বিজয় সরণিতে হবে জুলাই শহীদদের ভাস্কর্য
Published: 28th, June 2025 GMT
রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ের ‘মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণ’–এর ম্যুরাল–সংবলিত সাতটি দেয়ালও ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে দেয়ালগুলো ভাঙার কাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতটি দেয়ালই ভেঙে ফেলা অবস্থায় দেখা গেছে।
মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণের সাতটি দেয়ালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের দিন পর্যন্ত বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় চিত্রিত করা হয়েছিল। এর আগে গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনেই ওই প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণে একটি এক্সকাভেটর রাখা। ওই যন্ত্র দিয়েই প্রাঙ্গণের ম্যুরাল–সংবলিত সাতটি দেয়াল ভাঙা হয়েছে। প্রাঙ্গণের এক পাশে খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ, যেগুলো দেয়ালগুলোর কংক্রিটের টুকরা। অন্য পাশে মাটি দিয়ে সমান করা হচ্ছে। স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহৃত লোহার রডগুলোও এলোমেলো হয়ে রয়েছে। প্রাঙ্গণের চারপাশ ঘিরে রাখা হয়েছে চট দিয়ে।
ওই সময় সেখানে তিনজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। তাঁদের একজন জানান, শুক্রবার থেকে তিনি সেখানে কাজ করছেন। ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। এখন এসব ট্রাকে করে নেওয়া হবে। তবে ওই সময় ঢাকা উত্তর সিটির কোনো প্রতিনিধিকে সেখানে দেখা যায়নি।
এদিকে গত শুক্রবার সকালে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ ভাঙার কাজ শুরু হলে সেই ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এসব মাধ্যমে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এমন সংবাদও ছড়িয়ে পড়ে যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মৃতি অম্লান রাখতে বিজয় সরণিতে গণমিনার নির্মাণ করতে যাচ্ছে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি। এ জন্যই মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের ওই স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে জরুরি একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি।
গণমিনার কমিটি জানিয়েছে, ১৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘নাগরিক উদ্যোগে’ প্রস্তাবিত গণমিনারের সঙ্গে বিজয় সরণিতে অবস্থিত মৃত্যুঞ্জয়ী চত্বরের কোনো যোগসূত্র নেই। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় প্রস্তাবিত গণমিনার–সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশের আগে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
নির্মাণ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিজয় সরণিতে কমিটির জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ দেবে। আপাতত পরিকল্পনা আছে—প্রথম ধাপে বিজয় সরণি মোড়ের পশ্চিম দিকে একটি গণমিনার তৈরি করা হবে। তবে এখন যে মৃত্যুঞ্জয় ভেঙে ফেলা হয়েছে, ওটার সঙ্গে এ গণমিনার কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষই জায়গাটিতে নতুনভাবে কিছু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গণমিনারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, ‘এ জনপদে আড়াই শ বছরের প্রতিরোধের যে ইতিহাস ও গল্প, আর সেখানে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের স্মরণ করে ওই গণমিনার নির্মাণ করা হবে। যদিও জুলাই শহীদদের নামগুলো সেখানে খোদাই করা থাকবে। এটা হবে প্রতিরোধ স্মারকের মতো। বায়ান্ন ও একাত্তরে এ জনপদের মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা (গণমিনার কমিটি) কোনোভাবে তাঁদের অবমাননা করে অন্য কিছু একটা রিপ্লেস করতে চাইতে পারি না।’
মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণের ম্যুরাল–সংবলিত দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানে জুলাই শহীদদের স্মরণে ভাস্কর্য ও উন্মুক্ত স্থান তৈরি করতে যাচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত বুধবার (২৫ জুন) ঢাকা উত্তর সিটির সপ্তম করপোরেশন সভায় (বোর্ড সভায়) অনুমোদন করা হয়েছে। সভার ৬ নম্বর আলোচ্যসূচিতে এ ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ছিল। এটি ছাড়াও জুলাই শহীদদের স্মরণে আরও সাতটি প্রকল্প বা স্কিম হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে বিভিন্ন মঞ্চ, গণমিনার, দেয়ালচিত্র অঙ্কন, আন্দোলনের চিত্রপ্রদর্শনী ও তোরণ নির্মাণের বিষয় রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভাস্কর্যের প্রস্তাবিত নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। প্রস্তাবে বিজয়ের পতাকা নিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছেন, এমন ভাস্কর্যের নকশা করা হয়েছে। নকশা চূড়ান্ত হলে এ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণটাঙ্গন কিছু না। ওটা বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ছিল, ওটা পরিষ্কার করেছি। কোনো পরিকল্পনা শুরু করিনি। ভাইঙ্গা পরিষ্কার করেছি, জানাবনে কী করব। অর্ধেক ভাঙা ছিল না? পরিষ্কার-টরিষ্কার করতেছি। খুব দ্রুতই আমরা সিদ্ধান্তে যাব কী করা যায়।’
বোর্ড সভায় ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘কিছু একটা হবে। বোর্ড মিটিংয়ে ওভারঅল কাঠামোগতভাবে একটা জিনিস পাস করিয়ে রাখছি আমরা এই এই কাজ করব। আমরা অনেকগুলো কাজ করব। এগুলো এখন সাজাচ্ছি, রেডি করছি, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। কিন্তু এখানে জঞ্জাল–টঞ্জাল ছিল, অর্ধেক ভাঙা, একটি পুলিশবক্সও ভাঙা, এগুলো পরিষ্কার করে আগে ক্লিয়ার করছি।’
২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর বিজয় সরণিতে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ নামে চত্বরটি উদ্বোধন করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ম্যুরাল–সংবলিত সাতটি দেয়ালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-৬০ পর্যন্ত জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক উত্থান, ছয় দফা আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের ঘটনাগুলো চিত্রিত করা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম য র ল স বল ত প র ঙ গণ র ভ স কর য প রস ত ব গণম ন র কম ট র প রক শ র ব জয় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রায়ের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত: রিজওয়ানা হাসান
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার সকালে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ‘দ্য সোল অব জুট’ নামে এক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।