বগুড়ায় দুদকের গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ বলতে না পারায় জুতা নিক্ষেপ
Published: 10th, August 2025 GMT
বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি অনুষ্ঠানে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে আয়োজিত এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
আয়োজক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ শোনার জন্য এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এ জন্য সপ্তাহখানেক ধরে মাইকিং করে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ জমা নেয় দুদক। এসব অভিযোগ নিয়ে আজ গণশুনানি শুরু হয়। এই শুনানি চলাকালে বেলা পৌনে ১১টার দিকে দর্শক সারিতে থাকা সাখাওয়াত হোসেন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি সরাসরি অভিযোগ জানাতে চান। তবে সরাসরি অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন দুদক কর্মকর্তারা। অভিযোগ দিতে না পেরে ক্ষোভে মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন সাখাওয়াত। অবশ্য সেই জুতা মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হলেও পরে অভিযোগ শোনার আশ্বাস দিয়ে দর্শক সারিতে বসিয়ে রাখা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর অভিযোগ শুনানি না করেই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গণশুনানির জন্য ১৫ দিন ধরে ৩২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৯৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে দুদকে শুনানিযোগ্য ছিল ৬৭টি। এর মধ্যে ৫৭ জনের করা অভিযোগের গণশুনানি করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে জুতা নিক্ষেপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদকের চেয়ারম্যান ড.
দুদকের অভ্যন্তরেও দুর্নীতি আছে মন্তব্য করে গণশুনানিতে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, বগুড়ার সন্তান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খ্যাতি ছিল তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন না, দুনীতি প্রশ্রয়ও দিতেন না। বগুড়াবাসী কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। তিনি বলেন, দুদক কর্মকর্তারা কী করছেন, সেদিকেও সবাইকে নজর রাখতে হবে, যাতে কেউ দুনীতিগ্রস্ত হয়ে না পড়েন। কাজ হোক বা না হোক, কেউ ঘুষ দেবেন না। সরকারি চাকরি যাঁরা করেন, সেবাপ্রত্যাশীদের কাজ তাঁদের করতেই হবে, কাজ না করার কোনো বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠান শেষে দুদক কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গণশুনানিতে আসা ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, দুর্নীতি সমাজকে কলুষিত করে এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। দেশের বৃহৎ স্বার্থে দুর্নীতি রোধ করতে হবে। তবে দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে একাট্টা হতে হবে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুর্নীতিকে রুখে দিতে হবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আখতার হোসেন, দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহফুজ ইকবাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জুতা নিক্ষেপ করা সাখাওয়াত হোসেন পেশায় মৎস্যচাষি। তাঁর বাড়ি সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ও বিল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। ২০১২ সালে তিনি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গারামারা গ্রামে তিনটি বিল ও তিনটি পুকুর বার্ষিক ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা নেন। ২১ লাখ টাকা খরচ করে মাছ ছাড়েন। স্থানীয় বিরোধের জেরে ২০১৫ সালের ১৭ মে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই ও সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন একটি বিশাল বিল জবর দখল করেন। এ নিয়ে প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন ও সেনাবাহিনীর কাছেও অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি। গত জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আরও কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো বিচার পাননি। বাধ্য হয়ে বগুড়ায় দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ দিতে এসেছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সব দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও বিচার পাইনি। মানবাধিকার কমিশন দুবার আমার পক্ষে রায় দিলেও কোনো কাজ হয়নি। দুদকের এ গণশুনানি শুধু লোকদেখানো। রাগে ক্ষোভে মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছি। এতে অপরাধ হলে জেলে যেতেও রাজি আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিচালক মাহফুজ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, গণশুনানি ছিল বগুড়া সদরের। সাখাওয়াত হোসেন সোনাতলা উপজেলার অভিযোগ নিয়ে আসেন। তাৎক্ষণিক অভিযোগ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এ কারণে তাঁর অভিযোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শুনানিতে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত দুই কর্মকর্তাকে আটক করা ছাড়াও অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে উপস্থিত না থাকায় পদ্মা ইনস্যুরেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চার লেন প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বাঙালি নদ খনন প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা অনুসন্ধানের দেন দুদক চেয়ারম্যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণশ ন ন ত কর মকর ত অন ষ ঠ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে রাঙামাটির কাউখালী থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তার বিপি নম্বর ৯৪১৪১৭১২০৯।
অভিযুক্ত তুহিন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আরো পড়ুন:
৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ
মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তুহিনের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদানের সময় তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে নিজেকে ওই মুক্তিযোদ্ধার দৌহিত্র পরিচয় দেন। পরে সেই নকল হলফনামা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় পুলিশে চাকরি নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক বলেন, ‘‘তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। হলফনামায় দেওয়া স্বাক্ষরও আমার নয়। কে বা কারা প্রতারণা করেছেন, তাদের শাস্তি চাই।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে মোহনগঞ্জেই, সুনামগঞ্জে নয়।’’
অভিযোগকারী হোসনা বেগম বলেন, ‘‘তুহিন প্রতারণা করে আমার অজান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হকের সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন। তিনি আমার নানা নন।’’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তুহিন দাবি করেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মনজুরুল হক আমার নানা, তার সনদেই চাকরি নিয়েছি। প্রতারণা করে থাকলে এতদিন চাকরিতে থাকা সম্ভব হতো না।’’
ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিসম্মত হলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/ইবাদ/বকুল