ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের মূল্য সংশোধনে আবারও বড় ধাক্কা খেয়েছে শেয়ারবাজারের সূচক ও লেনদেন। কয়েক দিনের ব্যবধানে লেনদেন প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমে গেছে। আর এই কয় দিনে সূচকও কমেছে ১০০ পয়েন্টের বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ বৃহস্পতিবার ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে। তাতে দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। সূচকের এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে কয়েকটি ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দরপতন। ঢাকার বাজারে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭০৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৮৪ কোটি টাকা কম।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের পতনে যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দরপতন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, পূবালী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ও প্রাইম ব্যাংক। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকটি আজ প্রায় ২৯ পয়েন্ট কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনে। আজ ডিএসইতে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে সাড়ে ৬ পয়েন্টের বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এক মাসে শেয়ারবাজার উত্থানে ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এরপর কয়েক দিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে। তাতে সূচক ও লেনদেনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ জুন ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৩ টাকা। সেখান থেকে তা বেড়ে ৪ আগস্ট ৪৮ টাকায় উঠেছে। সেই হিসাবে এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ১৫ টাকা বা ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এরপর দুই দিন ধরে কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে এটির শেয়ারের। একই অবস্থা ব্র্যাক ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম, স্কয়ার ফার্মা, বিএসসি, পূবালী ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির বেশ কিছু শেয়ারের। এসব শেয়ারের দাম অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির পর এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিরই দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫টির দাম। বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারের এই দরপতন সূচক ও লেনদেনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে কিছু শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির পর কিছুটা মূল্য সংশোধন হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেটিও এখন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, কয়েকটি শেয়ারে ৩০-৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির পর বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ ওই শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। মূল্য সংশোধনে দাম কমার ফলে নতুন করে আবার ওই শেয়ারে বিনিয়োগ হবে। এভাবেই উত্থান-পতনে শেয়ারের দাম টেকসই হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ য় র র দরপতন ড এসইএক স শ য় রব জ র পর ম ণ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আলুর দরপতন, কেজিতে ১০ টাকা লোকসান কৃষকের

যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুরের মাঠে এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদন করতে কৃষকের ৮ থেকে ৯ টাকা খরচ হয়েছে। সেখান থেকে বাছাই করে হিমাগারে রাখার উপযোগী প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ১৫ টাকার মতো। এর সঙ্গে হিমাগারভাড়া দিতে হয়েছে কেজিতে ৬ টাকা। বস্তা কেনাসহ পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে রয়েছে আরও তিন টাকা। অর্থাৎ হিমাগারে এক কেজি আলু সংরক্ষণ করতে ২৪ টাকা খরচ হয়েছে। সংরক্ষণের পাঁচ মাস পরে এখন হিমাগারে পাইকারিতে সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বেচাকেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের ১০ টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাপারীরাও লোকসানে রয়েছেন।

নোঙরপুর গ্রামের আলুচাষি বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর ৩৩ শতকের ৭ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। বিঘাতে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা মতো। বৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে। সেখান থেকে ৫০ কেজি ওজনের ১০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। কিন্তু পাইকারি পর্যায়েই আলুর দরপতন ঘটেছে। মার্চ থেকে ৫ মাস আলু সংরক্ষণের পরেও দেখা যাচ্ছে, কেজিতে ১০ টাকা করে লোকসান হয়ে যাচ্ছে। তাই অভাব থাকলেও আলু বের করতে পারছি না।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় মোট ১১টি হিমাগারে এ বছর ৪০ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন খাওয়ার আলু ও ৩ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়। এসব হিমাগার থেকে গত ৫ মাসে ১০ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন খাবার আলু বের করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে ৩০ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের জ্যেষ্ঠ জেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, ‘এটা ঠিক যে ১০ টাকা না হলেও প্রতি কেজি আলুতে কৃষকদের ৫ থেকে ৭ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে আলুর বাজার চাঙা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ব্যবসায়ীরা মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানির চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া অতি বৃষ্টির কারণে এবার সবজি উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে আলুর চাহিদা বাড়বে। ফলে এর দাম বেড়ে যাবে।’

স্থানীয় আলুচাষিরা বলছেন, প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। এখন সেই আলু বিক্রি করে তাঁরা প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনছেন। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

আলুতে লোকসান হওয়ায় হিমাগার থেকে আলু বের হচ্ছে কম। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইটঘাট এলাকার সরদার রোকেয়া কোল্ডস্টোরেজে এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে খাওয়ার আলু ৬ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন ও বীজ আলু ৯০০ মেট্রিক টন সংরক্ষণ করা হয়। গত ৫ মাসে মাত্র ৫৪৫ মেট্রিক টন খাওয়ার আলু বের হয়েছে।

হিমাগারটির সিনিয়র সুপারভাইজার বলেন, কেজিতে ৯ থেকে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকদের।

এদিকে চাষিদের আশঙ্কা, যদি বর্তমান পরিস্থিতি চলতেই থাকে তাহলে তাঁদের অনেকেই আগামী মৌসুমে আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন। ফলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে যশোর জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এই জমি থেকে আলুর ফলন পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যশোরের ভূমি নিচু। তারপরও এই জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের সময়ে কৃষকেরা ভালো দাম পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলুর দরপতন, কেজিতে ১০ টাকা লোকসান কৃষকের