বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী আজ
Published: 8th, May 2025 GMT
আজ ২৫ বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্রপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী। ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ। কবি ছিলেন বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির সৃজনে, মননে, রুচিতে, সংস্কৃতিতে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন যে তাঁর জন্মদিন এক আনন্দঘন উৎসবের উপলক্ষ হয়ে আছে জাতির জীবনে। বাঙালির আবেগ অনুভবের মহত্তম প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের বহু সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্য, বাঙালির জীবন ও মানসে তার উপস্থিতি এখনো দেদীপ্যমান। তিনি তার বহুমাত্রিক সৃজনকর্ম ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যে। তার রচনায় মানুষের আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, অভিব্যক্তির প্রকাশ অতুলনীয়। যেকোনো সমস্যা সংকটে, স্বস্তিতে আনন্দে দুঃখে বেদনায় তার গান, কবিতা সাহস ও প্রেরণা জোগায়।
কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে হবে ‘রবীন্দ্র ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে আয়োজনের প্রধান অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে আয়োজনের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। এ ছাড়া ঢাকা, সিরাজগঞ্জের কাছারিবাড়ি ও নওগাঁর পতিসরেও নানা আয়োজনে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হবে।
বাংলা একাডেমিতে আজ বিকেল ৪টায় হবে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৫’ ঘোষণা করা হয়েছে। রবীন্দ্র সাহিত্য গবেষণায় ড.
শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন। এ ছাড়া বসেছে বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাথায় রেখে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পদ্মা নদীতেও টহল জোরদার করা হবে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুরো কুঠিবাড়ি ও আঙিনার নিরাপত্তা নজরে রাখা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতেও সাজসজ্জা এবং নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়বিষয়ক সচিব আব্দুল খালেক। নওগাঁর পতিসরেও তিন দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন থাকছে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রব ন দ র অন ষ ঠ ন এক ড ম র জন ম প রস ক
এছাড়াও পড়ুন:
গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ
ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতি ও অনুভূতির এক অনন্য প্রতীক। পূর্ণিমার রাতে নদীতে জ্যোৎস্না পড়লে যেমন মনে হয় সোনালি রূপ ঝলমল করছে, তেমনি ইলিশের রুপালি ঝলক যেন বাঙালির খাবার টেবিলে আনন্দের আলো ছড়ায়। কিন্তু সেই আলো গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছায় না। তাদের কাছে ইলিশ আজ স্বপ্নের মতো ছোঁয়া যায় না, শুধু কল্পনায় ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশকে ইলিশের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে ইলিশ শুধু খাবার নয়, আবেগ। ঈদ হোক বা পূজা, অতিথি এলে কিংবা উৎসবের দিনে, ইলিশ ছাড়া খাবারের টেবিল অসম্পূর্ণ মনে করেন অনেক মানুষ। কিন্তু এই আনন্দ সব ঘরে ভাগ হয়ে যায় না। শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর কিংবা গ্রামীণ গরিব পরিবারগুলোর কাছে ইলিশ এখন বিলাসবস্তু। একসময় বাজারে গিয়ে ছোট একটা ইলিশ কেনা গেলেও এখন দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে এটা একেবারেই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কিংবা সাগর সব জায়গায় এই মাছের সমারোহ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। অথচ এ দেশের অনেক গরিব মানুষ বছরের পর বছর মুখে ইলিশ তুলে খেতে পারে না। দাম এত বেশি যে সাধারণ শ্রমিক বা দিনমজুর পরিবারের কাছে এটা এখন বিলাসিতা।
দেশের প্রান্তিক শ্রমজীবী পরিবারগুলোর বেশির ভাগই বছরে একবারও ইলিশ কিনতে পারে না। কখন সর্বশেষ তারা ইলিশ খেয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই হয়তো মনেই থাকে না। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশি আসে এই দেশ থেকে। বর্তমানে মাঝারি আকারের এক কেজি ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকার ওপরে। আর একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মাসিক আয় গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। ফলে তাঁদের জন্য ইলিশ কেনা মানেই মাসের বাজেট ভেঙে যাওয়া।
ইলিশ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। নদীদূষণ, অতিরিক্ত নৌ চলাচল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে গেছে। জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে অবৈধ জালের ব্যবহার উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। দালাল ও ব্যবসায়ী চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে মধ্যবিত্তও হিমশিম খায়, আর গরিবদের জন্য ইলিশ নাগালের বাইরেই থেকে যায়। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ সীমিত থাকে। এতে দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের স্বপ্নের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।
ইলিশের স্বাদ যেন কেবল ধনীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সে জন্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জাটকা নিধন কঠোরভাবে দমন করতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে নদীতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। নদীদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইলিশ আহরণের মৌসুমে সঠিক সময়ে মাছ ধরার সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা দিলে উৎপাদন বাড়বে। এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে ইলিশের দাম কমে আসবে এবং সব শ্রেণির মানুষ সমানভাবে এর স্বাদ নিতে পারবে।
ইলিশকে যদি আমরা সত্যিই ‘জাতীয় মাছ’ বলি, তাহলে তার স্বাদ কেবল ধনী-সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। গরিব শিশুরাও যেন উৎসবের দিনে অন্তত একটুকরো ইলিশ খেতে পারে। এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ফারিহা জামান নাবিলা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা