রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে আগামী এক বছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে: এসঅ্যান্ডপি
Published: 26th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আগের মতোই ‘বি প্লাস’ ধরে রেখেছে; একই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি রেটিং ‘বি’ বহাল রেখেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসঅ্যান্ডপি এ তথ্য জানিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি আরও বলছে, গত দুই বছরে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে রাজনৈতিক ও বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে আগামী এক বছরে প্রবৃদ্ধি আবার গতি পেতে পারে। সে ধারাবাহিকতায় পরবর্তী তিন বছরে প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। এসঅ্যান্ডপি আরও জানিয়েছে, ২০২৬ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেন সক্ষমতা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে ধারাবাহিক প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাক থেকে শক্তিশালী রপ্তানি আয়।
এসঅ্যান্ডপি বলেছে, গত ১৮ মাসে নমনীয় বিনিময় হার চালু, টাকা অবমূল্যায়ন মেনে নেওয়া, কঠোর মুদ্রানীতির প্রয়োগের মতো নেওয়া সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু নীতিমালা বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির হার আরও কমে এলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে পারে।
তবে প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ককে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই শুল্ক কার্যকর হলে তা তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা ও শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি বলেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এখনো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। কারণ, এখানে শ্রমের খরচ কম এবং শ্রমশক্তির সহজলভ্যতাও রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্ক হার বাংলাদেশকে ওই বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি বলছে, গত দুই বছরে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে রাজনৈতিক ও বৈদেশিক লেনদেনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে আগামী এক বছরে প্রবৃদ্ধি আবার গতি পেতে পারে। সে ধারাবাহিকতায় পরবর্তী তিন বছরে প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। এসঅ্যান্ডপি আরও জানিয়েছে, ২০২৬ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন এই প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের এখনো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, প্রতিষ্ঠানগত কাঠামোর পরিবর্তন, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এসঅ্যান্ডপি বলেছে, যদি একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের মাধ্যমে আরও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের ভিত্তি গঠনে সহায়ক হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছিল এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। প্রতিষ্ঠানটি তখন বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করে। সংস্থাটি তখন বলেছিল, দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে, সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের ঋণমান কমানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র ঋণম ন র জন ত ক প রব দ ধ উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
বিগত শতকের ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, এই দুই দশক ছিল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যময় ঘটনাবহুল সময়। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এই কালপর্বে সমাজতন্ত্রের পতনসহ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা মানুষের বিশ্বাস, আদর্শ, চিন্তা, অভিব্যক্তি ও জীবনাচরণে নানাভাবে প্রভাব রেখেছে। শিল্পীদের ভাবনায় সমকাল কেমনভাবে তার সৃজনকলায় উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার একঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো কলাকেন্দ্রে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৯/৪ নম্বর বাড়ির কলাকেন্দ্রে শুরু হলো ‘ফিরে দেখা’ নামে ১৪ শিল্পীর যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্বে যাঁরা চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা পরবর্তীকালে ‘ঢাকা পেইন্টার্স’, ‘সময় গ্রুপ’সহ বেশ কিছু গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকেই কাজী রাকিব, দীপা হক, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, সাইদুল হক জুইস, ফারেহা জেবা, রতন মজুমদার, হাবিবুর রহমান, রুহুল আমিন কাজল, লালা রুখ সেলিম, তৌফিকুর রহমান ও ওয়াকিলুর রহমানের প্রায় ৬০টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই ‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনী।
শিল্পীরা মূলত আশি ও নব্বই দশকে যেসব কাজ করেছিলেন, তার কিছু কিছু নমুনা রয়েছে এখানে। অধিকাংশ কাজই শিল্পীদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের। ছাপচিত্র, জলরং, ড্রয়িং, মিশ্রমাধ্যম, অ্যাক্রিলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রকলা ও ভাস্কর্য রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।
কলাকেন্দ্রের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচলিত অর্থে কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি থাকেন না। প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে এক বা একাধিক আলোচক আলোচনা করেন। সূচনা বক্তব্যে কলাকেন্দ্রের পরিচালক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে দুই দশকজুড়ে সমাজ ও সমকালীন ভাবনা ও মনোভাব শিল্পীদের কাজে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছিল, তার একটি খণ্ডচিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।
‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনীটির মূল আলোচক ছিলেন অধ্যাপক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিগত সময়ের শিল্পীদের কাজ দেখা ও পর্যালোচনার সুযোগ কম। সরকারিভাবেও তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম বিগত শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জানতেই পারে না। দেশের ইতিহাসে ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ এক বিশেষ অধ্যায়। এ সময় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের প্রভাব শিল্পকলায় প্রতিফলিত হয়েছিল। সে সময়ের তরুণ শিল্পীরা বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিবর্তন, ইতিহাস ঐতিহ্য, আপন সংস্কৃতিকে তাঁদের নিজেদের মতো করে ধারণ করেছিলেন। তাঁরা যে শিল্পভাষা, ভাবনা, উপকরণ, উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা আমাদের চিত্রকলায় এক নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে। সেই তরুণদের অনেকেই তাঁদের কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। নিজের কাজে অনেক পরিণত হয়েছেন। খ্যাতি অর্জন করে বর্তমানে দেশের অন্যতম শিল্পী হয়ে উঠেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নানাভাবে পথ দেখিয়েছেন।’
শিল্পের আয়নায় অতীতকে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা এই প্রদর্শনীতে এলে।