নাসিরনগরে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত
Published: 5th, July 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় বাজারে এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত সোহরাব মিয়া (২৬) চাতলপাড় গ্রামের চান মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। সংঘর্ষের পর বাজারের অন্তত ২০টি দোকানে লুটপাট চালানো হয়। আতঙ্কে ৪৫০টি দোকান বন্ধ করে মালিকরা চলে যান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান ও আধিপত্য নিয়ে চাতলপাড় ইউনিয়নের ‘উল্টা গোষ্ঠী’ এবং ‘মোল্লা গোষ্ঠীর’ মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। আগেও একাধিকবার তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পুরোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মোল্লা গোষ্ঠীর সোহরাব মিয়া, নেয়ামুল মিয়া, বাবুল মিয়া, সুরাফ মিয়া, মোতাহার মিয়া, তালেব মিয়া, আশিক মিয়া এবং উল্টা গোষ্ঠীর মো.
চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, পুরোনো বিরোধ নিয়ে দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একজন নিহতের জেরে বাজারে লুটপাট চালানো হয়। আতঙ্কে দোকানিরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে যান।
উল্টা গোষ্ঠীর নেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন প্রায় আমাদের মারধর করে। শনিবার প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষ হয়। তারা বাজারে আমাদের ২০টি দোকান থেকে কোটি টাকার মালপত্র নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে মোল্লা গোষ্ঠীর নেতা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন আলাউদ্দিনের অনুসারীরা। তারা সোহরাবকে টেঁটা দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে। আরও দু’জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।’
নাসিরনগর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। নিহতের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ন হত ছ ত রদল ন ত চ তলপ ড় স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই শহীদদের সনদ সম্ভাব্য, যোদ্ধাদের সনদ একটু কঠিন: উপদেষ্টা শারমীন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহীদ শিক্ষার্থী নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে আমি নিজেও মাঠে ছিলাম। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি এক বছর হলো। এতদিনের মধ্যে আমরা তাদের কাছে যেতে পারিনি। আমরা যতটুকু অনুদান দিতে পেরেছি শহীদ নাফিসার বাবা তা পেয়েছেন। এখানে আর একজন শহীদের বাবা আছেন তিনিও অনুদান পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকে, আমরা সময়মতো শহীদদের পারিবারের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। অনেক দেরি হলেও আপ্রাণ চেষ্টা করছি সবার কাছে পৌঁছানোর। নাফিসার বাবা ও জুলাই কন্যাদের দাবি হচ্ছে জুলাই সনদ। এখানে শহীদদের সনদ সম্ভাব্য কিন্তু যোদ্ধাদের সনদ একটু কঠিন কারণ যোদ্ধাদের সংখ্যা অনেক।
শুক্রবার আড়াইটায় উপদেষ্টা গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় শহীদ নাফিসার বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ নাফিসার বাবা আবুল হোসেন। এসময় তিনি বলেন, বেঁচে থাকতে মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার দেখে যেতে চাই। খুনিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।
নাফিসার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার এবং স্থানীয়রা। মারা যাওয়ার এক বছর পরও তার স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদছে তার পরিবার। এ সময় উপদেষ্টাকে পেয়ে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নাফিসার মা কুলসুম বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে দুই মেয়েকে নিয়ে সাভারের দক্ষিণ বক্তারপুরে কোর্টবাড়ি এলাকায় চলে আসেন। এরপর তিনি মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশে পাড়ি জমান। নাফিসাকে ভর্তি করা হয় সাভারের বেসরকারি ল্যাবরেটরি কলেজে। পরে নাফিসার বাবা আবুল হোসেন নাফিসাকে টঙ্গীতে নিয়ে যান। তিনি নাফিসাকে সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। তবে নাফিসা অধিকাংশ সময়ে সাভারে মামা হযরত আলীর বাসায় থাকতেন। গত ২৮ জুলাই ধামরাইয়ে বড় মামার বাসায় আসেন। পরে ৩০ জুলাই ছোট মামা হযরত আলীর বাসায় যান। এরপর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সাভারে আন্দোলনে অংশ নিতেন।
আগস্টের ৩ তারিখ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নাফিসা। ৫ আগস্ট সকালে মামাকে জানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গাবতলীতে যাবেন।
বিষয়টি ভেবে মামা হযরত আলী আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু নাফিস নিষেধ শোনেননি। কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর মামা নাফিসার মুঠোফোনে কল দিলে জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আছেন। তখন মামা তাকে রেডিও কলোনি হয়ে বাসায় ফিরতে বলেন। বেলা ১১টার দিকে আবার কল দিলে আর ফোন ধরেননি নাফিসা।
বেলা আড়াইটার দিকে নাফিসার ছোট বোন সাফা হোসেন কল দিলে অপরিচিত একজন কল ধরে ‘নাফিসা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন’ জানিয়ে ল্যাবজোন হাসপাতালে যেতে বলেন। বিষয়টি জানতে পেরে হযরত আলী ল্যাবজোন হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে নাফিসাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকেরা নাফিসাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আন্দোলনকারীরাসহ লাশ বাসায় নেওয়ার পথে মুক্তির মোড় এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে বিকেল চারটার দিকে লাশ তার মামার বাসায় নেওয়া হয়।
রাত নয়টার দিকে সাভারে জানাজা শেষে নাফিসার মায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানির বাসায় নাফিসার ছোট ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নাফিসার বাবা টঙ্গীর এরশাদনগরে লাশ নিয়ে নিজ বাড়ির একটি কবরস্থানে দাফন করেন।