তাহিরপুর সীমান্তের বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন থেকে চারাগাঁও হয়ে বাগলি শুল্ক স্টেশনে যাওয়ার পথে ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে মানুষের। ছড়া থেকে নেমে আসা কাদাপানি ও সড়কের একাংশে জলাবদ্ধতার কারণে এই দুর্ভোগ।
উপজেলায় থাকা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারকরা প্রতিদিনই আসা-যাওয়া করেন। তাই এই সড়কে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলি শুল্ক স্টেশনমুখী মানুষের যাতায়াত বেশ। এ ছাড়া এই পথে পর্যটকের আনাগোনাও বেশি। তাদের সবার হতাশা সড়কের ওই স্থান নিয়ে।
বড়ছড়া-বাগলি ১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝামাঝি অংশে মাত্র ৫০০ মিটার সড়কে মূল সমস্যা। চারাগাঁও-সংলগ্ন লাকমা বাজারের সড়ক ঘেঁষা ৫০টির মতো দোকানঘর স্থাপন করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। বড়ছড়া থেকে সড়কের লাকমা নামক স্থানের দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে দোকান স্থাপন করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ব্যবসায়ী ছাড়াও পর্যটকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লাকমা রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠা বাজারটি স্থানীয়ভাবে চাকমাহাটি রোডের বাজার নামেও পরিচিত। উপজলার শ্রীপুর উত্তর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাফিল উদ্দিন জানান, রাস্তার দুই পাশে অপরিকল্পিতভাবে প্রায় ৫০টি দোকান নির্মাণে পাকা রাস্তার ওপর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, রাস্তার দুই পাশের জায়গার মালিকরা কোনো পরিকল্পনা ছাড়া নিজ উদ্যোগে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। বৃষ্টির পানি রাস্তার দুই পাশ দিয়ে সরতে না পারায় এবং ছড়ার কাদাপানি জমায় সড়কের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
মোটরসাইকেলে চলাচলকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করলেও এই বাজারের সামনের রাস্তায় সারা গা ব্যথা হয়ে যায়। তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সবুজ আলম বলেন, লাকমা বজারের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, তিনি দ্রুত স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বসবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নানা আয়োজনে মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপন
প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ উপলক্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।
এর আগে মোংলা বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দর ভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেরা কর্মীদেরও সম্মানিত করা হয়।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা এলাকায় যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় বাগেরহাটের মোংলায়। মূলত ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘দ্য সিটি অব লিয়নস’ নামের ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল ওই জাহাজ।
৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় নানা সংকটের মাঝেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভূমিকা রেখে চলেছে মোংলা বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দর ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোংলা বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন উপব্যবস্থাপক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, এটি প্রথমে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই বন্দর। ১৯৮৭ সালের মার্চে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থবছর শেষে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বা ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস)। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ বা ৭.২৮ শতাংশ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৮৩ শতাংশ বেশি আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরের নিট মুনাফা হয় ৬২ কোটি ১০ লখ টাকা।
অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৫৬টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইইউজ এবং গাড়ি আমদানি ৪ হাজার ১৩৯টি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টির বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ ও রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান।