জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়। এরপরই প্রাণ বাঁচাতে ও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায় সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীরা। যদিও প্রভাবশালী বেশ কিছু নেতা, এমপি ও মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ব্যতিক্রম ছিল নারায়ণগঞ্জ।

এই জনপদের আলোচিত-সমালোচিত শামীম ওসমান সপরিবারে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অনুসারী নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পেরেছে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাননি নাসিকের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা.

সেলিনা হায়াৎ আইভী।

যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ঘটনায় দায়ের করা ৫টি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। এতে কিছুটা সাহস নিয়ে তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও এলাকায় ছিল। তাদের কাছে আইভী ছিল প্রদীপের শেষ আলো।

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ডালপালা ছড়ায় হত্যা মামলার পরও আইভীর নিজ বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি। অনেকে ধরেই নিয়েছেন, আগামী রিফর্ম আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিবেন আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ও প্রভাবশালী এই নেত্রী। ফলে তাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।

দলের দুঃসময়ে তাদের ভরসার জায়গায় হয়ে উঠেছিলেন আইভী। তাদের মতে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের বেহাল অবস্থা। দলের শীর্ষ নেতারা কেউ পালিয়েছে, কেউ জেলে। বাকিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। সেখানে আইভী নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করার সুযোগ দিলে সেই নির্বাচনে দলীয় ফোরামে আইভীর গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা থাকবে।

কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা আপাতত ভেস্তে গেছে শুক্রবার ভোরে আইভীকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানে সিদ্ধিরগঞ্জে পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নগরীর দেওভোগের চুনকা কুটির থেকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। এতে করে প্রদীপের শেষ আলোটাও যেন নিভে গেল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের। 

এদিকে আইভীর গ্রেপ্তার নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বত্র যে আলোচনা চলমান তা হলো, আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সাড়ে ৬ ঘণ্টা পুলিশ চুনকা কুটিরে অবরুদ্ধ ছিল। রাস্তা অবরোধ করে শত শত এলাকাবাসী ও আইভীর সমর্থক নেতাকর্মীরা চুনকা কুটির ঘিরে রাখে।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশও অনেকটা ধৈর্যের পরিচয়  দেয় এবং রাতভর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইভীকে বুঝিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। কিন্তু আইভী তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন যতকিছুই হোক তিনি দিনের বেলা ছাড়া যাবেন না। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে রাতভর অপেক্ষা করে।

যদিও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় আইভী তার বক্তব্যে দীর্ঘ সময় পুলিশকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উপস্থিতিতে দৃঢ়তার সঙ্গে আইভীর বক্তব্য ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান নেতাকর্মীদের মাঝে অন্যরকম এক আবহ তৈরি করে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি-মন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার সময় কোনো প্রকার বক্তব্য তো দূরের কথা স্লোগান দেয়ার সাহস করেনি সেখানে আইভী ছিলে ব্যতিক্রম। 

ওদিকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই আইভীর গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে পজেটিভভাবে নিয়েছেন। তারা বলছেন, পোশাক শ্রমিক হত্যা মামলায় আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও নারায়ণগঞ্জবাসী জানে আইভীকে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যাভাবে এই ধরনের মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের সময় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে আইভী দলমত নির্বিশেষে কতোটা জনপ্রিয়। শিগগিরই তিনি জামিনে বেরিয়ে আসবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভোট বিপর্যয় হয়। অনেক শীর্ষ নেতা পালিয়ে যায় এলাকা ছেড়ে। আওয়ামী লীগের এমন দুঃসময়ে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ  পৌরসভার নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নিউজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থী নুরুল ইসলাম সরদারকে পরাজিত করে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। তার বিজয়ের মধ্যদিয়ে ওই সময় সারা দেশে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। নারায়ণগঞ্জে ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ।

২০১১ সালের ৫ই মে সরকার বন্দরের কদম রসুল, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে একত্রিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করে। ওই বছরের ৩০শে অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্…

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ন র য়ণগঞ জ ন ত কর ম র আইভ র আইভ ক আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মাদ্রাসাছাত্র সোলাইমান হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে আনিসুল হক কারাগারে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্র সোলাইমান (১৯) হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাফিয়া শারমিনের আদালতে হাজির করা হলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান প্রথম আলোকে জানান, আনিসুল হককে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত বছরের ২২ আগস্ট সোলাইমানের ভগ্নিপতি শামীম কবির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শামীম ওসমানসহ ৫১ জনের নাম উল্লেখে অজ্ঞাতপরিচয় আরও অনেককে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলাটি করেছিলেন। সোলাইমান মাদারীপুরের রাজৈর থানার কবিরাজপুর এলাকার মিরাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি রাজধানীর মিরপুর দারুর রাসাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পণ্ড করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন এবং জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেন। আসামিদের নির্দেশে ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ও আক্রমণ করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে ডান পায়ের ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হন সোলাইমান। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা 
  • ফতুল্লায় ১৭ টন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ৫ লাখ টাকা জরিমানা
  • নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তর নিয়ে যা বললেন রাজিব-সজল-সাহেদসহ কর্মকর্তারা
  • বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ
  • নারায়ণগঞ্জে নারী-পুরুষের মরদেহ উদ্ধার
  • সিদ্ধিরগঞ্জের হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুলকে কারাগারে প্রেরণ 
  • সিদ্ধিরগঞ্জে সওজ’র কলোনি থেকে গৃহবধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার
  • মাদ্রাসাছাত্র সোলাইমান হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে আনিসুল হক কারাগারে
  • আরাফাত রহমান কোকোর জম্মদিনে মহানগর বিএনপির দোয়া 
  • নারায়ণগঞ্জে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২