না, শীর্ষ সংবাদ শিরোনামে ছিল না খবরটি। বরং সংবাদপত্রের ভেতরের পাতায় ছোট্ট মুদ্রণে বেরিয়েছিল খবরটি। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘দেশের ৮৮% নিম্ন আয়ের মানুষ দিনে এক বেলা পাউরুটি-বিস্কুট খান’ শিরোনামের খবরটিতে দেখা যাচ্ছে, দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রায় ৯০ শতাংশই ভাতের অভাবে দিনে এক বেলা রুটি বা বিস্কুট খাচ্ছেন।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জরিপ চালিয়ে দেখেছে, যাঁদের মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁদের ৬০ শতাংশই সময়ের অভাব ও বাড়তি দামের কারণে সকালের খাবার বাদ দেন। এই জরিপের তথ্য বলছে, অর্থাভাবে ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় ভারী খাবার বাদ দিতে বাধ্য হন। বিকল্প হিসেবে পাউরুটি বা কলা-বিস্কুট খান তাঁরা। বিশেষ করে দুপুর বা বিকেলের খাবার অনেক সময় বাদ দিতে হয় তাঁদের।

অর্থাৎ দরিদ্র মানুষেরা দুই বেলা পূর্ণ খাবার পান না। সুতরাং বিকল্প হিসবে তাঁরা রুটি বা বিস্কুটের ওপর নির্ভর করেন।

এমনিতেই দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের বেশি। তার মধ্যেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এই পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষসহ শিক্ষার্থীদের বাড়তি দামে খেতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান বাজেটে নিত্য খাদ্যপণ্যের ওপর কর কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু তাঁদের সে আশা পূরণ হয়নি। কারণ, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর থেকে ট্যাক্স কমানো নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদার বিষয়গুলোও কীভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে এবং কীভাবে তাঁরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

সত্যিকার অর্থে প্রান্তিক মানুষের বঞ্চনা শুধু আয় কিংবা ভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।

বাংলাদেশে তিন-পঞ্চমাংশ পথশিশুর কোনো জন্মসনদ নেই, ৫২ শতাংশ পথশিশু স্কুলে ভর্তি হয়নি, ৭১ শতাংশ সুবিধাবঞ্চিত শিশু তাদের মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানে না।

দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের বাস বস্তি এলাকায়। এসব এলাকায় বসবাসরত ৩৮ শতাংশ পরিবারের একটি শিশু পথশিশু হয়ে যায়। এসব পরিবারের ৪৪ শতাংশ শিশুর জন্মসনদ থাকলেও ৩৩ শতাংশ পরিবারের কোনো শিশুরই জন্মসনদ নেই।

বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোয় সামষ্টিক পর্যায়ে নানা নেতিবাচক গতিময়তার কারণে ব্যষ্টিক পর্যায়ে মানুষের বঞ্চনার মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান শ্লথতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয় এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের মতো হবে বলে অনুমিত হয়।

বিনিয়োগের হারও শ্লথ এবং দেশে নানা বিষয়ে গভীর অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা–বাণিজ্যের গতিও অত্যন্ত ধীর। বাংলাদেশের ২৭ লাখ লোক আজ কর্মবিহীন। অদূর ভবিষ্যতে দেশের মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমবে বলে মনে হয় না।

এ কারণে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দেশের ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ১ দশমিক ৬ কোটি মানুষ।

এটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ২৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে, বাংলাদেশে বঞ্চনা আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বঞ্চনার মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য একটি বিশেষ পন্থা সর্বজনীনভাবে ব্যবহার করা হয়। সেটি হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো। এই কাঠামো চরম দরিদ্র, নাজুক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে এসব মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন না এবং এসব কর্মকাণ্ড থেকে কোনো সুফল লাভ করেন না।

ফলে তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন হয়। তাই বঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের জন্য সামাজিক বিষয়টি উন্নয়ন বিতর্ক, নীতি-আলোচনা, জনমত প্রকাশে বারবার উঠে এসেছে। আমাদের দেশে বাজেট–পরবর্তী সময়ের আলোচনা এর একটি মোক্ষম উদাহরণ। সেসব বিতর্ক, আলোচনা ও জনমত আমরা যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে উঠে আসে।

এক.

বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক সহায়তা অপর্যাপ্ত; দুই. এ সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোয় নানা ফাঁকফোকর রয়েছে, যার ফলে এ ব্যবস্থার অপব্যবহার করা হয় এবং তিন. এ ব্যবস্থার সংস্কার করার জন্য কী কী করা যেতে পারে।

বর্তমান সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো যে কতটা অপর্যাপ্ত, তা বস্তি এলাকার দরিদ্র গৃহস্থালিগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেরালেই বোঝা যায়। বস্তিতে বসবাসরত ৯২ শতাংশ পরিবারেরই কোনো সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা নেই। মাসিক ৫০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকার সুরক্ষা সাহায্য শুধু যে ভীষণভাবে অপর্যাপ্ত তা–ই নয়, এটা দরিদ্র মানুষদের প্রকৃত প্রয়োজন বাস্তবতা থেকেও বিচ্ছিন্ন। পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অল্প কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে। তাদের খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধার কোনো নিশ্চয়তা নেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার সমস্যাগুলো সুবিদিত। এসব অন্তরায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বলয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় পর্যন্ত ব্যাপ্ত। বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদনে চুরি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সামাজিক সুরক্ষার অপব্যবহারের অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে।

মোট দরিদ্র জনসংখ্যার অর্ধেক, অর্থাৎ দুই কোটি মানুষ ভিজিএফের সুবিধা ভোগ করে। এক কোটির কম লোক তেমনিভাবে ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) সুবিধা পায়। টিসিবির খাদ্যসামগ্রী ট্রাকের সামনের লম্বা লাইন এবং এসব ট্রাক আসামাত্র খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার জন্য যে লড়াই শুরু হয়ে যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুলভে সরকারি খাদ্যসহায়তা–ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বোঝার জন্য এর চেয়ে বাস্তব উদাহরণ আর হতে পারে না।

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার সমস্যাগুলো সুবিদিত। এসব অন্তরায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বলয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় পর্যন্ত ব্যাপ্ত। বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদনে চুরি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সামাজিক সুরক্ষার অপব্যবহারের অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে।

সুবিধাভোগী চিহ্নিতকরণেরও বিরাট একটা সমস্যা আছে। যাদের সামাজিক সুরক্ষা সাহায্য পাওয়ার কথা, তাদের অনেকেই এ ব্যবস্থার বহির্ভূত। অন্যদিকে যাদের এসব সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, অনেক সময়ই তারা এ কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন সুরক্ষা কার্যক্রমের উপাত্তভিত্তি সঠিক নয় এবং বিভাজিত। সব দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ব্যয় সরাসরিভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাজুক দশা কমাতে সাহায্য করে না। ফলে সামাজিক সুরক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয়ও সর্বদা অর্থবহভাবে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না।

এ সবকিছুর আলোকে সংগত প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোকে কী করে আরও প্রাসঙ্গিক, অর্থবহ, দক্ষ ও কার্যকর করা যায়। বর্তমান অর্থবছরে দেশের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের সংখ্যা ১৪০ থেকে ৯৫–এ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ বছরের বাজেটের ১৬ শতাংশ, অর্থাৎ ১ দশমিক ৩ লাখ কোটি টাকা এসব কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বহু কার্যক্রম, যেমন গ্রামীণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একাধিক কার্যক্রমকে একীভূত করা হয়েছে।

সামাজিক সহায়তা কার্যক্রমকে সংকুচিত করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার একটি নতুন সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবে প্রথাগত কাঠামো থেকে ৩৯টি দরিদ্রবান্ধব কার্যক্রমকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। সাধারণভাবে চিন্তা করা হয় যে দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য যে ব্যয় করা হয়, তা দারিদ্র্যের হার কমিয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে সেসব ব্যয় প্রায়ই নাজুক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে না। সুতরাং দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য সুনির্দিষ্ট দরিদ্রবান্ধব কার্যক্রম প্রয়োজন।

নতুন এই কাঠামোর ৩৯টি কার্যক্রমের আওতায় ৭ কোটি মানুষ সুবিধা পাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষার জন্য বর্তমান অর্থবছরে তাদের জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের অধীন থাকবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থ হস্তান্তর ভাতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও মূল্যস্বস্তি কর্মসূচি, সরকারি নির্মাণকাজ, জীবিকা কর্মসূচি ইত্যাদি। এর ফলে সমাজে দুস্থ মানুষদের কর্মনিয়োজনও বাড়বে।

পুষ্টি ও শিশুমৃত্যু, বিদ্যালয় উপস্থিতির ব্যাপ্তি, মৌলিক সামাজিক পরিষেবায় অভিগমন, রান্নার জ্বালানি ও সম্পদ বিবেচনায় বহু মানুষকে এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেসব পরিবার ক্রমাগত তাদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম এবং যারা মৌসুমি কর্মনিয়োজন বা নানা ঝুঁকির কারণে দারিদ্র্যসীমার ওপরে ও নিচে ওঠানামা করে, তাদেরও এই অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে। সত্যিকারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী চিহ্নিত করা গেলে যারা দরিদ্র নয়, তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা দেওয়ার ফলে সম্পদের অপচয় রোধ করা যাবে। ফলে যাদের সত্যি সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন আছে, তারা এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। এর জন্য অবশ্য সামাজিক সুরক্ষা উপাত্ত কাঠামোকে আরও জোরদার করতে হবে এবং আন্তমন্ত্রণালয় আরও দক্ষ করতে হবে।

সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করার প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে সমাজের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সুবিধাভোগী পরিবারের অনুপাত কমে গেছে—৫১ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশ। এ থেকেই সুবিধাভোগী সুচিহ্নিতকরণের গুরুত্বটি বোঝা যায়। ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রির (ডিএসআর) মতো উপাত্তচালিত পন্থার মাধ্যমে পারিবারিক উপাত্ত ক্রমাগতভাবে পরিশীলিত করা সম্ভব, যার ফলে যেসব পরিবার নতুন করে নাজুক পরিস্থিতির শিকার হবে, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুত সুরক্ষা কাঠামোর মধ্যে ঢোকানো যাবে। এর ফলে অত্যন্ত দক্ষভাবে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করা যাবে। সুবিধাভোগী পরিবার চিহ্নিতকরণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের কথাও ভাবা যেতে পারে।

পথশিশুদের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অত্যাবশ্যকীয়। এর ফলে তারা রাস্তা ছেড়ে সুজীবনে উঠে আসতে পারে। এসব শিশুর জীবনকে উন্নীত করার জন্য শর্তসাপেক্ষ অর্থ হস্তান্তরের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। এ–জাতীয় কর্মসূচিকে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি শিশুশ্রমের সঙ্গেও সংযুক্ত করা যেতে পারে। নমনীয় একটি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যদি একটি সহায়তামূলক পরিবেশ গড়ে তোলা যায়, তাহলে পথশিশুরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে এবং বিদ্যালয় ছেড়ে যাবে না। সেই সঙ্গে শিশুশ্রমেরও একটি সুরাহা হবে। বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারে সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো শুধু একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থাই নয়, এর অর্থনৈতিক প্রভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্র্য হ্রাস থেকে কর্মনিয়োজন; শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য থেকে শিশুশ্রম পর্যন্ত এসব প্রভাব বিস্তৃত। চূড়ান্ত বিচারে বিস্তৃত বঞ্চনা রোধে সামাজিক সুরক্ষা অত্যাবশ্যকীয়।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের ভূতপূর্ব পরিচালক। 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ শ র স ম জ ক স রক ষ প র ন ত ক জনগ ষ ঠ র য স ম জ ক স রক ষ স ম জ ক স রক ষ র ন ম ন আয় র ম ন ষ র জন য স ম জ ক ব যবস থ র পর ব র র দ র জন য র জন য ব ব যবহ র উপ ত ত ন ত কর দর দ র র একট দশম ক র ওপর পথশ শ এসব ক

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ