Samakal:
2025-11-17@11:17:55 GMT

ইতিহাসের প্রতি তাকাইতে হইবে

Published: 13th, May 2025 GMT

ইতিহাসের প্রতি তাকাইতে হইবে

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল প্রকার কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোট করিয়াছে। সোমবার এই মর্মে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে দলটির পক্ষে যে কোনো অনলাইন-অফলাইন তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এবং ইহার নেতাদের বিচার সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকিবে। সরকারি এই প্রজ্ঞাপনকে অনুসরণ করিয়া নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করিয়াছে। উক্ত দুই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাধীনতার পর হইতে কয়েক দফায় দেশ শাসনকারী ৭৬ বৎসর বয়সী আওয়ামী লীগ আপাতত রাজনীতির ময়দান হইতে এক প্রকার নির্বাসন লইতে বাধ্য হইতেছে। এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন গত দেড় দশকে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করিবার পাশাপাশি গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিশেষত গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের উপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহিত বিগত সরকারসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বিচার চলমান। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশেষত জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী কোনো কোনো ছাত্রনেতা যখন উক্ত বিচারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের দাবি তুলিয়াছিলেন, তখন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলিয়াছিলেন, কাহারও রাজনীতি ও সংগঠন করিবার সাংবিধানিক অধিকার সরকার খর্ব করিতে চাহে না। এমনকি আইসিটি আইনটি সংশোধনের সময় উহার দল ও সংগঠনের বিচার-সংক্রান্ত ধারাটিও রদ করা হইয়াছিল। তখন এমন কথাও হইয়াছিল, অপকর্মে যুক্ত কোনো দল বা সংগঠনকে প্রতিহত করিবার মোক্ষম উপায় হইল উহার আদর্শ বা রাজনৈতিক চিন্তাকে যথোপযুক্ত পাল্টা রাজনীতি বা আদর্শ দিয়া মোকাবিলা করা। নিছক আইনি প্রক্রিয়ায় বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে উক্ত দল বা সংগঠনকে প্রতিহত করিবার চেষ্টা সাধারণত টেকসই হয় না। সত্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বিনা বাধায় দেশত্যাগের ঘটনা জাতীয় নাগরিক পার্টি ও অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে ক্ষুব্ধ করিয়াছে, যাহা সরকারকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তাহার পূর্বতন অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করিয়াছে। কিন্তু ইহাতে কি একই বিষয়ে সরকারের পূর্বের অবস্থানের পশ্চাতের যুক্তিগুলি অসার প্রমাণিত হয়? এই সিদ্ধান্ত আমাদের রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের উপর কী প্রভাব ফেলিতে পারে– উহাও খতাইয়া দেখা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করিবার ঘটনা এই দেশে অতীতেও ঘটিয়াছে। স্বাধীনতার পর সংবিধানের ধারাবলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, যাহা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর উঠিয়া যায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও উহার শেষ সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু আজিকার বাস্তবতা হইল, জামায়াত বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় প্রধান সক্রিয় রাজনৈতিক দল। 

দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা যে এমনকি নিয়মতান্ত্রিক কোনো দলকেও দেশকে অস্থিতিশীল রাখিবার অদৃশ্য তৎপরতার দিকে ঠেলিয়া দিতে পারে, সেই অভিজ্ঞতাও দেশে-বিদেশে স্বল্প নহে। এই কারণে যদি চলমান বিচার প্রক্রিয়াসহ রাষ্ট্র সংস্কারের মূল কাজে সরকারের মনোযোগ ব্যাহত হয়, তাহা হইলে ইহা অপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হইবে না। তাই আমরা বরং মনে করি, সরকারের উচিত স্বচ্ছ ও যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের নিষ্পত্তি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র কর য় ছ কর ব র র উপর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ