রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। তবে, বরিশাল বিভাগ ডেঙ্গুর হট স্পট হয়ে উঠেছে। বুধবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত এ বিভাগের জেলাগুলোতে ৫ হাজার ৮৩৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বরিশাল বভিাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি বরগুনা জেলায়। এ জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনা যেন একেকটি ডেঙ্গু মশার কারখানা। বরগুনা জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালগুলোতে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ২৯৭ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২২৪ জন। চলতি বছরে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ৬ জন ডেঙ্গু রোগী।
অনেক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসাসেবা মিলছে না। বাধ্য হয়েই অনেক রোগী বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালসহ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন।
আরো পড়ুন:
ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৩, আক্রান্ত ৪২৫
বরগুনায় ডেঙ্গুতে আরো ২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৩
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৮২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বরিশাল সদর হাসপাতালসহ জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন আরো ৩৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী। শেবাচিম হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জন ডেঙ্গু রোগীর। শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দুই তৃতীয়াংশই ডেঙ্গু রোগীই বরগুনা জেলার বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সেবিকারা।
পটুয়াখালী জেলায় চলতি বছরে ৭৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগীর মধ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১৯ জন এবং পটুয়াখালীর অন্যান্য হাসপাতালে ৫২৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে একজন ডেঙ্গু রোগীর।
পিরোজপুরে চলতি বছরে ২৪৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব রোগী জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। বর্তমানে এ জেলায় ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তবে, পিরোজপুরে চলতি মৌসুমে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।
বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রেকোপ সবচেয়ে কম ভোলা ও ঝালকাঠী জেলায়। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভোলা জেলায় ৮৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। বর্তমানে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী এ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ জেলাতেও কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।
ঝালকাঠী জেলায় এ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ জন। বর্তমানে ৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ জেলাতেও কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।
চলতি বছরের শুরুতেই বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও বরিশালের হাসপাতালগুলোতে বাড়েনি চিকিৎসাসেবার মান। বিভাগের প্রতিটি হাসপাতালেই এখন ডেঙ্গু রোগীর ছড়াছড়ি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড থাকলেও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে লোক দেখানো ডেঙ্গুর ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। আসনের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় সেখানে নেই চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিবেশ। ছোট একটি কক্ষে ৫ থেকে ৭ জন রোগীর থাকার সুযোগ থাকলেও গাদাগাদি করে সেখানে রাখা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ জনকে। শুধু তাই নয়, শয্যার পাশাপাশি ওই কক্ষগুলোতে মেঝেতে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। একইসঙ্গে সাধারণ ওয়ার্ডে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরেও রাখা হচ্ছে রোগীদের। রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্পক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে মনে করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এদিকে, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও গত এক মাস ধরে বরিশাল বিভাগ জুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসাসেবার মান। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তাদের প্রয়োজনীয় স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে না। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। শুধু জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতেই নয়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদেরও বাইরের ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালে ডেঙ্গুর টেস্ট করাতে নানা ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এ কারণে বাইরের ল্যাব থেকে টেস্ট করাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে এখন চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছেন আবুল হাসান নামের এক রোগীর স্বজন। তিনি জানান, বরগুনা থেকে তিনি তার ভাইকে নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। এখানে সাধারণ রোগীদের সাথে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। দেওয়া হয়নি মশারি। সবকিছুই বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল বলে মনে হচ্ছে না। হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। তাই, ফ্লোরেই রাখা হয়েছে তার ভাইকে।
গৌরনদী থেকে আসা রোগীর স্বজন শফিক জানান, সোমবার দুপুরে তিনি তার বোনকে নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। স্বাস্থ্যসেবা অনেক নিম্নমানের। হাসপাতালের সেবিকার সংখ্যাও কম।
এ বিষয়ে বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা.
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেছেন, ১ হাজার বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাতে সবাইকে সিট দেওয়া সম্ভব হয় না। রোগী বেশি হলে আমাদের কী করার আছে? বাধ্য হয়েই তাদেরকে ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। রোগী বেশি এবং সেবিকা ও চিকিৎসক কম থাকলে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত সবাইকেই মশারি ও স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ঙ গ র প রক প বর শ ল ব ভ গ বছর র শ র স য ল ইন জন ড ঙ গ হয় ছ ন উপজ ল সরক র বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫