এনসিপির নেতা আখতার হোসেনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে কী বললেন ওঁরাও নারী
Published: 3rd, May 2025 GMT
‘আমি কখনো মাইকের সামনে কথা বলিনি। আপনারা বলছেন, আমাদের ভাষার কথা; কিন্তু ভাষা চর্চার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আমাদের দুঃখের কথা শোনার জন্য এখানে চেয়ারম্যান, মেম্বার অনেক লোক আছে। কিন্তু আমাদের মনের কথা জানার জন্য কখনোই আসেনি।’
ওঁরাও সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে পেয়ে ওঁরাও নারী সুমি খালকো এসব কথা বলেন। সুমি খালকোর বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের সোম নারায়ণ গ্রামে। গ্রামটি ওঁরাও জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। আজ শনিবার বিকেলে এই গ্রামের ধলখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওঁরাও জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন আখতার হোসেন।
আখতার হোসেনের উদ্দেশে সুমি খালকো বলেন, ‘আমাদের অনেক দাবি আছে। এখানে প্রাইমারি স্কুল আছে। স্কুল ১১টায় খোলা হয়। অন্যান্য স্কুল ৯টায় চালু হয়। আমাদের টাকাপয়সা নেই। আমরা কিন্ডারগার্টেন বা অন্য স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাতে পারব না। আমাদের বাচ্চাকে শিক্ষিত করতে হলে সঠিক সময় স্কুলে পাঠাতে হবে। কিন্তু ১১টার আগে শিক্ষক আসে না।’
সুমি খালকো বলেন, ‘বিদ্যালয়ে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাচ্চা কম্পিউটার শিখতে পারে না। আমাদের অনেক বাচ্চা ঝরে পড়েছে। আমাদের বাচ্চারা শিক্ষিত হচ্ছে না। আমাদের টাকাপয়সার অভাব। প্রাইভেট পড়ানোর অভাব।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলেমেয়ের টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। শুধু ইন্টারমিডিয়েট বা ডিগ্রি সম্পন্ন করলেই হবে না। আমাদের আদিবাসী বাচ্চাদের সব জায়গায় জানানো হয়, আপনাদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা আছে। কিন্তু সেটা শুধু কাগজে-কলমে এবং মুখে মুখে। ভোট আসলে সবাই বলে, আমাদের এটা করা হবে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার মতো কোনো ব্যক্তি নাই।’
ওঁরাও সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া নিয়ে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা স্বপ্ন মেনজি, রতন মেনজি, বুধারু মেনজি। তাঁরা বলেন, তাঁদের এখানে রাস্তাঘাট নেই। গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট কাদায় ভর্তি হয়; গাড়ি ঢুকতে পারে না। সড়কেই অনেক গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তাঁরা বসবাস করছেন।
আখতার হোসেন তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘জাতিগতভাবে সংখ্যায় কম হওয়ার যে কষ্ট, সেটা আপনাদের এখানে এসে আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ যদি সংখ্যায় কম হয়, তাহলে তাঁদের নাগরিক অধিকার ও মর্যাদাগুলো যে কতটা তলানিতে থাকে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের সামনে ওঁরাও সম্প্রদায়ের যে ভাইবোনেরা আছেন তাঁরা।’ তিনি বলেন, এনসিপি বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ তাঁরা যে ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের হোক না কেন, তাঁদের নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের যে অধিকার আছে, তা নিশ্চিত করতে এনসিপি রাজনীতি করছে।’
ওঁরাও সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন আখতার হোসেন। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বারবার বলেছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের বলা হয়নি, কবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে। কিন্তু আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই, আমাদের সামনে জুলাই প্রোক্লামেশনের যে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তা যেন অবশ্যই প্রকাশ করা হয়।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো এখন যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছে, সেই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে একটা শপথের মতো বিষয়কে মাথায় রেখে এই সনদের কথা বলা হচ্ছে। আমরা চাই, জুলাই সনদপত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐকমত্য হবে, এখানে যেন আওয়ামী লীগ প্রশ্নের একটা মীমাংসা থাকে। নিষিদ্ধের কথাটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।’
মিয়ানমার সীমান্তে মানবিক করিডরের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে করার আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘শুধু একক সিদ্ধান্ত নিয়ে করিডর দেওয়ার মতো বৃহত্তর সিদ্ধান্ত সরকারের গ্রহণ করা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।’
এ সময় আখতার হোসেনের সঙ্গে এনসিপির রংপুর জেলার সংগঠক আলমগীর হোসেন, শেখ রেজওয়ান, আলমগীর নয়নসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আখত র হ স ন আম দ র ব র জন ত এনস প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল