নববর্ষে ড্রোন শো পরিচালনাকারী চীনা কোম্পানির ভ্যাট মওকুফ
Published: 2nd, July 2025 GMT
এ বছরের পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের দিনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ড্রোন শো হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় শত শত ড্রোন ব্যবহার করে আকাশে নানা ধরনের ড্রোন চিত্র ও রঙিন লেজার রশ্মি তুলে ধরা হয়েছিল। ঢাকার আকাশে এত বড় ড্রোন শো আর দেখা যায়নি।
চীনের সহায়তায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই ড্রোন শোয়ের আয়োজন করে। ড্রোন শো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিপিএ থিয়েটার্স ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে এই শোয়ের অর্থ পরিশোধের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট মওকুফ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূসক বিভাগ। গত ৩০ জুন এক বিশেষ আদেশে এই মওকুফ করা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ওই ড্রোন শোয়ের জন্য প্রতিষ্ঠান সিপিএ থিয়েটার্স ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে ৫ লাখ ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ সরকার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ চীন সরকারের কাছে অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
এনবিআরের ওই বিশেষ আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত ড্রোন শোয়ের প্রয়োজনীয় অর্থ চীন সরকারের কাছে অনুদান হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে ড্রোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেনি এবং তাদের কোনো মুনাফা অর্জিত হয়নি। ওই অর্থ ড্রোন ভাড়া এবং আনা–নেওয়ার জন্য খরচ হয়েছে। তাই পরিশোধিত অর্থের ওপর ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে।
গত পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বা নববর্ষের এই ড্রোন শোতে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রতিকৃতির মাধ্যমে। উঠে আসে ‘২৪-এর বীর’, পায়রার খাঁচা ভাঙা থিম, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা এবং বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের শুভেচ্ছাবার্তা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পয়লা অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ উদ্যাপন করবে ডাকসু
পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়ে এলেও এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই এ উৎসব উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। আজ শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দিনব্যাপী নববর্ষের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ।
চারুকলায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে নববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। অনুষ্ঠানটি চারটি পর্বে সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। প্রথম পর্বে হবে রংতুলিতে নবান্ন। দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই ও নবান্ন থিমে ছবি আঁকা হবে। মোট ১৫ জন শিল্পী এই পর্বে ছবি আঁকবেন। পর্বটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। দ্বিতীয় পর্বে হবে আদি নববর্ষ আনন্দযাত্রা। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব এটি। চারুকলার সহযোগিতায় আনন্দযাত্রার জন্য তিনটি মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে। একটি মোটিফ জুলাই নিয়ে। একটি মোটিফ জেলেজীবন নিয়ে এবং অন্যটি কৃষিজীবন নিয়ে। এ ছাড়া গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপনা থাকবে এতে। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময়। বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্য বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে এই পর্বে থাকবে আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীত ও পালাগান।
এ উদ্যাপনের কারণ তুলে ধরে মুসাদ্দিক বলেন, দেশজ সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নববর্ষ উদ্যাপন, যা বর্তমানে পয়লা বৈশাখ হলেও এককালে ছিল পয়লা অগ্রহায়ণ। বাংলা সনের পঞ্জিকায় যে ১২টি মাস আছে, তার মধ্যে ১১টিই নক্ষত্রের নামে। এ ক্ষেত্রে ‘বৈশাখ’ বিশাখা নক্ষত্রের নামে, ‘জ্যৈষ্ঠ’ জ্যাষ্ঠা নক্ষত্রের নামে, ‘আষাঢ়’ আষাঢ়ার নামে এবং এভাবে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র যথাক্রমে শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদা, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, পৌষী, মঘা, ফাল্গুনী ও চিত্রার নামে। যে মাসটি নক্ষত্রের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ; আর এই নামের সঙ্গে মিশে আছে বাংলার কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তথ্য।
মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ বলেন, প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে নববর্ষের উৎসব উদ্যাপিত হতো। নববর্ষের আদি অনুষ্ঠান হিসেবে ‘আমানি’ উৎসব বা ‘নবান্ন’ উৎসবের কথা বলেছেন ঐতিহাসিকেরা, যা পয়লা অগ্রহায়ণে অনুষ্ঠিত হতো। এটি ছিল মূলত কৃষকের উৎসব। সম্রাট আকবরের সময় থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ‘বৈশাখ’ মাসকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রচলন করা হয়। কিন্তু বৈশাখকে বছর শুরুর মাস আর পয়লা বৈশাখকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে বাংলার মানুষ উদ্যাপন করেনি বলে দাবি করেন তিনি।
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। পরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেও এভাবে ধীরে ধীরে পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু উৎসাহ-উদ্দীপনার খবরাদি পাওয়া যায়। ১৯৬৭ সালে এই বংলায় প্রথম পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তানি শাসকেরা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করায় পাকিস্তানবিরোধী মানসিকতার বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মুসাদ্দিক বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আজ ভুলতে বসেছে, এককালে পয়লা অগ্রহায়ণই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নববর্ষ। প্রজন্মকে সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নবান্ন উৎসবকে আদি নববর্ষ উৎসব নামে উদ্যাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি যুবায়ের, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মিনহাজ ও বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সভাপতি মৃন্ময় মিজান উপস্থিত ছিলেন।