নিজের অনুগত সি‌ন্ডি‌কেট দি‌য়ে আইটি প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লি‌মি‌টে‌ডের এম‌ডি মোস্তফা শামসুল ইসলাম ও তার স্ত্রী অপা‌রেশন ডি‌রেক্টর সোফিয়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা‌নের টাকা হু‌ন্ডির মাধ‌মে বি‌দে‌শে নি‌য়ে যা‌চ্ছেন ব‌লে অভিযোগ ক‌রে‌ছেন কোম্পা‌নির ক্ষ‌তিগ্রস্ত ও ব‌ঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কো‌নো কারণ ছাড়াই পর্যায়ক্রমে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের চাক‌রিচ‌্যুত ক‌রে প্রতিষ্ঠা‌নের সম্পদ বি‌ক্রি ক‌রে বি‌দে‌শে নি‌য়ে গি‌য়ে স্থায়ীভা‌বে দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়া ক‌রছেন ব‌লেও অভিযোগ ক‌রে‌ছেন তারা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপু‌রে জাতীয় প্রেস ক্লা‌বে এক সংবাদ স‌ম্মেলন ক‌রে প্রতিষ্ঠান‌টির নির্যা‌তিত কর্মচারীরা এসব অভিযোগ ক‌রেন।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে লি‌খিত বক্তব‌্য দেন ফ্লোরা লি‌মি‌টে‌ডের নির্যা‌তিত কর্মচারীদের প‌ক্ষে মোহাম্মদ মিলন হো‌সেন।

কর্মচারী‌দের পাওনা টাকা প‌রি‌শো‌ধ, বি‌দে‌শে পাচারকৃত টাকা দে‌শে ফি‌রি‌য়ে আনা এবং ফ্লোরার এম‌ডি ও তার স্ত্রীসহ বি‌দে‌শে টাকা পাচা‌রে জ‌ড়িত‌দের বিরু‌দ্ধে দ্রুত ব‌্যবস্থা গ্রহ‌ণের জন‌্য সরকা‌রের প্রতি দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছেন তারা। এ সময় ফ্লোরার অর্ধশতা‌ধিক ক্ষ‌তিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী উপ‌স্থিত ছি‌লেন।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে বলা হয়, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেড বিগত চার দশকের বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এমএন ইসলাম সাহেব ইন্তেকাল করার পর তার বড় ছেলে মোস্তফা শামসুল ইসলাম (ম্যানেজিং ডিরেক্টর) এবং স্ত্রী সোফিয়া ইসলাম (ডিরেক্টর অপারেশন) প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। পরবর্তীতে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৮১২ জন। অথচ ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে আইন বহির্ভূতভাবে নির্বিচারে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়। বর্তমানে মাত্র ৫৫ জন কর্মচারী অবশিষ্ট আছেন।

তারা দা‌য়িত্ব নেওয়ার পর থে‌কেই কোম্পা‌নির টাকা হু‌ন্ডির মাধ‌্যমে বি‌দে‌শে পাচা‌র করা শুরু ক‌রেন। এতে সহ‌যো‌গিতা ক‌রে‌ছেন কোম্পা‌নিতে চাক‌রিরত তার নিজস্ব কিছু কর্মকর্তা। তা‌দের গ্রেপ্তার ক‌রে রিমা‌ন্ডে নেওয়া হ‌লে সব তথ‌্য বে‌রি‌য়ে আস‌বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে আরো বলা হয়, ফ্লোরার এম‌ডি ও তার স্ত্রী এই কোম্পা‌নির সর্বসর্বা। তারা স্থায়ীভা‌বে বি‌দেশে পা‌ড়ি দেওয়ার জন‌্যই সফল ব‌্যবসা ধী‌রে ধী‌রে লস দে‌খি‌য়ে বিগত ছয় বছর ধ‌রে একের পর এক চাক‌রিচ‌্যুত কর‌ছেন। একই স‌ঙ্গে কোম্পা‌নির সম্পদ বি‌ক্রি ক‌রে হু‌ন্ডির মাধ‌্যমে বি‌দে‌শে পাচার ক‌রে‌ছেন। ইতিম‌ধ্যে তারা ঢাকাসহ দে‌শের বি‌ভিন্ন স্থা‌নে অফিস বি‌ক্রি ক‌রে দি‌য়ে‌ছেন। পল্ট‌নের কালভার্ট‌ রো‌ডে অব‌স্থিত ডিআর টাওয়ার থে‌কে ক‌র্পো‌রেট হেড অফিসটি স‌রি‌য়ে মহাখালী‌তে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু ক‌রে‌ছেন। তারা পাচা‌রের টাকায় বি‌দে‌শে বা‌ড়ি ও ব‌্যবসায় বি‌নি‌য়োগ ক‌রেছেন। বি‌দে‌শে নাগ‌রিকত্ব পাওয়ার জন‌্য চেষ্টা ক‌রে যা‌চ্ছেন।

কর্মচারীরা অভিযোগ ক‌রে‌ছেন, যা‌দের কো‌নো কারণ ছাড়াই চাক‌রিচ‌্যুত করা হ‌য়ে‌ছে, তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়‌নি। ইন‌ক্রিমেন্ট, বোনাস দেওয়া হয়‌নি। চাক‌রিচ‌্যুত করার পরও ব‌কেয়া বেতন ভাতা ও সা‌র্ভিস বে‌নি‌ফিট দেওয়া হয়‌নি। প্রভি‌ডেন্ড ফা‌ন্ডের টাকাও আত্মসাৎ করা হ‌য়ে‌ছে।

তাছাড়া ওই সময় থে‌কে এখনো যারা চাক‌রি কর‌ছেন, তাদের বেতন ভাতাও অনিয়‌মিত। ইন‌ক্রিমেন্ট, বোনাস কিছুই দেওয়া হয় না। মা‌সের পর মাস বেতন ব‌কেয়া থাকার কার‌ণে কর্মচারীরা মান‌বেতর জীবনযাপন কর‌ছেন, যা‌তে বাধ‌্য হ‌য়ে তারা চাক‌রি ছে‌ড়ে চ‌লে যান। অনেকেই আর্থিক দুরবস্থার কারণে আইনি পদক্ষেপও নিতে পারছেন না। এদিকে দেশের বাইরে অবস্থান করে সোফিয়া ইসলাম বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীদের সরাসরি ফোনে চাকরি ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং বকেয়া পরিশোধে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

ফ্লোরার এম‌ডি ও তার স্ত্রীর বিচার দা‌বি‌তে ক্ষ‌তিগ্রস্ত কর্মচারীরা মানববন্ধন ক‌রেন।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে তারা ছয়‌টি দা‌বি তু‌লে ধ‌রেন। দা‌বিগু‌লো হ‌লো:
১.

সব কর্মচারীর বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
২. প্রভিডেন্ট ফান্ডের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দিতে হবে।
৩. সরকারের মাধ্যমে গত ১০ বছরের এক্সটারনাল অডিট সম্পন্ন করতে হবে।
৪. অফিস স্থানান্তর বন্ধ করতে হবে যতক্ষণ না কর্মচারীদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়।
৫.হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ তদন্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. বিদেশে অবস্থানরত এমডি ও ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

এর আগে ‌ফ্লোরার এম‌ডি ও তার স্ত্রীর বিচার দা‌বি‌তে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাম‌নে ক্ষ‌তিগ্রস্ত কর্মচারীরা মানববন্ধন ক‌রেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষ ত গ রস ত কর মকর ত র র এম ড ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী সিলসহ গাজীপুরের ৫ বস্তা এনআইডি কার্ড ফতুল্লায় উদ্ধার

ফতুল্লায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাজীপুর জেলার পাঁচ বস্তা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), বিপুল সংখ্যক পোলিং অফিসারের কার্ড এবং নির্বাচনী সিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ফতুল্লা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব উদ্ধার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার দিকে একটি সাদা গাড়িতে করে কয়েকজন ব্যক্তি দ্রুত স্টেডিয়ামের সামনে এসে বস্তাগুলো ফেলে যায়। স্থানীয়রা প্রথমে ময়লার বস্তা ভেবে গুরুত্ব না দিলেও পরিষ্কার বস্তা দেখে সন্দেহ হয়। পরে বস্তাগুলো খুলে ভেতরে প্রচুর এনআইডি কার্ড ও নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে পান তারা।

ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নাজমুল হাসান বাবু বলেন, "আমি ওই এলাকায় একটি স’মিলের কাজ করছি এবং অনেক দিন ধরে এখানে ময়লা না ফেলার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি। হঠাৎ দেখি সাদা একটি গাড়ি এসে কয়েকটি বস্তা ফেলে যায়। আমার লোকজন গিয়ে দেখে সেখানে এনআইডি কার্ড ও পোলিং অফিসারের কার্ড রয়েছে। পরে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধার করে।"

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কার্ডগুলো জব্দ করে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, "পাঁচ বস্তা এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।"

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার রাকিবুজ্জামান জানান, “উদ্ধার হওয়া সব কার্ড গাজীপুর সদর এলাকার। এগুলো আমাদের এখানকার নয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কার্ডগুলো পুরনো এবং পরিত্যক্ত। এগুলো স্মার্টকার্ড নয়। কীভাবে নারায়ণগঞ্জে এলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

বর্তমানে উদ্ধার হওয়া সব এনআইডি কার্ড এবং নির্বাচনী সরঞ্জাম নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশনের অফিসে রাখা হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ