স্বপ্ন দেখা থেমে নেই দৃষ্টিহীন মমিনুরের
Published: 5th, May 2025 GMT
চোখের আলোয় নয়, মনের আলোয় পথ খুঁজে নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী মমিনুর ইসলাম। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে লুঙ্গি, গামছা, মোজা, ছাতা ইত্যাদি বিক্রি করে নিজের ব্যয় নিজেই নির্বাহ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধার এক সাধারণ পরিবারে জন্ম মমিনুরের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত সুস্থ থাকলেও একসময় তার চোখের রেটিনা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে তার সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়।
আরো পড়ুন:
সামাজিক-অর্থনেতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতিতে জোর
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: খেলার মাঠে নেপথ্যের নায়ক আনসার ভাই
অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা শিখে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত।
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পে তিনি বলেন, “আমার পরিবারে মা, বাবা, ভাই, বোন আছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য আমার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। একপর্যায়ে আমরা আর্থিক সংকটের মুখে পড়ি। তখন বাসা থেকে প্রতি মাসে টাকা পাঠানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হচ্ছিলো আমার পরিবারের জন্য। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি না থাকায় অল্প দূরত্বেও আমাকে রিকশায় যেতে হয়। এতে অন্যদের তুলনায় আমার কিছুটা বেশি অর্থ ব্যয় হয়। তখন ভাবলাম, আমাকে বেঁচে থাকতে হবে এবং নিজে থেকেই কিছু করতে হবে হবে।”
নিজের স্কুলের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, “আমি পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। সেখানে বেশকিছু তাঁতপল্লি ছিলো। তখন কাপড় বিক্রির আইডিয়া মাথায় আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের হলের সামনে একটা ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকান দেই। সেখানে গামছা, লুঙ্গি, টি-শার্ট, মশারি, রুমালসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি শুরু করি।”
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় এসব জিনিসের পাশাপাশি সম্প্রতি সেখানে একটি ওজন ও উচ্চতা মাপার মেশিনও স্থাপন করেছেন তিনি।
প্রতি মাসের আয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি যেহেতু একজন শিক্ষার্থী, তাই পড়ালেখা, ক্লাস ব্যালেন্স করে আমাকে অবসর সময়ে এই দোকান চালাতে হয়। তাছাড়া আমার ক্রেতা সবাই এখানকার শিক্ষার্থী। তাই প্রতিটি পণ্যে সামান্য কিছু লাভ রাখি। বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই আমি চলতে পারি।”
মমিনুরের দোকানে ক্রেতাদের (শিক্ষার্থী) ভীড়
মমিনুর বলেন, “আমার চোখে আলো নেই ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো বাঁধা নেই। নিজের খরচটা নিজে চালাতে পারলে আত্মমর্যাদাবোধ থাকে। দোকানটা ছোট, কিন্তু এর পেছনে আমার অনেক বড় স্বপ্ন লুকিয়ে আছে।”
দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণে দোকান পরিচালনায় কিছুটা কষ্ট হয় ঠিকই, তবে সহপাঠী ও হলের কিছু ছাত্র সাহায্য করেন মাঝে মাঝে। পণ্য শনাক্ত করতে মমিনুর স্পর্শ ও স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করেন। অনেকেই তার এই চেষ্টাকে সম্মান করেন। কেউ কেউ দোকানে এসেও তাকে উৎসাহ দেন।
এসব প্রচেষ্টা ছাপিয়ে পুনরায় পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে। পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করে তিনি বলেন, “আমি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড এবং ব্লাইন্ড হওয়া সত্ত্বেও নিজ প্রচেষ্টায় অর্থ উপার্জন করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে সক্ষম হয়েছি। সেহেতু চাইলে আপনারাও পারবেন। আমরা যেখানেই পড়াশোনা করি না কেনো, যদি আর্থিক অসচ্ছলতা থাকে, তাহলে অবশ্যই নিজের যে বিষয়ে দক্ষতা আছে, সেটা নিয়ে কাজ শুরু করা উচিৎ।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ পেলে আমার জন্য সুবিধা হবে। সে সুযোগ না পেলে হয়তো এই ব্যবসার সঙ্গেই থাকব এবং এর পরিসর বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবো।”
তার এই সংগ্রামী জীবন ও উদ্যোগ আমাদের সমাজের তরুণ ও যুবসমাজের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। সীমাবদ্ধতা থাকলেও, ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে মানুষ কীভাবে নতুন পথ খুঁজে নেওয়া যায়, মমিনুর তার জলন্ত প্রমাণ।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে রানিকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে গণ্য করা হতো
প্রাচীন মিশরের ১৮তম রাজবংশের একজন শক্তিশালী রানী এবং ফারাও আখেনাতেনের প্রধান রাজমহিষী ছিলেন রানি নেফারতিতি ছিলেন। এই নারী তার সৌন্দর্যের কারণে অধিক পরিচিত। এ ছাড়া ইতিহাসে তার অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, তিনি মিশরে একেশ্বরবাদী ধর্মীয় বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
নেফারতিতি নামের অর্থ ‘‘একজন সুন্দরী নারী এসেছেন’’। নেফারতিতির জন্ম আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৭০ অব্দে।
আরো পড়ুন:
সঞ্চয় করার কিছু কার্যকর উপায়
আজ পুরুষদের রান্না করার দিন
জানা যায়, নেফারতিতির বাবা ছিলেন ফারাও আখেনাতেনের উপদেষ্টা এবং তিনিই কিশোর রাজকুমার আখেনাতেনের দেখাশোনা করতেন। বাবার সুবাদে শৈশবেই রাজকুমারের সঙ্গে পরিচয় হয় নেফারতিতির এবং অল্প বয়সেই তিনি আখেনাতেনের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে গড়ে তোলেন। ১৫ বছর বয়সে রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ক্রমে ফারাও আখেনাতেনের জীবনে অত্যন্ত গভীর প্রভাব বিস্তার করেন এই রানি।
আখেনাতেন মিশরের ঐতিহ্যবাহী বহু-ঈশ্বরবাদী ধর্ম পরিবর্তন করে ‘আতেন’ বা সূর্য দেবতার একেশ্বরবাদী পূজার প্রচলন করেছিলেন। এই ধর্মীয় পরিবর্তনে নেফারতিতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাকে জীবন্ত দেবী হিসেবে গণ্য করা হতো।
আখেনাতেনের রাজত্বকালে নেফারতিতি একজন ফারাওয়ের মতোই ক্ষমতা এবং মর্যাদা ভোগ করতেন। অনেক ভাস্কর্য ও চিত্রে তাকে ফারাওদের মতো ক্ষমতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। বার্লিনের একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত নেফারতিতির একটি মার্জিত এবং রঙিন আবক্ষ মূর্তি প্রাচীন মিশরীয় শিল্পের অন্যতম পরিচিত নিদর্শন।
আখেনাতেনের রাজত্বের প্রায় ১২ বছর পর হঠাৎ করেই নেফারতিতি ইতিহাস থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। তার মৃত্যু সম্পর্কে খুব কম তথ্য জানা যায় এবং তার সমাধি আজও আবিষ্কৃত হয়নি, যা প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে একটি অনেক বড় রহস্য।
সূত্র: ব্রিটানিকা কিডস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি