নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর তীর থেকে মৃত ভেবে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে। এ ছাড়া আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে তাঁর চেতনা ফিরেছে। তবে এখনো কোনো কথা বলতে পারছেন না তিনি। কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্বজনদের দেখানো জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম জসিম থিগিডি (৩০)। তিনি উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের বড় মনগড়া গ্রামের মৃত মাখন নংমিন ও মৃত অবলিক থিগিডির ছেলে।

আরও পড়ুনমৃত ভেবে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাচ্ছিল পুলিশ, হঠাৎ নড়ে উঠল নিথর দেহ২২ ঘণ্টা আগে

ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর তাঁর ছবি বিভিন্ন সোর্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর স্বজনেরা যোগাযোগ করেন। এখন হাসপাতালে তাঁর (জসিম থিগিডি) চাচা আমরোজ নংমিনসহ আত্মীয়স্বজন আছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, জসিম কয়েক বছর ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই তাঁকে বাড়িতে আটকে রাখা হতো। গত তিন মাস তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় তাঁর চিকিৎসার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তিনি কেন নদীর পাড়ে বস্ত্রহীন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন এবং তাঁর পিঠে এল আকৃতির মতো আঘাতের চিহ্ন কীভাবে হলো, এসব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

জসিমের চাচা দাবি করে আমরোজ নংমিন বলেন, পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাঁরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছেন। জসিমকে বেশ কিছুদিন বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। তারপর বিএসএফ দেশে ফেরত পাঠায়। বাড়িতে এনে আটকে রাখলে কয়েক মাস পর আবার পালিয়ে যায় জসিম। কিন্তু তাকে কে বা কারা এভাবে আহত করে ফেলে রেখেছে, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন তিনি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার সকালে কলমাকান্দা উপজেলার মনতলা এলাকার উব্দাখালী নদীর তীরে ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। তাঁকে মৃত ভেবে পুলিশে খবর পাঠান কয়েকজন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ ওই ব্যক্তির চোখ ও হাত নড়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ক ন দ অবস থ য় র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা

বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমেছেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আট কারখানার শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করবেন তাঁরা।

টিএনজেড গ্রুপের ৮টি কারখানায় কর্মরত ৫ হাজার ২১৯ জন শ্রমিক ও কর্মচারীর মোট বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও ভাতা মিলিয়ে প্রায় ৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, ঈদুল ফিতরের আগে তাঁরা সাত দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন। ওই সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস ইকো, বেসিক ক্লদিং লিমিটেড, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেড ও অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেডের শ্রমিকদের ঈদ উদযাপনের জন্য বকেয়া বেতন পরিশোধে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় তিন কোটি টাকা পরিশোধের। শেষ পর্যন্ত ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। যাঁরা ওই সময় বকেয়া বাবদ এই অর্থ পেয়েছেন, তাঁরা জনপ্রতি ৯ হাজার ১০০ টাকা পান। আবার অনেক শ্রমিক কোনো অর্থ পাননি। আজকের কর্মসূচিতে অ্যাপারেল প্লাস ইকো, টিএনজেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল আর্টসহ মোট আটটি কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক অংশ নেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পুলিশের নিরাপত্তায় মিছিলটি বিজয়নগর থেকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে টিএনজেড অ্যাপারেলসের শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বহুবার আলোচনায় বসেছি। আর আলোচনায় বসতে চাই না। আমরা চাই, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা নিক। সেটি না হলে আগামীকাল থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

সমাবেশে গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, তিন মাস ধরে শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি। এখন আর শ্রমিকের দোষারোপ না করে রাষ্ট্রকে দায় নিতে হবে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা আক্তারের সভাপতিত্বে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ৭ মে সব শ্রমিক ও কর্মচারীর বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধ করা হবে। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, ৭ মে তাঁরা কারখানার সামনে উপস্থিত হলেও কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। পরে বকেয়া বেতন–ভাতার দাবিতে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পরে পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে ২০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হন। তাই শ্রম ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ