৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর
Published: 28th, July 2025 GMT
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে অচল থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাকসুর তফসিল–সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক।
তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা, শিক্ষার পরিবেশকে সমুন্নত রাখা ও আরও সুসংহত করা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার্থে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে এই নির্বাচন ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাকসু নির্বাচন কমিশনার এ মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে।’
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত তফসিল বিবরণীতে বলা হয়, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে ৩১ জুলাই, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৬ আগস্ট, ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ করা যাবে ৭ আগস্ট, ভোটার তালিকায় নিষ্পত্তি ১০ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৪ আগস্ট।
তফসিল বিবরণীতে আরও জানানো হয়, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ১৭ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২১, ২৪ ও ২৫ আগস্ট; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৭ ও ২৮ আগস্ট; প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ৩১ আগস্ট এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ সেপ্টেম্বর।
আরও পড়ুনতিন দিনের মধ্যে রাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশসহ শিক্ষার্থীদের ৪ দাবি০৫ মে ২০২৫প্রকাশিত তফসিলে বলা হয়, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর, ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি আবাসিক হলে ভোট গ্রহণ, অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ওই দিনই ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘নির্বাচনে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে ছাত্র রাজনৈতিক ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এ ছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেই আমরা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছি। নির্বাচন–সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে সাংবাদিকসহ সব অংশীজনের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষণকে মূল্যায়ন করে নির্বাচন আয়োজন করতে যেকোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত পথনকশা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আজ বিকেলে নির্বাচনের বিস্তারিত তথ্য জানাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর আগস ট গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান