জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বাড়ছে। এর প্রভাবে দেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। এর অন্যতম হলো সময়ের আগে সন্তান প্রসবের হার বৃদ্ধি। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট সেন্ট্রাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সারাবিশ্বে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের দিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ৩৪ দিন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাপপ্রবাহ ছিল। এই দিনগুলোতে তাপমাত্রা রেকর্ড গড়ের চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশি থাকে, যা অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য গুরুতর শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৬০ দিনের মতো তাপপ্রবাহ থাকে। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৪০ ডিগ্রির ওপর হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

ক্লাইমেট সেন্ট্রাল এ গবেষণার জন্য বিশ্বের ২৭ দেশ ও টেরিটরির ৯৪০টি শহরের প্রতিদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করেছে। তা থেকে তারা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উষ্ণতম দিন নির্ধারণ করেছে।

ক্লাইমেট সেন্ট্রাল বলছে, বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপদাপন্ন চট্টগ্রাম। ২০২০ থেকে ২০২৪ সময়ে শহরটিতে গড়ে ৩০টি অতিরিক্ত প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন দেখা গেছে, যা দেশের মোট ঝুঁকিপূর্ণ দিনের ৬১ শতাংশ। ঢাকায় যা ৮ শতাংশ। চট্টগ্রামকে তাপমাত্রার ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ক্লাইমেট সেন্ট্রাল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিরিক্ত গরমের জন্য মূলত দায়ী তেল-গ্যাস-কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরের তাপের চেয়ে বেশি অথবা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা গেলে রক্তের প্রবাহ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এটি গর্ভের শিশুর পুষ্টি ও অক্সিজেনে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এতে পানিশূন্যতা, হরমোনে পরিবর্তনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়; যা অকালে প্রসবের সূত্রপাত ঘটায়। অন্তঃসত্ত্বা নারী ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা শরীরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞানবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড.

ক্রিস্টিনা ডাল বলেন, একটি চরম তাপমাত্রার দিনও গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে স্বাস্থ্যসেবা এখনও সবার জন্য সহজলভ্য নয়। সেখানে এই গরম পরিস্থিতি অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করছে।

নারী স্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. ব্রস বেক্কার প্রতিবেদনে বলেছেন, এটি শুধু একটি পরিবেশগত নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়। এ জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী দেশগুলোর দায়িত্ব আরও বেশি। কারণ, এর ভুক্তভোগী বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু।

প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য চরম গরমে বিশেষ চিকিৎসাসেবা, সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং তাপ সহনশীল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন এই অর্জনকে হুমকিতে ফেলছে। এখন আমাদের প্রয়োজন একটি জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। চরম তাপপ্রবাহ শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি একটি মানবিক সংকট; যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মে পৌঁছাতে পারে।

তাপপ্রবাহ অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে গত বছরের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ১৬ সেকেন্ডে একটি মৃত সন্তানের জন্ম হয়। আর প্রতিবছর দেড় লাখ অপুষ্ট শিশু (গর্ভাবস্থায় ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম) পৃথিবীতে আসে। ২৭ দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অকালে সন্তান প্রসব এবং মৃত শিশুর জন্মের হার ৫ শতাংশ বেড়েছে। এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ বলেন, তাপপ্রবাহের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারী হরমোনাল ইমব্যালান্সে থাকেন। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে। অজ্ঞান হওয়া কিংবা অস্থির হয়ে পড়তে পারেন তারা। ফলে এ সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র র জন য স লস য় স প রব হ প রসব

এছাড়াও পড়ুন:

বিরক্তিকর অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করবে অ্যাপ

অনেক সময় দিন-রাত অগণিত অনাকাঙ্ক্ষিত প্রমোশনাল ফোনকল আর স্প্যাম মেসেজ প্রতিদিনের জীবনে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের ব্যস্ত সময়ে, কখনও ঘুমের সময় বা জরুরি কাজের মধ্যে বিরক্তিকর কল ও এসএমএস নষ্ট করে মনোযোগ।
কিন্তু সমস্যার সহজ সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে বিশেষ অ্যাপ ট্রাই। উদ্যোক্তারা তৈরি করেছে 
বিশেষ সুবিধার স্মার্ট অ্যাপ। নাম দেওয়া হয়েছে 
ট্রাই ডিএনডি। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস দুই ধরনের প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে পরিষেবা দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাপটি বেশ কাজের। স্প্যাম ফোনকল আর বার্তা ডিভাইসের অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। যেহেতু সুবিশাল ডিজিটাল তথ্যভান্ডার বেহাত হয়েছে, তাই এমন অ্যাপ চাহিদা এখন সময়ের বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করবে। নিরাপদ হবে ডিভাইসের সার্বিক ব্যবহারবিধি।
অ্যাপ যেভাবে কাজ করে
উল্লিখিত অ্যাপের কাজ হলো মোবাইল গ্রাহককে টেলিমার্কেটিং কল ও স্প্যাম মেসেজ থেকে সার্বিক সুরক্ষা দেওয়া। যার মাধ্যমে গ্রাহক নিজের পছন্দ অনুযায়ী কল ও মেসেজ ব্লক বা অনুমোদন করা না করার সুযোগ পাবেন। চাইলে গ্রাহক সরাসরি স্প্যামবিষয়ক অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন।
ডাউনলোড ও ইনস্টল
অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকরা গুগল প্লে-স্টোর থেকে TRAI ডিএনডি সার্চ করে অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করে নিতে পারবেন। আর আইফোন গ্রাহক অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ পরিষেবা নিতে পারবেন।
ওটিপি ও নিবন্ধন
নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করতে হবে। ডাউনলোডের আগে ওটিপি পাঠানো হবে। চূড়ান্ত ভেরিফাই করলেই অ্যাপটি ব্যবহারযোগ্য হওয়ার সব ধরনের শর্ত পূরণ হবে।
অগ্রাধিকার নির্বাচনে আগ্রহীরা পূর্ণ অ্যাপ সচল করতে পারেন। এতে সব ধরনের প্রমোশনাল কল তাৎক্ষণিক ব্লকের আওতায় পড়বে। আবার আংশিক ডাউনলোডের অপশন রয়েছে।
স্প্যাম রিপোর্ট
যদি কোনো স্প্যাম কল বা মেসেজ অজ্ঞাতে প্রবেশ করে, অ্যাপের স্প্যাম রিপোর্ট অপশন থেকে তা সহজেই রিপোর্ট করা যায়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ