এজবাস্টন টেস্ট ভারতের জন্য হয়ে আছে এক দুঃস্বপ্নের নাম। মনসুর আলী খান পতৌদি থেকে কপিল দেব, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা বিরাট কোহলি থেকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ যশপ্রীত বুমরা—কারও নেতৃত্বেই এজবাস্টন জয় করা সম্ভব হয়নি।

তবে ভারতের নতুন অধিনায়ক শুবমান গিল বোধ হয় তাঁদের ব্যর্থতা ঢেকে দেওয়ার লক্ষ্যেই খেলতে নামছেন। এজবাস্টন–জুজু কাটিয়ে ওঠার দায়িত্বটা তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। গতকাল ম্যাচের প্রথম দিনে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকা গিল আজ আউট হয়েছেন ২৬৯ রান করে। তাঁর এই মহাকাব্যিক ইনিংসে হয়েছে একগাদা রেকর্ড।

টেস্টে এটিই ভারতের কোনো অধিনায়কের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ, ইংল্যান্ডের মাটিতেও কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। এশিয়া মহাদেশের বাইরেও এটি দেশটির কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস। গিলের এমন কীর্তির দিনে স্বাভাবিকভাবেই দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে ভারত। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৫৮৭ রানের পাহাড় গড়ে।

ভারতের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজ ভালোভাবে করলেও যশপ্রীত বুমরাহীন বোলিং আক্রমণ কেমন করে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। মোহাম্মদ সিরাজ আর অনভিজ্ঞ আকাশ দীপ অনেকের ভুল ভেঙে দিয়েছেন। দুই পেসার ২৫ রানের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে বেকায়দায় ফেলেছেন। স্বাগতিকেরা দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৭৭ রান তুলে।

প্রথম ইনিংসে ভারতের চেয়ে এখনো ৫১০ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড, ফলো অন এড়াতে দরকার আরও ৩১১ রান। এরপরও ফলো অনের ‘শঙ্কা’ বলা যাচ্ছে না কারণ, শুরুর বিপর্যয়ের পর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার জো রুটকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুক। চতুর্থ উইকেটে দুজন ৫২ রানের জুটি গড়ে দিনের শেষ ভাগ পার করে দিয়েছেন। আগামীকাল তৃতীয় দিন নিশ্চয় জুটিটাকে আরও বড় করতে চাইবেন তাঁরা।

হেডিংলিতে প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রানের ব্যবধানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন ভারতের মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। সেই দলটিই এজবাস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারানোর পর যোগ করেছে আরও ৩৭৬ রান, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এতে গিলের পাশাপাশি অবদান দুই স্পিন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা আর ওয়াশিংটন সুন্দরের। ব্যাটসম্যানদের গড়া বিশাল সংগ্রহ থেকেই হয়তো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন বোলাররা।

আগামীকাল তাঁরা ইংল্যান্ডের বাকি ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে বড় লিড এনে দিতে পারেন কি না, আপাতত সেটাই দেখার অপেক্ষা।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১ম ইনিংস: ১৫১ ওভারে ৫৮৭ অলআউট (গিল ২৬৯, জাদেজা ৮৯, জয়সোয়াল ৮৭, সুন্দর ৪২; বশির ৩/১৬৭, ওকস ২/৮১, টাং ২/১১৯)।

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৭৭/৩ (ব্রুক ৩০*, ক্রলি ১৯, রুট ১৮*, পোপ ০, ডাকেট ০; আকাশ ২/৩৬, সিরাজ ১/২১)।

* দ্বিতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ড ৫১০ রানে পিছিয়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন প রথম ইন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

চরম ব্যাটিং ধসে বিব্রতকর পরাজয়

১ উইকেটে বাংলাদেশের রান ১০০। ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তখন স্বাগতিকদের কড়া জবাব দিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। যে ছন্দপতনে স্কোরবোর্ডের চিত্রটা হয়ে যায় এরকম, ৮ উইকেটে ১০৫।

স্কোরাবোর্ডে মাত্র ৫ রান যোগ করতেই নেই ৭ উইকেট। চরম এই ব্যাটিং ধসে বিব্রতকর পরাজয়কে সঙ্গী করেছে বাংলাদেশ। ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে ৭৭ রানে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

লম্বা সময় পর ব্যাটিংয়ে এমন ধস দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও বাংলাদেশের এমন কিছু হয়েছিল। সেবারের অবশ্য আরো ভয়ংকর। ৩ উইকেটে ৮০ রান থেকে ৮৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন:

টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে তিন পরিবর্তন

৭৭ রানের বড় হারে বাংলাদেশের সিরিজ শুরু

উইকেট আহামরি কঠিন ছিল না। কিন্তু স্পিন বিষে নীল হয়েছে বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন শুরুতে ১৩ রানে আউট হন। সেখান থেকে ৭১ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও তানজীদ। দুজন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। তানজিদ তুলে নেন তার ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি। বাংলাদেশের দলীয় রানও তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে। এর পরপরই সব ওলটপালট।

বিপদটা নাজমুল হোসেন নিজেই ডাকলেন। বেশ ছন্দে যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন ডাবল রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন। শান্তর বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। 

লিটন ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। ওপেনার তানজিদ দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন। ৬২ রানে আউট তানজিদ। সেঞ্চুরির জন‌্য আরো অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে। দুজনকেই আউট করেন স্পিনার হাসারাঙ্গা। পরের ওভারে বল হাতে নেন কামিন্দু মেন্ডিস। এসেই তাওহীদ হৃদয়ের উইকেট উপচে ফেললেন। হাসারাঙ্গা পরের ওভারে সাজঘরে পাঠান বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে। তাওহীদ ১, মিরাজ শূন‌্য রানে আউট। এরপর তানজিম হাসান, তানকিন আহমেদ সতীর্থদের দেখানো পথেই হাঁটেন।

নিশ্চিত পরাজয়ের ম‌্যাচে তখন কেবল জাকের আলীর পরাজয়ের ব‌্যবধান কমানোর লড়াই। ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫১ রান তুলে দলের স্কোর ১৬৭ রানে নিয়ে যান। তার আউটেই নিশ্চিত হয়ে যায় করুণ পরাজয়। ৭.৫ ওভারে ২ মেডেনে ১০ রানে ৪ উইকেট নেন হাসারাঙ্গা। তার বোলিং স্পেলে ৪০টিই ছিল ডট বল। এছাড়া মেন্ডিস ১৯ রানে নেন ৩ উইকেট।

এর আগে টস হেরে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছিল বাংলাদেশ। ২৯ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন আহমেদ সাজঘরে ফেরত পাঠান নিশান মাদুশঙ্কা (৬) ও কামিন্দু মেন্ডিস (০)। আরেকপ্রান্তে পেসার তানজিম হাসান সাকিব আউট করেন পাথুম নিশাঙ্কাকে (০)। তৃতীয় শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধ পায় কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাটে। ৭৭ বলে ৬০ রান যোগ করেন তারা। প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান করায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশকে। তাদেরকে লড়াইয়ে ফেরান স্পিনার তানভীর। অভিষিক্ত এই স্পিনার মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউ করেন।

এরপর আসালাঙ্কা ও লিয়ানাগে জুটি বেঁধে ৬৪ রান যোগ করেন। যা ছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংসে সর্বোচ্চ রান। মনে হচ্ছিল তাদের ব্যাটে বড় কিছুই করবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তাদের পথ আটকে দেন শান্ত। নিয়মিত বোলাররা যখন রান পাচ্ছিলেন না তখন অধিনায়ক মিরাজ শান্তকে বোলিংয়ে এনে জুটি ভাঙেন। 

লিয়ানাগে ২৯ রানে ক্যাচ দেন সীমানায়। সেখান থেকে আসালাঙ্কার একার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা আড়াইশ রানের কাছাকাছি পুঁজি পায়। লঙ্কান অধিনায়ক ১২৩ বলে ১০৬ রান করেন ৬ চার ও ৪ ছক্কায়। শেষ দিকে মিলান রত্নায়েকের ও হাসারাঙ্গার ২২ রানের দুটি ইনিংসে আড়াইশ রানের কাছাকাছি পুঁজি পায় লঙ্কানরা।

দলে ফিরে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। ২ মেডেন ছিল তার বোলিং স্পেলে। ৩ উইকেট পেয়েছেন তানজিম হাসান। ১টি করে উইকেট নেন তানভীর ও শান্ত। মিরাজ ও মোস্তাফিজ ছিলেন উইকেটশূন্য। 

সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন আসালাঙ্কা।

অসহায় আত্মসমর্পণে বাংলাদেশ সিরিজে পিছিয়ে গেল। ৫ জুলাই একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। মিরাজের অধিনায়কত্বের যাত্রাটা শুরু হলো পরাজয় দিয়ে। সিরিজে টিকে থাকতে পারবে তো বাংলাদেশ?

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবারও ওয়েবস্টার–ক্যারিই টানলেন অস্ট্রেলিয়াকে
  • চরম ব্যাটিং ধসে বিব্রতকর পরাজয়
  • রেকর্ড ধসে লজ্জার হার বাংলাদেশের
  • রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে রেকর্ড ব্যবধানেই হার জিম্বাবুয়ের
  • ৩২৮ রানে জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা