ফাঁদে ফেলে প্রতারণার ভিডিও ধারণ করায় হত্যা করা হয়েছে গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে এ তথ্য জানান গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান।

পুলিশ কমিশনার বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাদশা নামের এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। পথে অভিযুক্ত গোলাপী তাঁকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার (হানিট্র্যাপ) চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে বাদশা গোলাপীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চান। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা অন্য আসামিরা বাদশাকে কোপাতে শুরু করেন। প্রাণ বাঁচাতে বাদশা দৌড় দিলে ঘটনাটি পেশাগত দায়িত্বে ভিডিও করেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন।

কমিশনারের ভাষ্য, ভিডিওটি দেখে ফেলেন আসামিরা। তাঁরা তুহিনকে ভিডিওটি মুছে ফেলতে বলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। একপর্যায়ে তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের ধরা হয়। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব, অন্য ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে জিএমপি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে আমরা আটজনকে চিহ্নিত করেছি। অন্য একজন রয়েছেন, তাঁকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারব।’

সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল করিম খান বলেন, ‘পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়, জনগণের সম্পৃক্ততা দরকার। সুরক্ষার দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। আমরা সাধারণত দুটি কাজ করি—প্রিভেনশন (অপরাধ প্রতিরোধ) ও ডিটেকশন (অপরাধ উদ্‌ঘাটন)। প্রিভেনশনটি আমরা করতে পারিনি। প্রিভেনশন সব সময় করা যায় না। বিশ্বের কোনো দেশেই ক্রাইম শূন্যে নামানো সম্ভব হয়নি। তাই শত চেষ্টার পরও অপরাধ হয়ে যেতে পারে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি।’

পুলিশ কমিশনার বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। দ্রুততম সময়ে মামলার বিচার সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ দমন করা যাবে। আসামিরা যদি না–ও স্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণই অপরাধ প্রমাণ করবে।

পুলিশ কমিশনার নিহত তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং সাংবাদিক কমিউনিটির কাছে যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার দায় স্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি গাজীপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হলে অপরাধ বেড়ে যায়। ‘আগের রেজিম’ এই জেলায় শক্তিশালী, তারা গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করছে, যা নজরদারিতে রাখতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ কমছে। তবে মানুষের স্বস্তি ফেরাতে জিএমপি কাজ করছে।

র‍্যাবের পৃথক সংবাদ সম্মেলন

এদিকে আজ সকালে গাজীপুর মহানগরীর পোড়াবাড়ী র‍্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী দাবি করেন, গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী মো.

স্বাধীন আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। আসাদুজ্জামান তুহিনকে টার্গেট করেই হত্যা করা হয়েছে। তা না হলে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করতেন না।

কে এম এ মামুন খান চিশতী বলেন, চক্রের নারী সদস্য বাদশা নামের এক ব্যক্তিকে বিরক্ত করছিলেন, তাই বাদশা সেই নারীকে আঘাত করেন। এ ঘটনার পর চক্রের অন্য সদস্যরা বাদশাকে ছুরি নিয়ে দৌড়াতে থাকেন। বিষয়টি দেখে ভিডিও করছিলেন তুহিন। চক্রের সদস্যরা ভিডিও করা দেখে ফেলায় তাঁর ওপর হামলা করেন। গ্রেপ্তার মো. স্বাধীন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নূর মোহাম্মদের ছেলে। বর্তমানে নগপাড়া মোহাম্মদ আলীর ভাড়াটে।

গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে একটি মার্কেটের ভেতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

আরও পড়ুনগাজীপুরে সাংবাদিক হত্যায় দুই কারণ সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ ৭ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন ত হ ন গ র প ত র কর ভ ড ও কর র কর ছ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৪’র বিপ্লব লুটেরাদের লুটে খাওয়ার জন্য হয় নাই : ড. আব্দুল মঈন খান

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, ইতিহাস কখনো ক্ষমা করে না। আজ আওয়ামীলীগ তাদের কুকর্মের জন্য আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হয়েছে।  তবুও তাদের অনুশোচনা নেই। আওয়ামীলীগ আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখছে, তারা পরাশক্তিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে, কিন্তু  তাদের আকাশ কুসুম স্বপ্ন কখনো বাস্ববায়ন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড.আব্দুল মইন খান।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে যে বিপ্লব সেই বিপ্লব কিন্তু লুটেরা দের লুটে খাওয়ার জন্য হয় নাই। সেই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে পুনরায় একটি লুটেরা শ্রেণি তারা এই দেশকে আবার দখল করে এই দেশকে লুটেপুটে খাবে সেটা হতে পারে না। ছাত্র জনতা যারা জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি তাদের রক্তের প্রতি আমরা বিশ্বাসঘাতকতা যেন কোন অবস্থাতেই না করি। সে বিষয়ে আপনাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে ।

শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া কলেজ অডিটোরিয়ামে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর ১৩ম মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষ্যে এক স্বরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় ডক্টর আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জিম্মি করে অর্থ পাচার ও লুটপাট করেছে শেখ পরিবার, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। বিগত সময়ে তারা পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছে। আর পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি দল গঠন করে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে। 

বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, বিএনপি সবসময় ধৈর্য্যের রাজনীতির শিক্ষা দেয়। রাজনীতিতে সহনশীলতা ও ভাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করাই বিএনপির লক্ষ্য। আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে অতীতের মতো নীতির সাথে কখন আপোষ করবে না। সকল প্রকার অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা যদি কোন অন্যায় করি আমরা যদি কোন দুর্নীতি করি আমরা যদি কোন চাঁদাবাজি করি তাহলে কিন্তু শহীদের রক্ত বৃথা যাবে সেটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমাদের কাছে দেশবাসীর কি প্রত্যাশা সেদিকে আমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের সকলের রাজনীতি হবে সকলে একসাথে মিলেমিশে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে নতুন করে গড়ে তুলবো সেই রাজনীতি। আজকে আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করবো। আসুন আমরা আওয়ামী লীগের হিংসা, রেশ, দমন, পিড়ন, মামলা ও হামলার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করি।

তাদের সেই অত্যাচার নির্যাতন গুম খুন এইসব রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করি। আগামীতে বাংলাদেশে একটি একটি শান্তির রাজনীতি তৈরি করি এবং সে রাজনীতি যেন হয় মানুষের কল্যাণের জন্য।

তিনি মতিন চৌধুরীর স্বৃতিচারন করে বলেন, আধুনিক রূপগঞ্জ ও পুর্বাচল উপশহরের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী। রূপগঞ্জের মানুষ এই পুর্বাচল উপশহর গড়ার বিরোধিতা করেছিলেন, তারা বুজতেই পারেনি এই পুর্বাচল একদিন আধুনিক শহর হবে। 

আজ পুর্বাচলকে ঘিরেই আশপাশের এলাকায় কতশত উন্নয়নের মহাযঙ্গ চলছে। অথচ উপজেলার কোন স্থাপনায় মতিন চৌধুরীর নামফলক বা স্বৃতি চিহ্ন। এবিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। 

স্বরণসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান মনির'র সভাপতিত্বে ও জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব এ্যাড আমিরুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন, জেলা যুদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন, জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, জেলা কৃষক দলের সভাপতি শাহিন মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হামিদুল হক খান, তারাবো পৌর যুবদলের সদস্য সচিব কাজী আহাদ, জেলা ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ