চাঁদার জন্য অপহরণ-নির্যাতনের মামলাকে ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন’ বললেন রাজশাহীর যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা
Published: 26th, July 2025 GMT
রাজশাহীতে চাঁদার জন্য ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নির্যাতনের অভিযোগে থানায় করা মামলাকে মিথ্যা ও ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন’ বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন আসামি ও যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার আসামি রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানি, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হকসহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনচাঁদার জন্য ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর টর্চার সেলে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা২২ ঘণ্টা আগেগত বুধবার রাতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন আবাসন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ ছিল, আসামিরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া থানায় নিয়ে চাপ দিয়ে মাত্র ২৭ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক ভবনের ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট যুবদল নেতা মোজাদ্দেদ জামানির নামে লিখে দিতে বায়নানামার চুক্তিপত্রে সই দিতে বাধ্য করা হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোড়ামারা এলাকায় ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকার বেশি। পাওনা ২৭ লাখ টাকায় ওই ফ্ল্যাট নিতে মোজাদ্দেদ জামানি বায়নানামায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছেন বলে মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করছেন।
প্রশাসনের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ অস্বীকার করেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করি না। বাদী যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, সেটিই রেকর্ড করা হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা করেছেন এ কথা তিনি কোথাও বলেননি। তবে নিচের দিকের কিছু নাম বোয়ালিয়া থানার ওসি ঢুকিয়েছেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা মোজাদ্দেদ জামানি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উভয়ের সম্মতিতেই চুক্তি হয়েছে। দুই লাখ টাকা চাঁদার জন্য অপহরণের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মোস্তাফিজুর রহমান একজন প্রতারক। তিনি সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর স্ত্রী রেনীর ঘনিষ্ঠজন এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক। মোস্তাফিজুর রহমান আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০২৩ সালে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ২৭ লাখ টাকা নেন, কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তিনি ফ্ল্যাট দেননি।’
মোজাদ্দেদ জামানি বলেন, সেই টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তাঁরা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মোস্তাফিজ সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাই গত ৩০ জুন বোয়ালিয়া থানায় সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি আপসনামা চুক্তি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপ ও সামাজিক চাপের মুখে মোস্তাফিজ নিজেই আপসনামা সম্পাদনে সম্মত হন।
মোজাদ্দেদ জামানি বলেন, ‘যেহেতু আমারও একটি ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন ছিল, তাই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি আমিনুল ইসলামের ফ্ল্যাটটি তাঁর পক্ষে হয়ে কেনার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তিনি (মোস্তাফিজ) ফ্ল্যাট হস্তান্তরের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমার ও আমার রাজনৈতিক অনেক সহকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা মামলা করেন। এটি সাজানো মামলা।’ তিনি দাবি করেন, ‘মোস্তাফিজ নিজেই স্বীকার করেছেন যে মামলাটি তিনি প্রশাসনের “প্রেসক্রিপশন” অনুযায়ী করেছেন। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা তাঁকে ফোন করে এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মামলাটি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে বলে মোস্তাফিজ জানান। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও প্রেসক্রিপশনে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে নজরুল হুদার কাছে স্বীকার করেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তির প্রতারণা নয়, এটি প্রশাসন-সমর্থিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ষড়যন্ত্র বলে এখন মনে হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন স ব ক র কর দ র জন য অন য য় কর ছ ন য বদল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।