কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়, শূন্যপদে নিয়োগসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং দুদকের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চিঠি থেকে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়, জনবল নিয়োগ এবং প্রশাসনিক নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী এবং উপ-সহকারী পরিচালক মো. এমরান খানের সমন্বয়ে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করা হয়েছে। সেই এনফোর্সমেন্ট টিম গত ২০ জুলাই (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দেয়।

আরো পড়ুন:

মেধার ভিত্তিতে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হবে: কৃষি উপদেষ্টা 

জুবাইদার সাজা বাতিল, সব মামলায় খালাস তারেক রহমান

চিঠিতে দুদক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষে কত একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, কি প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে, অধিগ্রহণের জন্য কত টাকা বরাদ্দ ছিল, কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ১২টি ক্যাটাগরিতে ২২টি শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্র ইত্যাদি রেকর্ডপত্র সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। 

এ বিষয়ে দুদকের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “আমাদের কাছে জমি ক্রয়, জনবল নিয়োগে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ এসেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর কিছু রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের কাছে দুদকের একটি চিঠি এসেছে। সেই চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক সাত কার্যদিবসের মধ্য আমরা রেকর্ডপত্র পাঠাব।”

২০২১ সালের মে মাসে সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে অধিগ্রহণ করা ১৯৪.১৯ একর জমির জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ৪৭১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার ৫৬ টাকার চেক হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সেই জমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই