চব্বিশের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের হামলা ও গুলিতে নিহত ও আহত হন অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪০০ নিহত ও ২৩ হাজার আহতের তথ্য তুলে ধরা হয়।

আন্দোলনের সময় হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এখন পর্যন্ত (৫ আগস্ট ২০২৫) রাজধানীর ৫০টি থানায় মামলা হয় ৭০৭টি। এসব মামলায় আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে।

মামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাসহ ৫ হাজার ৭৯ জন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি মো.

শহিদুল হক ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনসহ ২৩ জন পুলিশ সদস্য। গ্রেপ্তার অপর পুলিশ সদস্যরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া (৬৪), সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম (৫২), সাবেক ডিসি তানভির সালেহীন ইমন, সিলেটের সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান (৪৬), সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (৪৪), ডিবি লালবাগ জোনের সাবেক ডিসি মশিউর রহমান (৪৮), অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ধানমন্ডি জোন) আব্দুল্লাহ হিল কাফি (৩৯), সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. তানজিল আহমেদ (৩৭), এডিসি (বর্তমানে এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. শাহেন শাহ (৪১), অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা (৪৩), সাবেক গুলশান থানার ওসি বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম (৫৮), সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আপেল উদ্দিন (৩৯), সহকারী পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ) মো. ইফতেখার মাহমুদ (৩৪), যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি মো. আবুল হাসান (৫২), পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাজহারুল ইসলাম (৪৯), উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. সাজ্জাদ-উজ-জামান (৩৬), নায়েক সজিব সরকার (২৭), কনস্টেবল সুজন হোসেন (২০), শোয়াইবুর রহমান ও মো. বায়োজিদ বোস্তামী (২০)।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ বাসসকে এসব তথ্য দিয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিন চৌধুরী আজ শুক্রবার বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৭০৭টি। এসব মামলায় মন্ত্রী, এমপি, আমলাসহ গ্রেপ্তার হন ৫ হাজার ৭৯ জন। সাবেক দুই আইজিপিসহ গ্রেপ্তার রয়েছেন ২৩ পুলিশ সদস্য। মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নমন ত র ল ইসল ম মন ত র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা দেশে টিকতে পারবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “জুলাই থাকবে-মীর মুগ্ধ মঞ্চ সেই বার্তাই দিচ্ছে। এটি মনে করিয়ে দেয়, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশে টিকতে পারবে না।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বাস্তবায়িত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরোবরে নির্মিত ‘মুগ্ধ মঞ্চ’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “গত ১৫-১৭ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও জনগণ কথা বলতে পারবে না বা শাসকগোষ্ঠী প্রশ্নবিহীনভাবে ক্ষমতায় থাকবে। এই মঞ্চ সেই প্রতিবাদের প্রতীক।”

আরো পড়ুন:

সরকার শহীদদের পুনর্বাসন ও স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করছে: আদিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকার: এক বছরে সফলতা ও ব্যর্থতা

শহীদদের বাবা-মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যে দাবিগুলো তুলে ধরেছেন, আমরা তা সমর্থন করি। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো মায়ের বুক খালি হবে না, কোনো বাবাকে আর সন্তানের লাশ কাঁধে বহন করতে হবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলন করব, প্রতিবাদ করব। কিন্তু আমাদের বুকে যারা গুলি চালায়—সেই ধরনের পুলিশ বাহিনী আমরা চাই না।”

২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেছিল—রাষ্ট্রের মেরামত দরকার। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তা আরো একবার প্রমাণ করেছে। তাই বলছি—রাষ্ট্রের মেরামত চলবে এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, নারী শহীদ নাঈমা সুলতানার মা, শহীদ জাবিরের বাবা, জুলাই আহত যোদ্ধা আব্দুল আজিজ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ