তাপপ্রবাহে সময়ের আগে সন্তান প্রসব বাড়ছে
Published: 15th, May 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বাড়ছে। এর প্রভাবে দেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। এর অন্যতম হলো সময়ের আগে সন্তান প্রসবের হার বৃদ্ধি। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট সেন্ট্রাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সারাবিশ্বে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের দিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে ৩৪ দিন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাপপ্রবাহ ছিল। এই দিনগুলোতে তাপমাত্রা রেকর্ড গড়ের চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশি থাকে, যা অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য গুরুতর শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৬০ দিনের মতো তাপপ্রবাহ থাকে। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৪০ ডিগ্রির ওপর হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল এ গবেষণার জন্য বিশ্বের ২৭ দেশ ও টেরিটরির ৯৪০টি শহরের প্রতিদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করেছে। তা থেকে তারা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উষ্ণতম দিন নির্ধারণ করেছে।
ক্লাইমেট সেন্ট্রাল বলছে, বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপদাপন্ন চট্টগ্রাম। ২০২০ থেকে ২০২৪ সময়ে শহরটিতে গড়ে ৩০টি অতিরিক্ত প্রসবকালীন ঝুঁকিপূর্ণ তাপমাত্রার দিন দেখা গেছে, যা দেশের মোট ঝুঁকিপূর্ণ দিনের ৬১ শতাংশ। ঢাকায় যা ৮ শতাংশ। চট্টগ্রামকে তাপমাত্রার ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ক্লাইমেট সেন্ট্রাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিরিক্ত গরমের জন্য মূলত দায়ী তেল-গ্যাস-কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরের তাপের চেয়ে বেশি অথবা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা গেলে রক্তের প্রবাহ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এটি গর্ভের শিশুর পুষ্টি ও অক্সিজেনে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এতে পানিশূন্যতা, হরমোনে পরিবর্তনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়; যা অকালে প্রসবের সূত্রপাত ঘটায়। অন্তঃসত্ত্বা নারী ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা শরীরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞানবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড.
নারী স্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. ব্রস বেক্কার প্রতিবেদনে বলেছেন, এটি শুধু একটি পরিবেশগত নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়। এ জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী দেশগুলোর দায়িত্ব আরও বেশি। কারণ, এর ভুক্তভোগী বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু।
প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য চরম গরমে বিশেষ চিকিৎসাসেবা, সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং তাপ সহনশীল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন এই অর্জনকে হুমকিতে ফেলছে। এখন আমাদের প্রয়োজন একটি জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি।
ক্লাইমেট সেন্ট্রালের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। চরম তাপপ্রবাহ শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি একটি মানবিক সংকট; যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মে পৌঁছাতে পারে।
তাপপ্রবাহ অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে গত বছরের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ১৬ সেকেন্ডে একটি মৃত সন্তানের জন্ম হয়। আর প্রতিবছর দেড় লাখ অপুষ্ট শিশু (গর্ভাবস্থায় ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম) পৃথিবীতে আসে। ২৭ দেশের তথ্য পর্যালোচনা করে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অকালে সন্তান প্রসব এবং মৃত শিশুর জন্মের হার ৫ শতাংশ বেড়েছে। এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ বলেন, তাপপ্রবাহের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারী হরমোনাল ইমব্যালান্সে থাকেন। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে। অজ্ঞান হওয়া কিংবা অস্থির হয়ে পড়তে পারেন তারা। ফলে এ সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র র জন য স লস য় স প রব হ প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীর আফতাবনগর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন গ্রেপ্তার
রাজধানীর আফতাবনগর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন গ্রেপ্তার
নজরুল ইসলাম: নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফ ধনুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার পরে রাজধানীর আফতাবনগর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে কাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এদিকে আজ দুপুরে ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় করা একটি হত্যা মামলায় কাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহের ভালুকার নেতা। গত বছরের ১৯ জুলাই দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর কুতুবখালী বউবাজার রোডে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মোহাম্মদ আরিফ (১৮) নামের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় আরিফের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ বাদী হয়ে গত বছরের ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন এই মামলার ১৪ নম্বর আসামি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হামলার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হওয়া চারটি মামলার আসামি তিনি।