ইসরায়েলের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধে৵ও গাজায় একটি ছোট বইয়ের দোকান ‘ইকরা কিতাবাক’ যেন আলো ছড়াচ্ছে। দোকানটি ২০২৪ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে চালু হয়। গাজার ঠিক কেন্দ্রস্থলে, নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্পের ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে।
আরবি ও ইংরেজি ভাষার উপন্যাস, কবিতা, দর্শন, ধর্মীয় ও আত্মোন্নয়নমূলক বই পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে রাস্তার পাশে কাঠের অস্থায়ী তক্তার ওপর। ধূসর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সেগুলোর রঙিন প্রচ্ছদগুলো যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় আশপাশের নৈরাশ্যের প্রতি।
আধা বিধ্বস্ত বা পুরোপুরি ভেঙে পড়া ভবন এবং বিমান হামলার ধ্বংসাবশেষে ঘেরা সেই জায়গায় বই যেন একেবারেই বেমানান; কিন্তু বইগুলোর শিরোনাম সেখানকার আশা, ভালোবাসা, ক্ষতি ও প্রতিরোধের গল্প বলছে। দোকানটি হয়ে উঠেছে ছোট্ট ফিলিস্তিন, যেটি ইসরায়েলের গণহত্যা মুছে ফেলতে চেয়েছে।
এটি পরিচালনা করছেন দুই ভাই—সালাহ ও আবদুল্লাহ সারসুর। তাঁরা নিজেদের বাড়ি হারিয়েছেন এবং বর্তমানে নুসাইরাত ক্যাম্পে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ দুই ভাইয়ের। তাই ২১ মাস ধরে গাজায় চলতে থাকা ইসরায়েলি গণহত্যা ও দুর্ভোগ সত্ত্বেও তাঁরা পড়া বন্ধ করেননি। তবে এ সময়ে বই পাওয়া খুব কঠিন ছিল; কিন্তু আবদুল্লাহ একাধিকবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও খরচ করে গাজা শহরের সামির মনসুর বইয়ের দোকানসহ উত্তর গাজার বিভিন্ন স্থানে যান ভালো বইয়ের খোঁজে।
আবদুল্লাহর ভাষ্য, এটা আমরা কেবল নিজেদের জন্য করিনি। আমরা জানতাম, ক্যাম্পে আরও অনেকে আছেন, যাঁরা বই পড়তে ভালোবাসেন; কিন্তু সবাই বের হতে পারছেন না।
এ ভাবনা থেকে দুই ভাই সিদ্ধান্ত নেন, বইকে মানুষের কাছে নিয়ে আসবেন। তাঁরা নিজেদের স্বল্প সঞ্চয় একত্র করে উত্তর গাজা থেকে অনেকগুলো বই কিনে আনেন এবং সেই বই দিয়েই শুরু করেন তাঁদের ছোট্ট দোকান।
এই দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়, মানুষের জন্য বই সহজলভ্য করা, যেন মানুষ আবার পড়ার অভ্যাসে ফিরতে পারেন।
সালাহ বলেন, ‘এটা শুধু একটি ব্যবসা শুরু করার বিষয় নয়, এটি মানুষের সঙ্গে আমাদের ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়ার বিষয়। আমরা চাই, মানুষ আবার পড়া শুরু করুক।’
ওই ছোট্ট দোকানটি হয়ে উঠেছে সেখানকার মানুষের সময় কাটানোর কেন্দ্রবিন্দু। মানুষ যে দোকানটিতে ছুটে যাচ্ছেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ফিলিস্তিনের একটি সমৃদ্ধ সাহিত্য ঐতিহ্য আছে এবং সেখানে আছে বিশ্বের উচ্চতম সাক্ষরতার হার। ‘দ্য ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ পড়তে পারে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গোটা ফিলিস্তিনে সাক্ষরতার হার ৯৭ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৮৬ শতাংশ।
সারসুর ভাইদের দোকানটি এমন স্থানে পরিণত হয়েছে, যা গাজায় একেবারেই বিরল। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকাংশ পাঠাগার, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল ধ্বংস করেছে। তা–ই নয়, তারা অনেক কবি ও লেখককে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনি লেখক আমাল আবু সাইফ বলেন, ‘যখনই মনে হয় আর সহ্য করতে পারছি না, আমাকে পৃথিবী থেকে অন্য এক জগতে পালাতে হবে, তখনই আমি বইয়ের মাধ্যমে পালিয়ে যাই। এই বইয়ের দোকান এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় একমাত্র জায়গা, যেখানে আমি আবার নিজেকে আগের মতো ভাবতে পারি।’
আমালের বিশ্বাস, পড়ালেখা হলো তাঁর প্রতিরোধের একমাত্র পথ। প্রয়াত কবি মাহমুদ দারবিশের দেখানো পথকে তিনি মনে করেন, অত্যাচারিত মানুষের লেখা একধরনের প্রতিরোধ।
সম্প্রতি আমালের প্রথম উপন্যাস আথির গাজা (প্রিয় গাজা) প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা একটি ছোট তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিছুই করার ছিল না; না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, না ক্লাস—শুধু খাবার ও পানির খোঁজে ঘুরে বেড়ানো আর কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা। একদিন নিজেকে বললাম, আমি কত দিন এভাবে বসে থাকব? না, আমি কিছু করতে চাই। আমি পরিবর্তন আনতে চাই।’
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রণা মুঠোফোনের নোটস অ্যাপে লিখতে শুরু করেন। শুরুতে অল্প অল্প করে লিখতেন; কয়েক মাস পর সেই লেখাগুলোকেই তিনি বড় করে উপন্যাসে রূপ দেন। জুলাইয়ে তাঁর বইটি প্রকাশিত হয়। এখন তা সমগ্র আরবে পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে কথাসাহিত্যিক হাসান আল-কাতরাউই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘সারসুর ভাইদের বই তাঁর কাছে জীবনরেখার মতো। ওরা (ইসরায়েলিরা) আমাদের বাহ্যিকভাবে ধ্বংস করে আর আমরা নিজেদের গড়ি ভেতর থেকে।’
হাসান আল-কাতরাউই বলেন, খাবারের ক্ষুধা সাময়িক; কিন্তু পড়ার ক্ষুধা চিরন্তন।
অধিকাংশ ফিলিস্তিনি গর্ব করেন তাঁদের পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। প্রায় দুই বছর ধরে সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। অথচ এই ভয়াবহ অবস্থাতেও মানুষ পড়া, লেখা ও শেখা থামাননি।
ইকরা কিতাবাক এখন কেবল বই কেনার জায়গা নয়; এটি হয়ে উঠেছে আলাপচারিতার স্থান, শিশুদের জন্য গল্পের বইয়ের পাতা উল্টে দেখা ও তাদের হারানো শিক্ষাজীবনকে খানিকটা হলেও পূরণ করার জায়গা। প্রবীণদের জন্য পুরোনো মুখস্থ কবিতা আবার ফিরে পাওয়া; আর লেখকদের জন্য নতুন গল্প ও বই লেখার অনুপ্রেরণার জায়গা।
গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে অনেক লাইব্রেরি আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাজাজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ পরিষ্কার করে যে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু কেবল অবকাঠামো নয়, একটি জাতির ইতিহাস মুছে ফেলার, কণ্ঠস্বর স্তব্ধ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা ধ্বংস করার চেষ্টা।
কিন্তু চিন্তা কখনো মারা যায় না। যত দিন চিন্তা বেঁচে থাকবে, বইয়ের প্রয়োজন থাকবে, যা সারসুর ভাইয়েরাই প্রমাণ করছেন।
সূত্র: দ্য ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদা, লিটারেরি হাব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র দ র জন য দ ক নট স রস র বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র এক ফোনকলেই গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে পারে, কিন্তু করে না কেন?
মার্কিন রাজনৈতিক পরিসরে যখন কেউ ফিলিস্তিনের মানবিক বিপর্যয়ের কথা তোলে, তখনই প্রশ্ন আসে, ‘৭ অক্টোবরের হামাসের বিষয়টা কী হবে?’ এ প্রশ্ন যেন একটি অস্ত্র, যা দিয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলা মানুষদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, বিশেষত মার্কিন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। অথচ এর পাল্টা জবাব হতে পারে, ‘৬ আগস্টের বিষয়টা তাহলে কী হবে?’
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় প্রথম পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। তিন দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমা ফেলা হয়। এই দুই হামলায় আনুমানিক দুই লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল।
এর আগেই ১৯৪৫ সালের মার্চে ‘অপারেশন মিটিংহাউস’ নামে পরিচিত ভয়াবহ অগ্নিবোমা হামলায় টোকিওতে কয়েক হাজার মানুষ মারা যান এবং এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
আজ গাজার গণহত্যার সময় যে ‘সংখ্যার রাজনীতি’ আমরা দেখছি, তা এক শীতল বাস্তবতার প্রতিফলন। টোকিও অভিযানের নেতৃত্বদানকারী মার্কিন জেনারেল কার্টিস লে মে খুব ভালো করেই জানতেন, জনবহুল এলাকায় ন্যাপাম ফেলার মানে কী। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘যদি আমরা যুদ্ধে হেরে যেতাম, তাহলে আমাদের সবাইকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা হতো।’
আরও পড়ুনযে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল১৪ জুন ২০২৫লে মে শুধু জাপানেই থেমে থাকেননি। ১৯৮৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, মার্কিন বোমা উত্তর কোরিয়ার ২০ শতাংশ জনগণকে হত্যা করেছিল এবং ‘যা নড়াচড়া করেছে’—এ রকম সবকিছুকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
ইতিহাসবিদ ব্রুস কামিংস নিউজউইকে বলেছিলেন, ‘বেশির ভাগ আমেরিকান জানেনই না যে আমরা উত্তর কোরিয়ার শহরগুলো জাপান বা জার্মানির তুলনায় বেশি ধ্বংস করেছিলাম।…কিন্তু প্রত্যেক উত্তর কোরীয় জানেন। তাঁদের মগজে সেটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা কখনো এসব শুনি না।’
সম্মিলিত শাস্তির নীতিলে মে একসময় কিউবার বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন, যদিও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি তাঁকে আটকে দেন। কিন্তু ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায় ন্যাপাম হামলার সময় তিনি ‘মানুষকে পাথরযুগে ফেরত পাঠানোর’ বোমাবর্ষণ নীতিতে বিশ্বাস করতেন।
গালফ যুদ্ধ (১৯৯১) শুরুর আগেই লে মে মারা যান। কিন্তু আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া এবং আরও বহু মার্কিন আগ্রাসনে তাঁর তত্ত্ব বেঁচে আছে। আকাশ থেকে নির্বিচারে গণসন্ত্রাস চাপিয়ে দিয়ে স্থানীয় জনগণকে অমানবীয় করে তোলা হয়, যেখানে সবাইকে দোষী ধরা হয় এবং সম্মিলিত শাস্তি দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক মার্কিন বক্তব্যও এ ধারাই বজায় রেখেছে। ৮ সেপ্টেম্বর জেরুজালেমে এক বাসস্ট্যান্ডে দুই ফিলিস্তিনির হামলায় ছয়জন ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি ঘোষণা করেন, ‘এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আমরা ইসরায়েলের পাশে আছি।’
এখানে প্রশ্ন ওঠে: মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি ইসরায়েলপন্থী লবিগোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত? একই সঙ্গে কি দুটি বিষয় সত্য হতে পারে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খামখেয়ালি মন্তব্য বা ‘শান্তি উদ্যোগ’ আসলে কী বোঝায়?বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেন, আর বিশ্লেষক মুইন রাব্বানির ভাষায় ‘সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’ আবারও সক্রিয় হয়—‘টেরর টাওয়ার’, ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ ইত্যাদি প্রোপাগান্ডা শব্দগুচ্ছ ছড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ আড়াল করার প্রচেষ্টা চলে।
এখানে প্রশ্ন ওঠে: মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি ইসরায়েলপন্থী লবিগোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত? একই সঙ্গে কি দুটি বিষয় সত্য হতে পারে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খামখেয়ালি মন্তব্য বা ‘শান্তি উদ্যোগ’ আসলে কী বোঝায়?
আরও পড়ুনট্রাম্প ও নেতানিয়াহু মূলত ‘জেনোসাইড পুরস্কারের’ যোগ্য ২৭ আগস্ট ২০২৫প্রত্যাখানেযাগ্যতা বনাম বাস্তবতাএকসময় ‘প্লজিবল ডিনায়েবিলিটি’ (প্রত্যাখ্যানযোগ্যতা) ছিল মার্কিন কৌশলের কেন্দ্রীয় উপাদান। কিন্তু এডওয়ার্ড স্নোডেন, চেলসি ম্যানিং ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ফাঁস করা তথ্য সেই মুখোশ খুলে দিয়েছে। তবু ইসরায়েলের অস্বাভাবিক প্রভাব—মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে—আরও জটিল অস্বীকারযোগ্যতার কাঠামো তৈরি করেছে।
বাইডেন–হ্যারিস প্রশাসন ‘গাজা পিয়ার প্রকল্প’-এর মতো হাস্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে আর ট্রাম্প–ভ্যান্সের দল ‘উইটকফ প্ল্যান’ বা ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ হুমকির মতো কৌতুকময় নাটক করেছে। কিন্তু উভয় প্রশাসনই জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে এবং ইসরায়েলকে অব্যাহত সামরিক সহায়তা দিয়েছে। বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এক ফোনকল বা নির্বাহী আদেশেই গাজার গণহত্যা থামাতে পারত।
কিন্তু বাস্তবতা হলো মার্কিন রাজনীতি ও নিরাপত্তাকাঠামো ইসরায়েলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আইপ্যাকের নির্বাচনী তহবিল থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশিক্ষণ, নজরদারি প্রযুক্তি—সবখানেই ইসরায়েলি প্রভাব দৃশ্যমান।
প্রক্সি রাষ্ট্র ও মার্কিন আধিপত্যএতে প্রশ্ন ওঠে, ইসরায়েলি জায়নবাদী আদর্শ, প্রযুক্তি ও রাজনীতির এই অতিরিক্ত প্রভাব আসলে কি যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নীতির জন্যই এক ‘অস্বীকারযোগ্য’ প্রক্সি কাঠামো?
সিরিয়ার শাসন পরিবর্তন, লেবাননকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, ইরানকে লক্ষ্য করে যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা, মিসরকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ দিয়ে শ্বাসরোধ করা, আব্রাহাম চুক্তি—সবই সেই ইঙ্গিত দেয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকান ইহুদি সমাজ কোথায় দাঁড়াবে? সমর্থনকারী বা বিরোধী উভয় পক্ষের জন্যই এটি এক কঠিন বাস্তবতা। নেতানিয়াহু, যিনি আমেরিকায় বহু বছর কাটিয়েছেন, একদিকে প্রগতিশীলদের কাছে সমালোচিত, অন্যদিকে জায়নবাদীদের কাছে নায়ক হিসেবে বিবেচিত হন।
শেষ পর্যন্ত, বর্তমান কাঠামো কেবল ইসরায়েলকে মার্কিন প্রক্সি হিসেবে ধরে রাখছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত বিশ্বভূমিকা নিয়ে গভীরভাবে প্রশ্ন না ওঠে। একই সঙ্গে এই প্রক্সি ভূমিকা মার্কিন ইহুদি সমাজের জন্য নতুন বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা নিয়ে তাদের ভাবনা শুরুই হয়নি।
আমিয়েল আলকালাই মার্কিন কবি, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, প্রবন্ধকার, সমালোচক ও গবেষক।
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ।