দশমিনায় ছুরিকাঘাতে তরুণ হত্যা, চার বাড়িতে আগুন
Published: 2nd, July 2025 GMT
পটুয়াখালীর দশমিনায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় ফাহিম হোসেনকে (১৮) ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শাকিল মীরের (২৪) বিরুদ্ধে। এ সময় ছেলেকে রক্ষা করতে গেলে জাকির হোসেন বয়াতীকেও ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার চিংগড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে বুধবার দুপুরে বিক্ষুব্ধরা শাকিলের চার চাচার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ফাহিম বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের ভাংরা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে ও চলতি বছর নওমালা আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
নিহতের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ফাহিম সম্প্রতি মাদক কারবার ও সেবন থেকে ফিরে আসতে শাকিলকে সতর্ক করেন। তাঁর বাবা আব্দুর রশিদ মীরও এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি। পরিবারটির মাদক কারবারের বিষয় ফাহিম এলাকাবাসীকে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন শাকিল। মঙ্গলবার বিকেলে নিত্যপণ্য কেনার জন্য ফাহিম পার্শ্ববর্তী ধলুফকিরের বাজারে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় শাকিল মীরের।
এ সময় কৌশলে ফাহিমকে ধলুফকিরের বাজার থেকে সেতুতে নিয়ে যায় শাকিল। সেতুর পূর্ব প্রান্ত চিংগড়িয়ায় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ফাহিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে শাকিল। খবর পেয়ে ফাহিমের বাবা জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় শাকিল। স্থানীয়রা দু’জনকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আর জাকিরের অবস্থার অবনতি হলে রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
আজ ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে আনা হলে স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ফাহিমকে দাফন করা হয়। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে ফাহিমের চাচা মস্তফা বয়াতী বলেন, ‘ফাহিম আমাদের বংশের বড় ছেলে। অনেক কষ্টে তাকে আমরা মানুষ করার চেষ্টা করেছি। শাকিল ঢাকায় থাকে, মাঝেমধ্যে গ্রামে আসে। মাদক কারবারের কথা জানাজানি হওয়ার পর সে কয়েকবার ফাহিমকে শাসিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের বুকের ধনকে কেড়ে নিল। আমরা ওর বিচার চাই।’
এদিকে, ফাহিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় শাকিল মীরের পরিবারের সদস্যরা। তার বাবা আব্দুর রশিদ মীরের নম্বরে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে আজ দুপুরে রশিদ মীর, তার ভাই সানু মীর, ছালাম মীর ও কাসেম মীরের খালি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তবে আগুন কারা দিয়েছে, তা স্থানীয়ভাবে জানা যায়নি।
বাউফল থানার ওসি আক্তারুজ্জামান জানান, ফাহিমের বাড়ি বাউফলে হলেও ঘটনাস্থল দশমিনা থানায়। তার পরও তারা জড়িতদের ধরার চেষ্টা করেছেন।
দশমিনা থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, শাকিলের চাচা শানু মীরকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে হত্যা মামলা নথিভুক্ত করা হবে।
দুই থানার ওসিই জানান, বাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেবাচিমে চিকিৎসককে মারধর, কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
তিন ঘণ্টা পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহাড়ায় জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। চিকিৎসকদের উপর হামলা ও নিরাপত্তা না থাকায় দুপুর ২টা থেকে কর্মস্থল ত্যাগ করেন চিকিৎসকরা। ফলে টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীরের অনুরোধে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় বিকেল ৫টা থেকে জরুরি সেবা চালু করা হয়। তবে বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাব্বি আল মামুন ফয়সাল জানান, রবিবার বেলা ১২টার দিকে সদর রোড থেকে বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে হাসপাতালের সামনে আসে। এ সময় তারা হাসপাতালের প্রতিটি গেটের সামনে স্কুল-কলেজের মার্কিং করে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের গালিগালাজ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি ছিল বলে জানান রাব্বি আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘‘দুপুর ২টার দিকে মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার দিলিপ রায় ডিউটি শেষে বের হওয়ামাত্র তাকে টেনেহিঁচড়ে বেদম মারধর করা হয়। পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। এতে বাহাউদ্দিন নামে এক কর্মচারী আহত হন।’’
চিকিৎসকের উপর হামলা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন ইর্ন্টান চিকিৎসকরা। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানান, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এ সময় পরিচালক মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু আজকে ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতিকারী ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। হাসপাতাল ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’’
ঘটনায় জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।
মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, ‘‘আজ মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে বরিশালে বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। ডা. দিলিপ রায়কে মারধর করেছে। চিকিৎসকের উপর নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ায় রোগীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি চিকিৎসকরাও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় ঘটনার পর কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তবে হাসপাতাল পরিচালক স্যারের বিশেষ অনুরোধে ও পুলিশের নিরাপত্তায় এবং মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে আমরা মিড লেভেল চিকিৎসকরা শুধু জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
এ দিকে তিন ঘণ্টা চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ায় রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা ছুটে যান পরিচালকের কাছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তাদের শান্ত হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছি। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।’’
ঢাকা/পলাশ//