‘আশা করি ভালো আছেন’ নয়, ই–মেইলের শুরুটা করুন এমনভাবে, যাতে পাঠক পুরোটা পড়ে ফেলেন
Published: 23rd, June 2025 GMT
বাক্যটি কেন গুরুত্ব হারাচ্ছে
ই–মেইল লেখার সময় আমরা প্রায়ই একটা কথা বলি—‘আশা করি ভালো আছেন’ বা ইংরেজিতে লেখি, ‘হোপ ইউ আর ওয়েল’। এই বাক্য লেখা হয় ভদ্রতার খাতিরেই এবং এতে দোষেরও কিছু নেই। কিন্তু এখন এত বেশি ব্যবহার হয় যে কেউ কেউ ই–মেইলের শুরুতে এই বাক্য দেখলে বাকিটা আর পড়েও দেখেন না।
বিশেষ করে ই–মেইলটা যদি এমন কাউকে পাঠান, যাঁর সঙ্গে অনেক দিন পর কথা হচ্ছে, তাহলে তাঁর কাছে এই বাক্য নিতান্তই যান্ত্রিক বা আগ্রহহীন বলেও মনে হতে পারে। অর্থাৎ ই–মেইলে এ ধরনের বাক্য হয়ে গেছে ‘অটো পাইলট’–এর মতো।
মানুষের হাতে এখন সময় খুব কম। তাই ই–মেইলটা কারও নজরে আনতে চাইলে শুরুতেই এমন কিছু বলতে হবে, যাতে পাঠক একটু থামেন, মনোযোগ দেন।
আরও কিছু ভুলভাল শুরুর ধরনযান্ত্রিক বাক্য: আমরা অনেক সময় ই–মেইলের শুরুটা এমন করি, যেটা পড়লে মনে হয় যেন কোনো যন্ত্র কপি–পেস্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ ওই একই বাক্য আপনি অনায়াসে শতজনকে পাঠাতে পারেন। আদতে এ ধরনের বাক্য মনোযোগ আকর্ষণ করে না।
হঠাৎ সাহায্য কামনা বা কিছু চাওয়া: কারও সঙ্গে আগে কোনো দিন কথা হয়নি, এমন অবস্থায় সরাসরি সাহায্য কামনা করলে বা কিছু চাইলে সেটা হুট করে অচেনা কারও কাছে টাকা ধার চাওয়ার মতো ব্যাপার।
ফাঁপা শুভকামনা: ‘হ্যাপি মানডে’ বা ‘আশা করি সপ্তাহটা ভালো যাচ্ছে’—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কথা অহেতুক। পাঠকও বুঝে ফেলে যে এসব বলার জন্য বলা। তার চেয়ে বরং যাঁকে লিখছেন, তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে আরও নির্দিষ্ট কিছু যোগ করুন। যেমন কেউ যদি ছুটির দিনে নিয়মিত মাছ ধরতে যান, তাঁকে লিখুন, ‘আশা করি, ছুটির দিনটা মাছ ধরে ভালোই কাটিয়েছেন।’
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি কি আমাদের চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, অবাক করা তথ্য দিল এমআইটির গবেষণা১৯ জুন ২০২৫তাহলে ই–মেইলের শুরুটা কেমন হওয়া উচিতখুব সহজ কথা দিয়ে। মানে আপনি যেভাবে বাস্তবে কথা বলেন, সেভাবেই শুরু করুন। সেটা হতে পারে আগের কোনো আলাপের প্রসঙ্গ টেনে, কিংবা একটু আন্তরিক ভঙ্গিতে। কিছু উদাহরণ দেখুন—
আগের কিছু মনে করিয়ে দিন: যাঁকে ই–মেইল করছেন, তাঁর সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকলে (সেটা অল্প দিনের হলেও), এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। এর আগে আপনাদের কথোপকথন যেখানে শেষ হয়েছিল, সেটার সূত্র ধরিয়ে দিলে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
যেমন—
‘গত মাসে অমুক ইভেন্টে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কথা বলে ভালো লেগেছিল।’
‘গতকালের মিটিংয়ে আপনার একটা আইডিয়া খুব মনে ধরেছে।’
ইতিবাচকভাবে শুরু করুন: ইতিবাচক শব্দ কিংবা বাক্য দিয়ে শুরু করলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহী কিংবা আগ্রহী হন। আর আপনি যখন শুরুতেই উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কাজের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তখন বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তিটিও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
যেমন—
‘এই প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। একটা আপডেট ছিল।’
‘গত পরশু আমাদের যে আলাপ হলো, সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। একটা আইডিয়া শেয়ার করতে চাই।’
ই–মেইলের শুরুতেই যদি মনোযোগ পাওয়া না যায়, বাকিটা কেউ পড়বেই না। তাই যেভাবে আমরা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি, সেভাবেই শুরু করুন।সময়ের কথা মাথায় রাখুন: যাঁকে ই–মেইল লিখছেন, তিনি হয়তো ভীষণ ব্যস্ত কিংবা তাঁকে ই–মেইল করতে হয়তো বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যস্ততা কিংবা আপনার দেরি করার প্রসঙ্গটি আসতেই পারে, তবে এতেও বাহুল্য বর্জন করুন।
যেমন—
‘জানি, এখন আপনার অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে, তাই ভাবলাম, এই সুযোগটা যেন চোখ এড়িয়ে না যায়।’
‘আগামী সপ্তাহের ডেডলাইনের আপনাকে বিষয়টা একটু মনে করিয়ে দিলাম, যাতে সব ঠিকঠাক থাকে।’
তাঁদের প্রসঙ্গেই বলুন: ই–মেইলে এ ধরনের শুরু তখনই করবেন, যখন সেটা হবে জনসংযোগ, যোগাযোগরক্ষা বা প্রচার–প্রচারণার খাতিরে।
যেমন—
‘আপনার সাম্প্রতিক প্রজেক্টটা দারুণ হয়েছে। কিছু বিষয় তো আমার খুব ভালো লেগেছে।’
‘লিংকডইনে আপনার অমুক বিষয়ক পোস্টটা খুব ভালো লাগল, তাই ভাবলাম, ধন্যবাদ জানাই।’
সূত্র: এমএসএন
আরও পড়ুনগুগলে যেসব বিষয় কখনো সার্চ করবেন না ১৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
কূটনীতির নামে ‘প্রতারণা’র কঠোর জবাব দেবে ইরান
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছে তেহরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টা মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই প্রণালি বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রধান রুটগুলোর একটি। খবর সিএনএনের।
খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও কট্টরপন্থি কেহান পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হোসেইন শরিয়তমাদারি আগে নিজেকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতার ‘প্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
টেলিগ্রামে কেহান পত্রিকার একটি বার্তায় শরিয়তমাদারিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এখন আমাদের পালা। এক মুহূর্ত দেরি না করে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের উচিত বাহরাইনে অবস্থিত আমেরিকার নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো। একই সঙ্গে হরমুজ প্রণালিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মূলত হরমুজ প্রণালি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ, যেখান দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জ্বালানি তেল রপ্তানি হয়। সেটি বন্ধ হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ বিপর্যস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে এখনও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যটি আবারও শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়ায়, তাহলে তা হবে তাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য।
ওই ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা ইরানের যে কোনো ক্ষতির চেয়ে বহু গুণ বেশি হবে।’
কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র: আরাগচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নয়। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে আরাগচিকে প্রশ্ন করা হয়, সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার পর ইরান আবার কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নটাই অবান্তর। আমরা তো আলোচনার মাঝখানেই ছিলাম, যখন ইসরায়েল হামলা চালাল। আমরা তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। আবার দু’দিন আগেই জেনেভায় ইউরোপীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আর এই মুহূর্তেই আমেরিকানরাই সামরিক হামলা চালিয়ে পুরো আলোচনা ভণ্ডুল করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি ছিল কূটনীতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। ইরান নয়, যুক্তরাষ্ট্রই প্রমাণ করেছে তারা কূটনীতির লোক নয়। তারা কেবল হুমকি ও শক্তির ভাষা বোঝে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান ও মার্কিন জনগণ উভয়ের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আরাগচি। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ানো বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি উল্টো আমাদের (ইরান) সঙ্গে কূটনীতির নামে প্রতারণা করেছেন এবং একজন ওয়ান্টেড যুদ্ধাপরাধীর (নেতানিয়াহু) মিশনে জড়িয়ে নিজ দেশের ভোটারদেরও ঠকিয়েছেন।’
শেষে আরাগচি বলেন, ‘ইরানি জনগণ সরকারকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ। আমরা যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াব।’ তিনি তাঁর দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর হুমকি
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) বলেছে, তারা ওয়াশিংটনকে এমনভাবে পাল্টা জবাব দেবে, তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হবে। তারা দাবি করেছে, আমেরিকার ওই হামলা প্রকাশ্য অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
একটি বিবৃতিতে এই বাহিনীটি বলেছে, সন্ত্রাসী আমেরিকা কর্তৃক আজকের আগ্রাসী আচরণ ইরানকে বিকল্প পথে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ইরানকে বৈধ আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবে অন্যদের চিন্তা ও আক্রমণকারীদের হিসাবের বাইরে বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এই ভূমিতে হামলার এমন জবাব দেওয়া হবে, যাতে তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হবে। মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটি ও সেখানকার সদস্যরা ‘নাজুক’ অবস্থায় রয়েছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের সামরিক পদক্ষেপ আপাতত শেষ হয়েছে এবং তারা তেহরানের শাসন ব্যবস্থা উৎখাত করতে চায় না। এমন বার্তা হয়তো ইরানকে আরও সংযত প্রতিক্রিয়া জানাতে উৎসাহিত করতে পারে।
এখন ইরান চাইলে উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ অথবা ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে পারে। এ পদক্ষেপ উপসাগর থেকে তেলের প্রবাহ ব্যাহত করতে পারে এবং তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। আবার তারা আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে এমনভাবে আক্রমণ করা পারে, যাতে উল্লেখযোগ্য হতাহতের ঘটনা না ঘটে।
এখানে লক্ষণীয়, ট্রাম্প আবারও হুমকি দিয়েছেন, ইরান যদি প্রতিশোধ নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী জবাব দেবে। যে কারণে এখন মধ্যপ্রাচ্যে একটাই আলোচনা, ইরানে মার্কিন হামলা কি এই সংঘাতের সমাপ্তির সূচনা, নাকি যুদ্ধের আরও রক্তাক্ত পর্বের অপেক্ষা।