আইভী ছিল আওয়ামী লীগের শেষ প্রদীপের আলো
Published: 11th, May 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়। এরপরই প্রাণ বাঁচাতে ও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায় সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীরা। যদিও প্রভাবশালী বেশ কিছু নেতা, এমপি ও মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ব্যতিক্রম ছিল নারায়ণগঞ্জ।
এই জনপদের আলোচিত-সমালোচিত শামীম ওসমান সপরিবারে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অনুসারী নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পেরেছে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাননি নাসিকের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা.
যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ঘটনায় দায়ের করা ৫টি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। এতে কিছুটা সাহস নিয়ে তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও এলাকায় ছিল। তাদের কাছে আইভী ছিল প্রদীপের শেষ আলো।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ডালপালা ছড়ায় হত্যা মামলার পরও আইভীর নিজ বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি। অনেকে ধরেই নিয়েছেন, আগামী রিফর্ম আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিবেন আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ও প্রভাবশালী এই নেত্রী। ফলে তাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।
দলের দুঃসময়ে তাদের ভরসার জায়গায় হয়ে উঠেছিলেন আইভী। তাদের মতে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের বেহাল অবস্থা। দলের শীর্ষ নেতারা কেউ পালিয়েছে, কেউ জেলে। বাকিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। সেখানে আইভী নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করার সুযোগ দিলে সেই নির্বাচনে দলীয় ফোরামে আইভীর গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা থাকবে।
কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা আপাতত ভেস্তে গেছে শুক্রবার ভোরে আইভীকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানে সিদ্ধিরগঞ্জে পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নগরীর দেওভোগের চুনকা কুটির থেকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। এতে করে প্রদীপের শেষ আলোটাও যেন নিভে গেল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের।
এদিকে আইভীর গ্রেপ্তার নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বত্র যে আলোচনা চলমান তা হলো, আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে সাড়ে ৬ ঘণ্টা পুলিশ চুনকা কুটিরে অবরুদ্ধ ছিল। রাস্তা অবরোধ করে শত শত এলাকাবাসী ও আইভীর সমর্থক নেতাকর্মীরা চুনকা কুটির ঘিরে রাখে।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশও অনেকটা ধৈর্যের পরিচয় দেয় এবং রাতভর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইভীকে বুঝিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন। কিন্তু আইভী তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন যতকিছুই হোক তিনি দিনের বেলা ছাড়া যাবেন না। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে রাতভর অপেক্ষা করে।
যদিও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় আইভী তার বক্তব্যে দীর্ঘ সময় পুলিশকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উপস্থিতিতে দৃঢ়তার সঙ্গে আইভীর বক্তব্য ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান নেতাকর্মীদের মাঝে অন্যরকম এক আবহ তৈরি করে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি-মন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার সময় কোনো প্রকার বক্তব্য তো দূরের কথা স্লোগান দেয়ার সাহস করেনি সেখানে আইভী ছিলে ব্যতিক্রম।
ওদিকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই আইভীর গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে পজেটিভভাবে নিয়েছেন। তারা বলছেন, পোশাক শ্রমিক হত্যা মামলায় আইভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও নারায়ণগঞ্জবাসী জানে আইভীকে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যাভাবে এই ধরনের মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের সময় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে আইভী দলমত নির্বিশেষে কতোটা জনপ্রিয়। শিগগিরই তিনি জামিনে বেরিয়ে আসবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভোট বিপর্যয় হয়। অনেক শীর্ষ নেতা পালিয়ে যায় এলাকা ছেড়ে। আওয়ামী লীগের এমন দুঃসময়ে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নিউজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রার্থী নুরুল ইসলাম সরদারকে পরাজিত করে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। তার বিজয়ের মধ্যদিয়ে ওই সময় সারা দেশে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। নারায়ণগঞ্জে ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ।
২০১১ সালের ৫ই মে সরকার বন্দরের কদম রসুল, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে একত্রিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করে। ওই বছরের ৩০শে অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্…
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ন র য়ণগঞ জ ন ত কর ম র আইভ র আইভ ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে আমীর হোসেন (৫০) নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক হুমায়রা তাসমিন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আমীর হোসেন জামালপুর জেলার ইসলামপুরের মহলগিরী এলাকার শাহ জামালের ছেলে। রায় ঘোষণার সময়ে তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. কাইউম খান জানান, রূপগঞ্জের পশ্চিমগাঁও এলাকার মো. আবু তালেবের মেয়ে বিলকিছ বেগমের সঙ্গে আমীর হোসেনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত।
২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আমীর হোসেন বিলকিছ বেগমকে তাদের বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় বিলকিছের বাবা আবু তালেব রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত এই রায় দেন।