আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: এসপি প্রত্যাহার, আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
Published: 8th, May 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় তাঁর নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে মো.
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকটি সূত্রে জানা যায়, ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার এবং এসবির সহকারী উপপরিদর্শক মো. সোলায়মান এবং কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ছাত্র–জনতার অভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের নয় মাস পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, আবদুল হামিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল রাত ১১টার দিকে সাধারণ যাত্রী হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দরে যান তিনি। এ সময় তার মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ ছিল। পরে ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাঁকে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। এসবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসার কথা বলেছেন।
গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেককে আসামি করা হয়।
এই পরিস্থিতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। তাঁকে দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং বিদেশ থেকে আবদুল হামিদকে ফিরিয়ে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদ বলেছে, সেটা করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। এই দাবিতে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে দলটি।
এদিকে আজ দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর যদি শাস্তির আওতায় না আনতে পারেন, তাহলে তিনি দায়িত্ব থেকে চলে যাবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ র দ শত য গ আবদ ল হ ম দ র দ শ কর মকর ত র ঘটন রগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে গোলাগুলি, একজনের মরদেহ উদ্ধার
সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুর উপজেলার একটি গ্রামে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযানকালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনী ওই গ্রাম ঘিরে রেখেছে বলে জানা গেছে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবু সাঈদ (৩১)। তিনি পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার তারপাশা গ্রামের তাজ মিয়ার ছেলে। আবু সাঈদ পেশায় মোটর মেকানিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা বর্তমান চেয়ারম্যান যুবলীগের নেতা একরার হোসেন ও একই গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানের মধ্যে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে দুদিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা চলছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে গত শুক্রবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে প্রকাশ্যে।
রোববার বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে ওই গ্রামে অভিযান চালায়। খবর পেয়ে হাতিয়া থেকে সন্ত্রাসীরা নৌকায় করে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার গাদালিয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে ওই গ্রামে ঘেরাও দিলে সেখানে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় সেনাবাহিনী গুলি চালায়। পরে ওই এলাকায় আবু সাঈদের লাশ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঞা রোববার রাত ১১টায় বলেন, আমাদের কাছে আসলে কোনো তথ্য নেই। এটি হাওরের দুর্গম একটি এলাকা। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আছেন। পুলিশ জগন্নাথপুর থেকে রওনা হয়েছে। নৌকায় যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত ২০ জুন ২০২৫ তারিখ, দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা একরার আহমেদের লোকজনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়াও একরার আহমেদ ও তার অনুসারীরা প্রায়ই বর্ণিত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আসছিল। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ থেকে আজ রোববার (২২ জুন) তারিখে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল অস্ত্রধারীদের ধরতে হাতিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। বিকেলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখে এক পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও গুলি চালায়। পরবর্তীতে একরার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে শুরু করে। টহল দল ওই স্থানে গিয়ে একজনের মরদেহ দেখতে পায়। এই ব্যক্তি কার গুলিতে মারা গেছেন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বর্তমানে যৌথবাহিনী ওই এলাকায় অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। এখনও (রাত সাড়ে ১১ টা) ওখানে অভিযান চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।