বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলেয়া (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) আলেয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু আলেয়াকে বরিশাল নিতে পারেননি তার স্বজনরা। সেসময় তার ছেলে সরোয়ার বন্ডে স্বাক্ষর করলে চিকিৎসকরা তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালেই চিকিৎসা প্রদান করেন। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। 

আলেয়া বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া এলাকার মরহুম নূর মোহাম্মদের স্ত্রী ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৪ আগস্ট সোমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন আলেয়া। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। 

এসময় আলেয়াকে বরিশাল নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তার স্বজনরা। পরে স্বজনদের অনুরোধে বন্ডে স্বাক্ষর রেখে আলেয়াকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। 

এরপর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ বিষয়ে আলেয়ার মেয়ে রুবিনা আক্তার বলেন, “বরিশালে চিকিৎসা খরচ বহন করার টাকা আমাদের ছিল না। এমনকি বরিশাল নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও নেই।” 

এ বিষয়ে আলেয়ার পুত্রবধূ সাথী আক্তার বলেন, “গত সোমবার আমার শ্বাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। গতকাল তাকে বরিশাল রেফার্ড করা হয়েছিল। আমাদের উন্নত চিকিৎসা করানোর টাকা নাই। পরে বন্ডে সই করে এখানে আবার ভর্তি করাই।”

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স হাওয়া বলেন, “চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলেয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর তিনি কোন রেসপন্স করছিলেন না। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।”

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.

তাজকিয়া সিদ্দিকা রাইজিংবিডিকে বলেন, “রোগীর অবস্থা সংকটা পূর্ণ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু স্বজনরা তাকে বরিশাল নিয়ে যাননি। আমাদের কিছুই করার ছিল না।”

ঢাকা/ইমরান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল ন বরগ ন আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যালয়ে আগুন, ২৫ শিক্ষার্থী আহত
  • ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’