সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল প্রকার কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোট করিয়াছে। সোমবার এই মর্মে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে দলটির পক্ষে যে কোনো অনলাইন-অফলাইন তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এবং ইহার নেতাদের বিচার সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকিবে। সরকারি এই প্রজ্ঞাপনকে অনুসরণ করিয়া নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করিয়াছে। উক্ত দুই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাধীনতার পর হইতে কয়েক দফায় দেশ শাসনকারী ৭৬ বৎসর বয়সী আওয়ামী লীগ আপাতত রাজনীতির ময়দান হইতে এক প্রকার নির্বাসন লইতে বাধ্য হইতেছে। এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন গত দেড় দশকে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করিবার পাশাপাশি গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিশেষত গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের উপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহিত বিগত সরকারসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বিচার চলমান।
স্মরণ করা যাইতে পারে, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশেষত জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী কোনো কোনো ছাত্রনেতা যখন উক্ত বিচারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের দাবি তুলিয়াছিলেন, তখন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলিয়াছিলেন, কাহারও রাজনীতি ও সংগঠন করিবার সাংবিধানিক অধিকার সরকার খর্ব করিতে চাহে না। এমনকি আইসিটি আইনটি সংশোধনের সময় উহার দল ও সংগঠনের বিচার-সংক্রান্ত ধারাটিও রদ করা হইয়াছিল। তখন এমন কথাও হইয়াছিল, অপকর্মে যুক্ত কোনো দল বা সংগঠনকে প্রতিহত করিবার মোক্ষম উপায় হইল উহার আদর্শ বা রাজনৈতিক চিন্তাকে যথোপযুক্ত পাল্টা রাজনীতি বা আদর্শ দিয়া মোকাবিলা করা। নিছক আইনি প্রক্রিয়ায় বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে উক্ত দল বা সংগঠনকে প্রতিহত করিবার চেষ্টা সাধারণত টেকসই হয় না। সত্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বিনা বাধায় দেশত্যাগের ঘটনা জাতীয় নাগরিক পার্টি ও অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে ক্ষুব্ধ করিয়াছে, যাহা সরকারকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তাহার পূর্বতন অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করিয়াছে। কিন্তু ইহাতে কি একই বিষয়ে সরকারের পূর্বের অবস্থানের পশ্চাতের যুক্তিগুলি অসার প্রমাণিত হয়? এই সিদ্ধান্ত আমাদের রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের উপর কী প্রভাব ফেলিতে পারে– উহাও খতাইয়া দেখা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করিবার ঘটনা এই দেশে অতীতেও ঘটিয়াছে। স্বাধীনতার পর সংবিধানের ধারাবলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, যাহা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর উঠিয়া যায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও উহার শেষ সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু আজিকার বাস্তবতা হইল, জামায়াত বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় প্রধান সক্রিয় রাজনৈতিক দল।
দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা যে এমনকি নিয়মতান্ত্রিক কোনো দলকেও দেশকে অস্থিতিশীল রাখিবার অদৃশ্য তৎপরতার দিকে ঠেলিয়া দিতে পারে, সেই অভিজ্ঞতাও দেশে-বিদেশে স্বল্প নহে। এই কারণে যদি চলমান বিচার প্রক্রিয়াসহ রাষ্ট্র সংস্কারের মূল কাজে সরকারের মনোযোগ ব্যাহত হয়, তাহা হইলে ইহা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হইবে না। তাই আমরা বরং মনে করি, সরকারের উচিত স্বচ্ছ ও যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের নিষ্পত্তি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র কর য় ছ কর ব র র উপর আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা নগরীর পথে ইসরায়েলি ট্যাংক, পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
ফিলিস্তিনের গাজায় অভিযানের পরিসর আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এবার গাজা নগরী দখলে নিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এই নগরীর ১০ লাখ বাসিন্দার জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যে গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চল থেকে বাসিন্দারা বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করেছেন। বিমান হামলার শব্দ শোনা যাচ্ছে, তাল আল-হাওয়ার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে এগিয়ে আসছে ট্যাংক।
এদিকে ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ২১ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিও রয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বুধবার বলেছে, তারা গাজা উপত্যকায় নতুন অভিযানের রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে। গাজার সবচেয়ে বড় নগরী দখলে নিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার আহ্বান জানানোর কয়েক দিন পর সামরিক বাহিনী নতুন এ অভিযান অনুমোদন করল।
সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর আভিযানিক পরিকল্পনার মূল রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির।
কবে নাগাদ ইসরায়েলি সেনারা গাজা নগরীতে প্রবেশ করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানায়নি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-ছাওয়াবতা বুধবার বলেন, গাজা নগরীতে আগ্রাসী অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।
২২ মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানকার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই দফায় দফায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন গাজা নগরীতে।
স্থল অভিযানের বিষয়ে গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, এসব হামলা পোড়া মাটি নীতি এবং বেসামরিক স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংসের মাধ্যমে নতুন পরিস্থিতি তৈরির মারাত্মক উসকানিরই অংশ।
গাজা নগরীর তাল আল-হাওয়া এলাকার বাসিন্দা সাবাহ ফাতোম (৫১) ওই এলাকায় ব্যাপক বিস্ফোরণ শুনতে পাওয়ার কথা টেলিফোনে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান। এই নারী বলেন, অনেক বিমান হামলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাল আল-হাওয়ার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে ট্যাংক এগিয়ে আসছে। আকাশে ড্রোন উড়ছে। বহু মানুষ বাড়িঘর ও তাঁবু ছেড়ে শহরের পশ্চিম দিকে ছুটছেন।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বুধবার জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ২১ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিও রয়েছেন। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন ৪৩৭ জন।
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাবার না পেয়ে একই সময়ে অনাহারে মারা গেছেন আট ফিলিস্তিনি, তাঁদের মধ্যে তিনজন শিশু। এ নিয়ে অনাহারে ২৩৫ ফিলিস্তিনি মারা গেলেন, যাঁদের মধ্যে ১০৬টি শিশু। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৬১ হাজার ৭২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি।
আরও পড়ুনইসরায়েলি সেনাপ্রধানই কি নেতানিয়াহুর লাগাম টেনে ধরবেন৭ ঘণ্টা আগে