সুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার ইবাদত
Published: 8th, August 2025 GMT
অন্যের সঙ্গে চলাফেরা ও আচার-আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করলে সমাজের অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুন্দর হবে। পরকালে অশেষ সওয়াব হবে।
মন্দ আচরণের কারণে সমাজে যেমন অপাঙ্ক্তেয়ও হতে হবে, পরকালেও গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ও সুন্দর কথা বলো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৮৩)
সুন্দর ব্যবহার, সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবীজি (সা.
‘মুমিনদের জন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন (কোমল আচরণ করুন)।’ (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৮৮)। ‘কেউ যখন তোমাদের সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ জানাবে, প্রত্যুত্তরে তোমরা তাকে তার চেয়ে সুন্দরভাবে সম্ভাষণ জানাও কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬)। ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার (সুন্দর আচরণ) করবে এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৮৩)। ‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে, সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)। ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতসমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ, সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩৭-৩৮)
সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন’রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটুকথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ (তিরমিজি)
‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তা হলো আল্লাহ তাআলার ভয় ও সুন্দর আচরণ।’ (তিরমিজি)। ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল।’ (মুসলিম)।
উত্তম আচরণের বিনিময় জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।’ (আবু দাউদ)। ‘যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখিরাতের সব কল্যাণই লাভ করল। আর রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উত্তম আচরণ সদকা। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘উত্তম আচরণ ও ভালো কথাও একটি সদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান-খয়রাত মানুষকে শোচনীয় মৃত্যু হতে রক্ষা করে আর সুন্দর আচরণ আয়ু বৃদ্ধি করে। সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। ‘যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত, সে সমুদয় কল্যাণ থেকেই সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত।’ (মুসলিম)। ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সদকার সওয়াব হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)। ‘সর্বোত্তম ইমানদার হচ্ছে ওই লোক, যার আচরণ সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল র ব যবহ র র আচরণ আচরণ ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।
আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।
প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।
দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।
ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।
অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।
এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:
সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।
সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।
অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।
এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”
ঢাকা/আমিনুল