আওয়ামী লীগ–অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি
Published: 14th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। এগুলোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, টেলিগ্রাম, এক্সের (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট ‘ব্লক’ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিটিআরসিকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয় জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে গত সোমবার (১২ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে থাকা অ্যাকাউন্টের লিংক ‘ব্লক’ করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও আইনের বিষয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।
গত রোববার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির পর বিটিআরসির মাধ্যমে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।
তবে সরকারের হাতে সবকিছু বন্ধ করার ক্ষমতা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার শুধু ওয়েবসাইট ব্লক করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট (আধেয়) সরানো, পেজ বা অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ও আরেক টেক জায়ান্ট গুগলের কাছে নিয়মিত অনুরোধ করে থাকে। এসব প্ল্যাটফর্ম বলে থাকে, তারা নিজস্ব নির্দেশিকা ও নীতি লঙ্ঘন করে কি না, তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
মেটার স্বচ্ছতা প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিটিআরসির অনুরোধে বাংলাদেশে ২ হাজার ৯৪০টি আইটেমে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
অন্যদিকে গুগলের স্বচ্ছতা প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে কনটেন্ট সরানোর জন্য ৪৯০টি অনুরোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮২৭টি আইটেম ছিল। সবচেয়ে বেশি ৩৩৭টি অনুরোধ ছিল প্রথম ৬ মাসে। প্রথম ৬ মাসে গুগল ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরের ৬ মাসে ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ট আরস আওয় ম ল গ প ল য টফর ম অ য ক উন ট ব ট আরস ব যবস থ অন র ধ আওয় ম সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২২৮ শতাংশ
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের ধারা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, যা দেশের ডিজিটাল এবং ক্যাশলেস আর্থিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রগতির ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যু করার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যু ১৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ২২৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরো পড়ুন:
এনসিসি ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম ৫ দিন বন্ধ
উচ্চ ঝুঁকিতে ৩২ বিমা কোম্পানি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান
কার্ড ইস্যু ও লেনদেনের বিস্তারিত চিত্র
২০২০ সালের মে মাসে দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৯৪ লাখ, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজারে, অর্থাৎ ১১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, একই সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখে পৌঁছেছে। অন্যদিকে প্রিপেইড কার্ডের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক হাজার ২৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাঁচ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ৭৬ লাখ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে, যা কার্ডভিত্তিক লেনদেনের দ্রুত সম্প্রসারণ দ্বারা চালিত।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ ক্যাশলেস ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচারে সফল হয়েছে এবং কার্ড ব্যবহারের ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের আরো ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ইতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে।”
ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতি দ্রুততর করতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক লক্ষ্যভিত্তিক নীতি পদক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্কার কার্যকর করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “ডিজিটাইজেশনের ওপর কৌশলগত গুরুত্ব রাখায় কার্ডভিত্তিক লেনদেনে তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি হয়েছে। ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা ক্রমেই ডিজিটাল আর্থিক সেবার দিকে ঝুঁকছেন। দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে ভিসা ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে কার্ড ব্যবহারের পরিমাণও আরো বৃদ্ধি পাবে।”
ক্রেডিট ও ক্রস-বর্ডার লেনদেনের প্রবণতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ঈদ উৎসবের প্রভাবে মার্চের তুলনায় তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
অন্যদিকে, ক্রস-বর্ডার লেনদেনে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেলেও ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আগের মাসের তুলনায় ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ব্যয় ২০২৪ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে তীব্রভাবে কমে গিয়েছিল, যা নভেম্বর ২০২৪ থেকে আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে এবং ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। তবে মার্চ ২০২৫-এ সামান্য হ্রাস পায় এবং এপ্রিল ২০২৫-এ আবার বেড়েছে।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ক্রেডিট কার্ডের খাতভিত্তিক লেনদেনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক (৫০ শতাংশ) ক্রেডিট কার্ড লেনদেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে হয়েছে।
ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহার
একই সময়ে দেশের বাইরে ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডের লেনদেনে আলাদা ব্যয়ের ধারা লক্ষ্য করা গেছে। এপ্রিল ২০২৫-এ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মোট তিন হাজার ১০৮ মিলিয়ন টাকার চার লাখ ৪৯ হাজার ৬২২টি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অংশ ছিল নগদ উত্তোলন (২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ), খুচরা আউটলেট সেবা (২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ) এবং ডিপার্টমেন্ট স্টোর (১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ)। এই তিনটি খাতেই বিদেশে ডেবিট কার্ডের মোট খরচের প্রায় ৫৯ শতাংশ হয়েছে।
অন্যদিকে, একই সময়ে প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে এক লাখ ১৮ হাজার ১২৮টি লেনদেনে ৮৪৫ মিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সেবায় ব্যয় ছিল সর্বাধিক (২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ), এরপর নগদ উত্তোলন (১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ) এবং ব্যবসায়িক সেবা (১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ)। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্য ছিল (১৫ দশমিক ৭ শতাংশ)।
বাংলাদেশি নাগরিকরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে (১৪ শতাংশ) ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন (৪২ শতাংশ)। একই সময়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা ডেবিট কার্ড সবচেয়ে বেশি চীনে (২১ শতাংশ) এবং প্রিপেইড কার্ড সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে (২২ শতাংশ) ব্যবহার করেছেন।
সূত্র: বাসস
ঢাকা/এসবি