জায়গায় না আসতে পারলে সেটা হতাশাব্যঞ্জক হবে। আমি এখনো হতাশা ব্যক্ত করতে চাই না। আমি আহ্বান করব, আমরা যেন এসব বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে পারি। তাহলে রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, আলোচনায় ঐকমত্য হয়নি
  • সংস্কার নিয়ে আর অবহেলা নয়
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত: জোনায়েদ সাকি
  • সরকার ও দলগুলোর সামনে ৪ চ্যালেঞ্জ দেখছেন আলী রীয়াজ
  • প্রধানমন্ত্রিত্ব মেয়াদ, উচ্চকক্ষ ও এনসিসি, ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা চায় বিএনপি
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মেলন শুরু
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে তিনটি দল ছাড়া সবাই একমত: আলী রীয়াজ
  • ১০ বছরের বেশি কারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পক্ষে নয় জামায়াত
  • মৌলিক বিষয়ে দলগুলোর দূরত্ব কমেনি