সমকাল : কী কারণে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির শিল্প এখনও দাঁড়াতে পারেনি?
জাকির হোসেন : বাংলাদেশ যে ধারণা নিয়ে ওষুধের কাঁচামাল শিল্প তৈরির পরিকল্পনা করেছিল, সেই চিন্তায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। ২০১৭ সালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধশিল্প পার্কে জায়গা বরাদ্দের পর ব্যবসায়ীরা অনেকেই চীন ও ভারতের এপিআই কারখানা পরিদর্শন করে পরিকল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক দেখতে পান। ওষুধশিল্প পার্কে জায়গা কম থাকায় অনেকেই সেখানে কারখানা বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির পরিকল্পনা হচ্ছে– পার্কে ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানির এপিআই কারখানা স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে। বাকিরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় এই কারখানা স্থাপন করবে।
এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠায় আরও বড় পরিসরে পরিকল্পনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। চীন ও ভারতে এ শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য জমি ও যন্ত্র প্রযুক্তি সব দিয়েছে সরকার। এমনকি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই শিল্প থেকে যা লাভ আসে, সেখানেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বাংলাদেশে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলে ব্যবসায়ীরা এ শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। যদি সত্যিকার অর্থেই সরকার এটি করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ এই শিল্পে এগিয়ে যাবে। একটি এপিআই করখানা বানাতে গেলে ৮ থেকে ৬৫ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়। এ ছাড়া কাঁচামাল তৈরিতে পৃথক যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এসব যন্ত্র বসানোর জায়গা বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প পার্কে নেই। আবার এটা করতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী আমাদের বাজার আছে কিনা, সেটিও ভাবতে হবে। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতে যে কাঁচামাল প্রয়োজন, এগুলো চীন ও ভারত থেকে আনা হয়। ফলে এই দুই দেশ চায় না আমাদের দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য বেশি দামে কিনতে হয় বাংলাদেশকে। প্রতিনিয়ত মলিকুল পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা ১০ বছর ধরে যে মলিকুল উৎপাদনের চেষ্টা করছি, সেটি বাজারে আসার আগেই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। 
সমকাল : ওষুধশিল্পকে আপনি কতটা পরিণত মনে করেন? 
জাকির হোসেন : বাংলাদেশের ওষুধশিল্প আজ একটি পরিপক্ব ও আত্মনির্ভরশীল শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কভিড-পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রস্তুতিমূলক সক্ষমতা, উৎপাদন মান এবং দ্রুততার সঙ্গে চাহিদা পূরণের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কভিড আমাদের একটি শিক্ষা দিয়েছে যে দেশীয় সক্ষমতা ছাড়া স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সম্ভব নয়। সে অনুযায়ী এখন আমরা আরও বেশি গবেষণা, উদ্ভাবন ও স্থানীয় কাঁচামাল উৎপাদনে বিনিয়োগ করছি। কভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শুধু ওষুধ নয়, বরং পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত আরও আত্মনির্ভরশীল হয়েছে।
সমকাল : দেশে ওষুধের দাম বেশি এমন অভিযোগ সবসময় করা হয়। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
জাকির হোসেন : ওষুধের দাম এখনও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বাংলাদেশে। তবে দামের সঙ্গে গুণমান ও নিরাপত্তার সমন্বয় রাখতে হয়। মূল সমস্যা হলো, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা ব্র্যান্ডের দামকে সব ওষুধের প্রতিচ্ছবি মনে করা হয়। সরকার দাম নির্ধারণ করে এবং প্রতিটি কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। তবে উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের বৈশ্বিক দামের প্রভাব ওষুধের দামে পড়ে। ভবিষ্যতে এপিআই স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হলে কিছু ওষুধের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সমকাল : নকল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত প্রতিরোধে আপনাদের ভূমিকা কী?
জাকির হোসেন : নকল ও নিম্নমানের ওষুধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভালো কোম্পানিগুলো। আমাদের সমিতির সদস্যরা কেউ এমন কাজে জড়িত নন এবং আমরা সবসময় ওষুধের গুণগত মান রক্ষার পক্ষে। আমরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতায় ফার্মেসিগুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে। একই সঙ্গে মানহীন উৎপাদকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে, কঠোর হয়ে সুনির্দিষ্ট ও গোপনে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ওষুধের গায়ে কিউআর কোড, ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং তারিখ সঠিকভাবে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এসব নিয়ে ওষুধশিল্প সমিতি সবসময় সোচ্চার। 
সমকাল : ওষুধ অনুমোদন ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা আছে কি?
জাকির হোসেন : ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লাইসেন্সিং ও রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম, সময়সীমা নির্ধারণ, স্বচ্ছতা ও ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা জরুরি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সক্ষমতা বাড়ানো ও জনবল উন্নয়নও জরুরি। আমরা এক ছাদের নিচে সব সেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছি; যাতে একাধিক দপ্তরের অনুমতি একসঙ্গে পাওয়া যায়।
সমকাল : বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করবে। এতে ওষুধশিল্প কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে?
জাকির হোসেন : বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে। তখন ওষুধের পেটেন্ট নিয়ে সমস্যা শুরু হবে। দেখা যাবে, তখন বাংলাদেশকে কোনো ওষুধের পেটেন্ট কিনতেই লাখ লাখ ডলার খরচ করতে হচ্ছে। এতে ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব নতুন ওষুধ রয়েছে, সেগুলোর নিবন্ধন নেওয়া দরকার। তাহলে উন্নয়নশীল দেশ হলেও নিবন্ধনকৃত ওষুধ আগের দামে আমরা উৎপাদন করতে পারব।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তবিবুর রহমান
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র সরক র সমক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা

জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।

হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—

১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

আবেদনে যোগ্যতার শর্ত

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—

—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।

—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।

—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।

বয়সসীমা

—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।

—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।

—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।

—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।

—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।

বৃত্তির সুবিধা

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:

১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।

২। মাসিক ভাতা।

—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।

—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।

—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।

—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।

—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।

—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা